ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে ছাতা নির্মাতা লেই পেং লিন
2024-05-09 11:05:25

চীনের সাইবারে একজন বস রয়েছেন। তার নাম লেই পেং লিন। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে ছাতা প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সঙ্গে  জড়িত রয়েছেন। তিনি চেচিয়াং প্রদেশের শাও সিং শহরের শাং ইয়ু জেলার একটি ছাতা কোম্পানির মালিক বা বস। লেই পেং লিন প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটে তার ছাতার পরিচিতির জন্য ভিডিও পোস্ট করেন। তার ভিডিওতে বিভিন্ন নেটিজেন ভাইরাল মন্তব্য করে থাকেন। যেমন, যে ছাতাগুলো আলোকিত  হয়, ছাতাগুলো জলের সংস্পর্শে এলে রঙ পরিবর্তিত হয় ইত্যাদি। লেই পেং লিন একের পর এক নেটিজেনদের এই ইচ্ছাগুলো পূরণ করেছেন। তাই নেটিজেনরা তাকে ‘ইন্টারনেটের সবচেয়ে বাধ্য বস’ বলে ডাকেন।

লেই পেং লিনের অনলাইন সংক্ষিপ্ত ভিডিও’র মন্তব্য এলাকা এবং ব্যাকস্টেজ ব্যক্তিগত বার্তাগুলো একটি বড় উইং পুলের মতো। তাতে নেটিজেনদের ছাতার জন্য সমস্ত ধরণের শুভেচ্ছায় পরিপূর্ণ।

নেটিজেনদের ইচ্ছা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাদের চাওয়া ছাতা তৈরি করতে চেষ্টা করেন। একজন নেটিজেন  চিয়াং নান অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় ছাতা চান এবং তাকে একটি ছবি পাঠান। এ ছবি দেখে তিনি তত্ক্ষণিকভাবে ছাতাটি তৈরি করতে শুরু করেন।

তিনি তার কর্মীকে বলেন, “এ ছবি অনুযায়ী দ্রুতভাবে নকশা করো। এটি একজন ভক্তের চাওয়া ছাতা।”

দশ মিনিটের মধ্যে চিয়াং নান অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় ছবি ছাতায় বসানো হয়েছে। লেই পেং লিন আরও বলেন, “এটি প্রিন্টিং এবং ডাইং ফ্যাক্টরিতে পাঠান এবং তাকে এটি দ্রুত করতে বলুন।  আমি এখন গিয়ে দেখে নেব।” সেই প্রিন্টিং এবং ডাইং ফ্যাক্টরি’র সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে সহযোগিতা চালিয়ে আসছে লেই পেং লিন। নেটিজেনদের কিছু অনুরোধ মোটাতে বিশেষ ধরণের প্রিন্টিং দরকার হয়।

সেই প্রিন্টিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক ছেন সোং বলেন, “সম্প্রতি তার জন্য বেশ কয়েক ধরণের ছাতার কাপড় তৈরি করেছি। এতে আমাদের কারখানাও উপকৃত হয়েছে। আমাদের কারুশিল্পের উন্নতিও হয়েছে। অনেক গ্রাহক আমাদের কাছে সে সব কারুশিল্প চায়।”

সদ্য তৈরি ছাতার কাপড় নিয়ে, একটি ভ্যান চালিয়ে লেই পেং লিন উপযুক্ত কাঠামো নির্বাচন করতে ছাতার জিনিসপত্রের বাজারে ছুটে যান।

তিনি বলেন, কাঠামোর মধ্যে দুটি পার্থক্য রয়েছে। একটি স্বয়ঃক্রিয় এবং অন্যটি ম্যানুয়াল। তাছাড়া আমরা যে কাঠামোগুলো বেছে নিই।  সেগুলো সব ফাইবারস কাঠামো।  যদি লোহার কাঠামো বেছে নেওয়া হয়, তাহলে সেগুলো সহজে মরিচা ধরবে।

ছাতার কাপড় ও কাঠামো নিয়ে কারখানায় ফিরেছেন লেই পেং লিন।  এগুলো নিয়ে শ্রমিকরা দক্ষতার সঙ্গে ছাতা তৈরির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে। নেটিজেনের পাঠানো একটি ছবি অবশেষে একটি ছাতায় পরিণত হয়েছে।

লেই পেংলিন বলেন, তার এই ইচ্ছা পূরণ করতে একদিন লেগেছিল। আমার ইচ্ছা হলো যে, আরও বেশি নেটিজেন তাদের প্রিয় ছাতা ব্যবহার করতে পারে।

ছাতা প্রক্রিয়াজাত শিল্পে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন লেই পেং লিন। ছাতা কারখানার একজন সাধারণ কর্মী থেকে ব্যবস্থাপক, তার পর কারখানার বসে পরিণত হয়েছেন তিনি। এ পথের যাত্রায় লেই পেং লিন মনোযোগ দিয়ে ছাতা তৈরি করেছেন এবং সে সব ছাতার মধ্য দিয়ে গ্রাহকদের ইচ্ছে পূরণ করেছেন।  তাতে তিনি ব্যবসার নতুন সুযোগ ও উন্নয়নও সাধন করেছেন।

২০১৪ সালে লেই পেং লিন তার নিজস্ব ছাতা কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালে বিক্রয় প্রসারিত করার জন্য লেই পেং লিন অনলাইনে লাইভ সম্প্রচার চালাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার নিজস্ব ছাতা পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু শর্ট ভিডিও শ্যুট করা শুরু করেন তিনি। কিন্তু ই-কমার্সে প্রবেশের প্রথম দুই বছরে লেই পেং লিনের অ্যাকাউন্টে মাত্র এক বা দুই হাজার ভিডিও ভিউ ছিল। এই কারণে লেই পেং লিন বারবার তার ভিডিও স্ক্রিপ্ট পরিমার্জন করেন।  অবশেষে তিনি তার নিজস্ব অনন্য ভিডিও শৈলী তৈরি করতে সক্ষম হন।

লেই পেং লিন বলেন, “২০২২ সালের ১৪ মে তার ভিডিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার একটি ভিডিও বড় হিট হয়েছে। এটির পুরো নেটওয়ার্কে ১০ লাখেরও বেশি লাইক রয়েছে। এইভাবে নেটিজেনরা আমাকে চিনতে পেরেছে।”

জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর লেই পেংলিনের অ্যাকাউন্টে অনুরাগীর সংখ্যা ৩ হাজার থেকে তিন লাখে ছাড়িয়েছে। অনেক ভক্ত লেই পেংলিনকে বিশেষ সুবিধাসহ কিছু ছাতা তৈরি করতে বলে মন্তব্যের জায়গায় বার্তা দিতে শুরু করে।

ছাতাগুলো মূলত বাতাস এবং বৃষ্টি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু যে ছাতাগুলো ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে, সেগুলো জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য প্রয়োজন এবং দূরবর্তী স্থানগুলো জন্য একটি নান্দনিক উপহার।

((রুবি/হাশিম))