কী কী আছে আজকের পর্বে
১. রাতের স্কুলে দক্ষতা বাড়াচ্ছেন নারী
২. বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০ নারীকে সম্মাননা দিলো চীন
৩. চীনের প্রেমে পড়েছেন ফরাসি নারী হানেই অ্যাকোট
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
রাতের স্কুলে দক্ষতা বাড়াচ্ছেন নারী
চীনের অনেক নারী নিজের নিজের পেশায় সাফল্য লাভের পাশাপাশি শখকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আবার অনেকে চান নিজের দক্ষতা বাড়াতে। এসবের জন্য তারা রাতের স্কুল বা নাইট স্কুলে যোগ দিচ্ছেন।
চীনের অনেক নারী নিজেদের কর্ম দক্ষতা বাড়াতে এবং শখ মেটাতে বেছে নিচ্ছেন রাতের স্কুল। এরা দিনের বেলা সাধারণত কোন পেশায় ব্যস্ত অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। চাকরি ও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকে আরও কোন শিক্ষা অর্জনে যাচ্ছেন রাতের স্কুলে। ওয়াং ছেংছেং এর বয়স ২৬ বছর। তিনি একটি রাতের স্কুলে ল্যাটে কফি বানানো শিখছেন। মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান সিটির বাসিন্দা তিনি। তার অনেক দিনের শখ ল্যাটে কফি বানানো শিখবেন। কিভাবে কফির কাপে নকশা করতে হয় সেটা তার জানার আগ্রহ। তিনি ঘরে নিজে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেভাবে হয়নি। তাই স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন তার শিক্ষক কফির কাপে সিংহ, বানর, পান্ডাসহ অনেক নকশা বানাতে পারেন। এটা দারুণ এক শিল্প। তাই তিনি সারাদিন চাকরির পর কফির কাপে নকশা তোলা শিখতে হাঁটছেন স্কুলের পথে। এখন তিনি নিজেই হার্ট শেপ বা হৃদয় আকৃতি বানাতে পারেন।
চাং ছেং এর বয়স ৩৮ বছর। তিনি একটি মিডল স্কুলের আর্ট টিচার। তিনি ক্যালিগ্রাফি শেখার জন্য নাইট স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই তার ক্যালিগ্রাফির প্রতি আগ্রহ ছিল। তিনি তার বাবার কাছে কিছু শিখেছিলেন। কিন্তু এটি নিয়ে চর্চা করা হয়নি। এখন এখানকার শিক্ষক চেং ওয়েইহোং এর কাছে মনোযোগ দিয়ে শিখছেন।
তিনি মনে করেন এধরনের স্কুলের সুবিধা হলো শিক্ষার্থী জীবনের মতো এখানে গ্রেড ও পরীক্ষার ফল নিয়ে উদ্বেগ পোহাতে হয় না। বিধিবদ্ধ লেখাপড়ার চাপও এখানে নেই। এখানে রিল্যাক্সে মন দিয়ে শেখা যায়।
শিক্ষক চেং ওয়েই হোং জানান, এ ধরনের নাইট স্কুলে এমন অনেক নারী আসেন যারা বিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী। তারা তাদের পেশাগত জীবনের পাশাপাশি এখানে আসছেন দীর্ঘদিনের লালিত শখ পূরণের জন্য।
নাইট স্কুলের একজন শিক্ষিকা ইয়ুলি। ৩৫ বছর বয়সী ইয়ুলি একজন মেকআপ আর্টিস্ট। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার কাছে অনেক নারী আসছেন মেকআপ করা শিখতে। এমন একজন শিক্ষার্থী ছেং হুয়ান। ২৪ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী একজন কিন্ডারগার্টেন টিচার। হুয়ান আগে অনলাইনে মেকআপ করা শিখেছিলেন। কিন্তু সেখানে হাতে ধরে শিখানো হয় না। তিনি বলেন,
‘আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার আই লাইনার আঁকতে কেন সমস্যা হচ্ছে। এখানে এসে আমি হাতে কলমে মেকআপ শিল্প শিখতে পেরেছি। ’
এই নাইটস্কুলের অন্য রকম প্রভাবও সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে যে নারীরা আসেন তারা নিজেদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন। তারা নিজেদের সমস্যা পরষ্পরের সঙ্গে শেয়ার করছেন। তারা পরষ্পরকে বিভিন্ন রকম পরামর্শও দেন। তাদের একটা অ্যাসোসিয়েশন এখানে গড়ে উঠেছে। নারীরা এখন পরষ্পরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং নিজেদের মধ্যে সংহতি গড়ে তুলেছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় চীনের ২০ নারীকে সম্মাননা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে নারীরা। এ লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে চীনে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ২০ জন নারীকে সম্মানিত করা হয়েছে। এটি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে এবং তাদের বিজ্ঞান ক্ষেত্রে কর্মজীবন গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করবে। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীর ভূমিকাকে তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে ২০ জন নারীকে ‘চায়না ইয়ং ফিমেল সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। ক্লিনিকাল এবং বেসিক মেডিসিন, ফার্মাসি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং চিপ প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়াওউথাই স্টেট গেস্টহাউসে উচ্চ বাইপাস রেশিও টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ডিজাইন এবং যাচাইকরণ দলসহ পাঁচটি দলের ৪৫ বছরেরও কম বয়সী ২০ নারী বিজ্ঞানীর হাতে তুলে দেওয়া হয় এ সম্মাননা।
পুরস্কার বিজয়ীদের একজন ফুতান ইউনিভার্সিটি শাংহাই ক্যান্সার সেন্টারের অনকোলজি বিভাগের পরিচালক ওয়াং হোংসিয়া। মেটাস্ট্যাটিক স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার উপর গবেষণার জন্য পরিচিত ওয়াং। তিনি জানান, সাধারণত যেসব রোগী তার কাছে আসেন তাদের অনেকেই মেটাস্ট্যাটিক লেট-স্টেজ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এসব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। তাই ওয়াংয়ের দল টিউমারযুক্ত রোগীদের মধ্যে থেরাপি রেজিসট্যান্সের প্রাথমিকভাবে কারণগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
শাংহাই ইন্সটিটিউট অফ মেটেরিয়া মেডিকার অধ্যাপক হুয়াং মিন চিকিৎসাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি জানান, ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ তৈরি গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন তিনি। তার বিশেষত্ব ফার্মাকোলজিতে এবং বিশেষ ফোকাস হলো টিউমার মেটাবোলিজমের উপর, যা তুলনামূলকভাবে নতুন এবং উদীয়মান ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। এই ক্ষেত্রের গবেষণায় তার সহকর্মীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অনেকে বিশ্বাস করেন টিউমারের ওষুধ গবেষণায় একটি নতুন দিকের পথ সুগম করতে পারে টিউমার মেটাবোলিজম।
২০০৪ সাল থেকেই ‘চায়না ইয়ং ফিমেল সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হচ্ছে। এটি চীনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিজ্ঞান পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ পর্যন্ত ২০৪ জন নারীকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
চীনের প্রেমে পড়েছেন ফরাসি নারী হানেই অ্যাকোট
অনেক বিদেশি নারী চীনের সংস্কৃতির প্রেমে পড়েন। তারা চীনের মানুষের আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব ও সৌজন্যবোধে মুগ্ধ হন।
ফরাসি নারী হানেই অ্যাকোট । সম্প্রতি ৫০ জনের একটি পর্যটক দলের সঙ্গে চীনে আসেন হানেই। ২৭ বছর বয়সী হানেই চীনের কুইচোও প্রদেশের স্থানীয় সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হন। তিনি থাইচি চর্চা করে করেন। চীনের প্রতি ভালোবাসা হানেই পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। তার মা বেশ কয়েক বছর ধরে চাইনিজ মার্শাল আর্ট প্র্যাকটিস করছেন এবং চারবার চীন ভ্রমণ করেছেন। মায়ের এই ভালোবাসাই চীন সফরে অনুপ্রাণিত করেছে হানেইকে।
কুইয়াং সিটিতে ভ্রমণের সময় একদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় রক ব্যান্ড এর গান শুনছিলেন হানেই। গানটি তার এত ভালো লাগে যে তিনি মঞ্চে উঠে শিল্পীর সঙ্গে গান গাইতে থাকেন। চীনা সংস্কৃতির প্রতি বিদেশিনীর এই ভালোবাসা স্থানীয় দর্শকদের আবেগ আপ্লুত করে। তিনি তার গানের মাধ্যমে চীনের প্রতি তার ভালোবাসা ব্যক্ত করেন।
হানেই বলেন, ‘এই ব্যান্ডের গান আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি মঞ্চে উঠে গান গেয়ে চীনের মানুষকে আমাকে তাদের দেয়া ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চেয়েছি।’
তিনি এবার ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে মায়ের কাছ থেকে আরও ভালোভাবে চাইনিজ মার্শাল আর্ট শিখবেন এবং চর্চা করবেন।
গান এবং মার্শাল আর্ট এর প্রতি ভালোবাসা প্রকৃতপক্ষে ফরাসি এই তরুণীকে চীনের সঙ্গেই ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছে। তিনি আবারও চীনে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন ।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ