‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৬৯ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. এক ঝাঁক আমেরিকান তরুণের চীন সফর এবং অর্জন
২. উন্নত বিশ্ব গড়তে প্রস্তুত চীনের সম্প্রচারমাধ্যমের শিক্ষার্থীরা
৩. চীনের কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগের সদস্য এখন ৭ কোটি ৪২ লাখ
১. এক ঝাঁক আমেরিকান তরুণের চীন সফর এবং অর্জন
দুই দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর লক্ষ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আমন্ত্রণে চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল শিক্ষার্থী চীন ভ্রমণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩২ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আরও একটি দল গেল মাসে চীন ভ্রমণ করেছেন। ৮ দিনের এই সফরে তারা ঘুরে দেখেন বেইজিং, সাংহাই ও হ্যপেই প্রদেশ।
বাড়ি ফিরেছে মাস্কাটাইন হাই স্কুলের মার্কিন শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে করে শুধু একগাদা স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা নয়, চীন নিয়ে একটি নতুন ধারণা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উপলব্ধিও নিয়েছে তারা। বিভেদের প্রাচীর দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে বন্ধুত্বের শক্তি কতখানি- সেটাও বুঝতে পেরেছে তারা।
১৬ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৩২ জন শিক্ষার্থী চীনের কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় বেইজিং, সাংহাই এবং হপেই ভ্রমণে আসে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং গেল বছর সান ফ্রান্সিসকো বৈঠকে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেটারই অংশ হিসেবে চীন ভ্রমণে আসে মার্কিন শিক্ষার্থী।
এই দলের একজন লুকা বেরোন। চীনে এসে যিনি নিজেকে আবার নতুনভাবে ফিরে পেয়েছেন ঐতিহাসিক গ্রেট ওয়ালে। আইওয়া সিস্টার স্টেটস নামের একটি এনজিওর বোর্ড সদস্য বেরোন। আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করে সংস্থাটি। তাই বেরোনের এটি তৃতীয় চীন সফর।
১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট সি ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির হপেই প্রদেশের ছেংতিং কাউন্টির সেক্রেটারি। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্য সফরে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বেরোনও ছিলেন সেই দলে। তিনি তখন দলের শিডিউল ঠিক করার কাজ করেছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, আইওয়া রাজ্য এবং হপেই প্রদেশের বন্ধুত্বের ইতিহাস চার দশেকেরও বেশি আগের। মাস্কাটাইন হাই স্কুল ও শি চিয়া ছুয়াং ফরেইন ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একযোগে কাজ করছে।
‘আমি মনে করি এটি দুর্দান্ত উদ্যোগ। কারণ আমাদের আরও ভালো সম্পর্ক গড়া দরকার। একে অপরের আরও ভালো করে বোঝার দরকার আছে। বিশেষ করে এই সময়ে কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা চলছে। তাই মনে করি এ সফর দুই পক্ষের জন্য জয়-জয় পরিস্থিতি নিয়ে আসবে।’
অনেক শিক্ষার্থীর জন্য, বাদালিং গ্রেট ওয়ালে ওঠা ছিল দারুণ উপভোগের।
মার্কিন শিক্ষার্থী জোসেফ ম্যাকনিলি। তার টুপিতে চীনা ভাষায় লিখা ‘চ্যাং চেং’। টুপিটি দেখিয়ে তিনি বললেন এটি তার বোনের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। ২০১৬ সালে চীন সফরে এসেছিলেন তার বোন।
চীনে একটি প্রবাদ আছে, যে ব্যক্তি কখনও গ্রেট ওয়ালে যায়নি সে পুরোপুরি মানুষ হয়ে ওঠেনি। এ কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ম্যাকনিলি । গর্বের সঙ্গে তিনি একটি স্যুভেনির দেখিয়ে বললেন, এটিই তার স্বপ্ন পূরণের প্রমাণ।
‘আমি আমার বোনকে বলব, আমি গ্রেট ওয়ালে গিয়েছি! এখন আমি পরিপূর্ণ মানুষ। এই স্মৃতি আমার ভবিষ্যতেও মনে থাকবে। আমি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রেসিডেন্টের পথ অনুসরণ করছি এবং ভিন্ন একটি দেশের ইতিহাস অনুধাবন করতে পারছি। ভবিষ্যতে যদি আমি প্রেসিডেন্টের মতো কেউ হই, অথবা সরকারের অংশ হই, তখনও গর্ব করে বলতে পারব যে আমি গ্রেট ওয়ালে হেঁটেছি। আমেরিকা ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতে কাজ করতে চাই আমি।’
এই বিনিময় শুধু ভ্রমণেই শেষ হয়নি; বন্ধুত্বের দূত হয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা।
মাস্কাটাইন হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল রায়ান ক্যাসেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদেরও ভালো ভাবে সুযোগ করে দেয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত দেন।
"প্রেসিডেন্ট সি মার্কিন শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানোর ফলে এখন সেই বন্ধুত্ব আবার গড়ে উঠছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্যের বিষয়ে আমাদের জনগণের মধ্যে বিভেদ করা উচিত নয়। আমি মনে করি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলতে আমাদেরও কিছু করা দরকার।’
‘এটি সত্যিই সুন্দর, পরিচ্ছন্ন শহর। আমেরিকার অনেক বড় শহরগুলোর তুলনায় এটি বেশি পরিচ্ছন্ন। আমি এই তথ্য নিয়ে দেশে ফিরে যাব এবং চীন কেমন ছিল তা বন্ধুদের জানাব।’
‘আমি আবার এখানে আসতে চাই। চীনা ভাষা শেখাটাও চালিয়ে যেতে চাই। আশা করি আমি সাবলীল চীনা ভাষা বলতে পারবো।’
বিদায় জানানোর সময়, চীনের স্মৃতিচিহ্ন বহন করা উপহারগুলো সবাই দেখিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মার্কিন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবেদক : হোসনে মোবারক সৌরভ
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
২. উন্নত বিশ্ব গড়তে প্রস্তুত চীনের সম্প্রচারমাধ্যমের শিক্ষার্থীরা
৪ মে ছিল চীনা যুব দিবস। দিবসটি বেশ ঘটা করে সাড়ম্বরে পালন করা হয় চীনে। চীনের যুব দিবস উদযাপনে, দেশটির একজন নবীন সম্প্রচার বিষয়ক শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা জানালেন চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন সিসিটিভিকে।
চ্যচিয়াংয়ের কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মিয়ান শ্যুইখুন। চীনের গল্প বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণ দোভাষী সম্প্রচারকর্মীদের প্রভাবশালী ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।
"আমি দ্বিভাষিক সম্প্রচারকে প্রধান বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি, কারণ এটি অত্যন্ত গতিশীল একটি ক্যারিয়ার। এ কাজে যারা যুক্ত তারা প্রচুর তথ্য নিয়ে কাজ করেন। তথ্য প্রকাশও করেন। আর এ কাজের পেছনে ১৯তম এশিয়ান গেমসের সংবাদগুলোর প্রচার আমাকে বেশি প্রভাবিত করেছে।‘’
মিয়ানের দৃষ্টিতে, চীনের যুবকদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হচ্ছে।
‘আরেকটি ব্যাপার আমাকে মুগ্ধ করেছে। তা হলো আমার প্রজন্ম যে সময়ে বড় হয়েছে সেই সময়ে মিডিয়ার বিশাল রূপান্তর হয়েছে। আমি দেখতে পাচ্ছি যে তরুণদের কণ্ঠস্বরকে আজ আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের কণ্ঠস্বর শোনার জন্য আরও অনেক উপায় রয়েছে। এখন সেল্ফ-মিডিয়ার যুগে, তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের মতামত শেয়ার করছেন বেশি এবং চীনের গল্প ছড়িয়ে দিতে পারছেন।’
বিশ্বের সঙ্গে চীনা সংস্কৃতি ভাগাভাগি করার ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে মিয়াও একজন দ্বিভাষিক সাংবাদিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করার ইচ্ছে পোষন করেন।
" আমি আশা করি স্নাতকের পর একজন চমৎকার দোভাষী সাংবাদিক হতে পারবো। বিশ্বকে সত্যিকারের চীন দেখানোর জন্য সাবলীল চীনা এবং ইংরেজি ব্যবহার করে। আমি আমার ভবিষ্যতের অধ্যয়ন এবং কাজে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিকে মনোযোগ দিতে চাই এবং আমি আরও উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
মিয়ান যুব দিবসে বিশ্বব্যাপী তরুণদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, একটি উন্নত বিশ্ব গড়তে যে শক্তি দরকার তাতে হাতে হাত রেখে একসঙ্গে অবদান রাখতে পারে তরুণরা।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
৩. চীনের কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগের সদস্য এখন ৭ কোটি ৪২ লাখ
গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগ তথা সিওয়াইএলসির সদস্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজারে। সম্প্রতি সিওয়াইএলসির কেন্দ্রীয় কমিটি এ তথ্য প্রকাশ করে।
কমিটি জানায়, ২০২৩ সালে প্রায় ৪৬ লাখ ১০ হাজার নতুন সদস্য ইয়ুথ লিগে যোগ দেয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ১৪ থেকে ২৮ বছর বয়সী চীনা তরুণরা এই দলে যোগ দিতে পারবে। তথ্যে বলা হয়, এদের মধ্যে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার সদস্য শিক্ষার্থী, ৭২ লাখ ১০ হাজার সদস্য বিভিন্ন কোম্পানির কর্মী এবং ৪৪ লাখ ২০ হাজার সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। বাকিরা তৃণমূল সংগঠন এবং অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য।
প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী