মে ৩: চলতি বছর হলো চীন-ফ্রান্স কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী। ১৯৬৪ সালে চীন ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোছে। ১৯৭৩ সালে তখনকার ফরাসি প্রেসিডেন্ট জর্জেস পম্পিডো চীন সফর করেন। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নেতা হিসেবে তিনি চীন সফর করেন। সফরকালে চীন ফ্রান্সকে এক জোড়া জায়ান্ট পান্ডা ‘লিলি’ ও ‘ইয়ানইয়ান’ উপহার হিসেবে দেয়। সেই থেকে চীনের সাথে ফ্রান্সের ‘পান্ডা বন্ধুত্ব’ শুরু হয়।
জায়ান্ট পান্ডার জন্মস্থান পাওসিং পাহাড় ঘেরা সবুজ উপত্যকায়। এখানকার পরিবেশ খুবই পরিষ্কার ও আরামদায়ক। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের পাইরেনিস পর্বতমালার মতোই। ১৮৬৯ সালের বসন্তের শুরুতে, ফ্রান্সের এসপেলেটে জন্মগ্রহণকারী জিন-পিয়ের আরমান্ড ডেভিড বৈজ্ঞানিক তদন্তের জন্য ইয়ান-এ এসেছিলেন। আকস্মিকভাবে তিনি পাহাড়ে একটি বন্য জায়ান্ট পান্ডা আবিষ্কার করেন।
২০১২ সালে জায়ান্ট পান্ডা ইয়ানচাই এবং হুয়ানহুয়ান ছেংতু গবেষণাকেন্দ্র থেকে ফ্রান্সের বিউভালে বন্যপ্রাণী পার্কে পৌঁছায়। তখন চীন-ফরাসি জায়ান্ট পান্ডা সুরক্ষা সহযোগিতা একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। পাঁচ বছর পর দু’টি পান্ডার বাচ্চা ইউয়ানমেং জন্মগ্রহণ করে। এটি হলো ফ্রান্সে জন্মগ্রহণকারী প্রথম জায়ান্ট পান্ডা। ইউয়ানমেং ফরাসি জনগণের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।
গত জুলাই মাসে ইউয়ানমেং ফ্রান্স থেকে সিছুয়ানে ফিরে আসে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিগেট ম্যাক্খোঁ প্যারিসের চার্লস দা গল বিমানবন্দরে ইউয়ানমেংকে বিদায় জানান। তখন তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, ইউয়ানমেং অবশ্যই নিজের মাতৃভূমিতে সুখে বাস করবে এবং ফ্রান্সকে ভুলে যাবে না।’
ইয়াআনের পাওসিংয়ে অবস্থিত জায়ান্ট পান্ডা জাতীয় পার্কে স্থাপিত ইনফ্রারেড ক্যামেরা শুধুমাত্র বন্য জায়ান্ট পান্ডাদের বিচরণের ওপর নজর রাখে, তা নয়, বরং এটি রিয়েল টাইমে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে মনিটরিং রুমে ছবি পাঠাতে পারে।
তার নিটোল শরীর, সাদাসিধে মুখ এবং কোমল ও শক্ত চরিত্র দিয়ে জাতীয় ধন জায়ান্ট পান্ডা অগণিত দেশী-বিদেশী ভক্ত বানিয়েছে।
ফরাসি মানুষ জেরোম পুইলি কয়েক বছর আগে একটি পান্ডা-থিমযুক্ত ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পান্ডা অনেক পছন্দ করেন। তিনি বেশ কয়েকবার চীনেও এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান যে, জায়ান্ট পান্ডা প্রজননের ছেংতু রিসার্চ বেসে ইউয়ানমেংকে দেখার সুযোগ পাই। যেখানে সে থাকে, সে জায়গাটা অনেক বড় এবং তিনি ছেংতুতে সে ভালোভাবে বসবাস করছে।’ তিনি আরও বলেন, জায়ান্ট পান্ডা বিলুপ্তির আশঙ্কা এখন আর নেই বললেই চলে। ‘আমি নিজেই জায়ান্ট পান্ডা সুরক্ষায় চীনের প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছি’, তিনি বলেন।
চীনে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বার্ট্রান্ড লরথোলারি সম্প্রতি জায়ান্ট পান্ডা জাতীয় পার্ক পরিদর্শনের সময় বলেন, ফরাসি ও চীনা জনগণ বোঝে যে, জলবায়ুর পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা পৃথিবীর ভবিষ্যত ও দু’দেশের জনগণের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য দু’দেশের বিশেষজ্ঞরা নিম্ন কার্বন শক্তি উন্নয়ন এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলোকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বস্তুত, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার পথে, চীন ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের জনগণ, যৌথভাবে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থান ও ভাগ্যের একটি সবুজ গল্প লিখছেন। (ছাই/আলিম/লিলি)