এবার মে দিবস তথা শ্রমিক দিবসের ছুটিতে চীনের পর্যটনবাজার ছিল যথেষ্ট চাঙ্গা। এ সময় ভোক্তাদের ব্যয়ের একাধিক রেকর্ডও ভেঙেছে। বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। ‘জাপান অর্থনৈতিক সংবাদ’সহ বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে দিবসের ছুটিতে চীনে ভোগ বেড়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করবে।
চীনের সরকারি তথ্য অনুসারে, এবার মে দিবসের ছুটিতে চীনে মোট ২৯ কোটি ৫০ লাখ পর্যটক বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে গেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৬ শতাংশ বেশি। আর, তাঁরা পর্যটন খাতে মোট ব্যয় করেছেন ১৬৬৮৯ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২.৭ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি, এবারের ছুটিতে কাউন্টি ভ্রমণ ও আলোচিত শহর পরিদর্শনের মতো বিষয়গুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এগুলো ছুটির নতুন প্যাটার্ন হয়ে ওঠে, যা চীনের বাসিন্দাদের ভোগ-বৈচিত্র্যের নিদর্শন।
এদিকে, মহামারী-পরবর্তী চীনের বিমান-রুটগুলো এখন সব পুরোদমে চালু হয়েছে; নতুন কয়েকটি দেশকে দেওয়া হয়েছে ভিসামুক্ত সুবিধা। এর ফলে এবারের মে দিবসের ছুটিতে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। এদিকে, শ্রমিক দিবসের ছুটিতে চীনের পর্যটকরা সারা বিশ্বের ১০০০টিরও বেশি শহর ভ্রমণ করেছেন।
বস্তুত, এমন ধারাবাহিক আকর্ষণীয় পরিসংখ্যানের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন পক্ষের অব্যাহত প্রচেষ্টা। চলতি বছর চীনে ভোগকে এগিয়ে নেওয়াসংক্রান্ত ধারাবাহিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। চলতি বছরকে ‘ভোগ-বর্ষ’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে কেবল যে মানুষের বহুমুখী ও উচ্চ গুণগত মানের ভোগের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, তা নয়; বরং চীনা ভোগ-বাজারের অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তিও বেড়েছে।
‘বরফ ও তুষার অর্থনীতি’ থেকে ‘নতুন বছরের স্বাদ অর্থনীতি’ পর্যন্ত, ‘ফুল উপভোগ অর্থনীতি’ থেকে ‘ছুটি অর্থনীতি’ পর্যন্ত, চীনা ভোগ-বাজার অবিরাম তার নতুন নতুন সুপ্তশক্তি প্রকাশ করে চলেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভোগের অবদান ছিল ৭৩.৭ শতাংশ। ভবিষ্যতে চীনে আরও নতুন আকারের ভোক্তা, ডিজিটাল ভোক্তা, সবুজ ভোক্তা এবং স্বাস্থ্য ভোক্তা বাড়বে এবং চীনের ভোক্তা-বাজার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও নতুন চালিকাশক্তি বয়ে আনবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
‘ছুটি অর্থনীতি’ হচ্ছে চীনা অর্থনীতিকে দেখার এক গুরুত্বপূর্ণ জানালা। ‘পয়লা মে’ তথা মে দিবসের ছুটিতে বহু ক্ষেত্রের ভোগ-পরিসংখ্যান প্রত্যাশিত লক্ষ্য ছাড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চীনা অর্থনীতির সুপ্তশক্তি ও চালিকাশক্তি ফুটে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পুরো বছরের চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর প্রবণতা দেখাচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক ব্লকের প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ৪৬ শতাংশ হবে। মার্কিন ব্লুবার্গের অনুমান অনুসারে, ২০২৪ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত, বৈশ্বিক নতুন অর্থনৈতিক তত্পরতায় চীনের অংশগ্রহণ ২১ শতাংশের কাছাকাছি হবে।
চীনের উন্মুক্তকরণ এবং উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন বৈশ্বিক বাজারে কল্যাণ বয়ে আনছে। গত ৫ মে শেষ হওয়া ১৩৫তম কুয়াংচৌ মেলায় বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৬৮০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যা একটি নতুন রেকর্ড। অনেক আন্তর্জাতিক বিখ্যাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে বুদ্ধিমান উত্পাদন এবং শ্রেষ্ঠ ভোগ্যপণ্য প্রদর্শন করে, যা বৈশ্বিক ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেক অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-কে বলেছেন, কুয়াংচৌ মেলা তাদের জন্য কেবল যে যৌথভাবে চীনা সুযোগ ভাগাভাগি করার ও বৈশ্বিক বাজার অনুসন্ধান করার এক মূল্যবান প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে, তা নয়; বরং তাদেরকে চীনা অর্থনীতির উন্মুক্তকরণ ও চালিকাশক্তি অনুভব করার সুযোগ দিয়েছে।
আন্তঃদেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চীন সফর থেকে শুরু করে, বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমশ চীনে ব্যবসা বৃদ্ধি পর্যন্ত, সবকিছুই চীনা বাজারের আকর্ষণ-শক্তি প্রদর্শন করছে। বলা বাহুল্য, চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার-প্রক্রিয়া ক্রমশ ভালোর দিকে যাচ্ছে এবং এ প্রবণতার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা যথার্থই বলেছেন যে, চীন ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখে যাবে।
(অনুপমা/ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)