‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৬৮
2024-05-01 16:54:36


‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।

৬৮ তম পর্বে যা যা থাকছে:  

১. তরুণ চীনা ভোক্তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছে ল্যাম্বারগিনি

২. চীনের প্রযুক্তি খাতে তারুণ্যের জয়গান

৩. সিনচিয়াংয়ে একঝাঁক তরুণ নিয়ে স্প্রিং ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

৪. আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ

 

 

১. তরুণ চীনা ভোক্তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছে ল্যাম্বারগিনি

 

 

তরুণ ভোক্তা বাজারে জনপ্রিয় ল্যাম্বারগিনি। বিলাসবহুল গাড়িটি কিন্তু খুব বেশি তৈরি হয় না। বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটি ল্যাম্বারগিনি বানায় ভক্সওয়াগেন গ্রুপ। সারা বিশ্বেই বিক্রি হয় গাড়িটি। তবে এর মধ্যে দেখা গেল চীন হয়ে গেছে ল্যাম্বারগিনির তৃতীয় বৃহত্তম বাজার।

 

চীনের তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে বিলাসি পণ্যের প্রতি। এ কারণে সীমিত উৎপাদন ক্ষমতা সত্ত্বেও, চীনের বাজারের বড় একটি জায়গা দখল করতে পেরেছে ল্যাম্বরগিনি।

২০২৩ সালে ১০ হাজার ১১২টি গাড়ি তৈরি করে ল্যাম্বারগিনি। এর মধ্যে ৮৪৫টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে চীনে। বিলাসবহুল গাড়ি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও সিইও স্টেফান উইঙ্কেলম্যান জানালেন এ তথ্য।

 

সম্প্রতি চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন)’কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে স্টেফান চীনা বাজারে তাদের সুবিশাল উপস্থিতি তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে বলেন, এই বাজারে বাড়ছে তরুণ ক্রেতাদের আনাগোনা।

 

"প্রথমত চীনের বাজারের আকারটা বড়। দেশটি গাড়ির বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার। আর আমাদের জন্য, বিশেষ করে ইউরোপের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এখানকার গ্রাহকদের কেনার ইচ্ছা সম্পর্কে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা আছে। এ ছাড়া ওই ক্রেতাদের  বয়সও কম। প্রযুক্তি, কর্মক্ষমতা এবং বিলাসিতা নিয়েই তারা থাকতে চায়।’’

সিইও আরও বলেন, চীনা বাজার ল্যাম্বরগিনির ব্যবসায়িক কৌশল এবং ভোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণ করে।

 

‘আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহও কম। তাই আমরা গাড়ির পুনরায় বিক্রির মূল্য এবং অর্ডার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখছি। এখানে আমরা এমন সব গ্রাহকদের খুঁজে পাই যাদের আচরণ ল্যাম্বারগিনি সম্পর্কে আমরা যেমনটা ভাবি অনেকটা তেমনই। তাই আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য সবসময় নতুন কিছু আনার চেষ্টা করি।’

 

ল্যাম্বরগিনি তার ব্র্যান্ডের উপস্থিতি তৈরি করতে থাকবে, আরও ভাল পারফরম্যান্স এবং কম দূষণের গাড়ি তৈরি করবে বলে ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সিইও উইঙ্কেলম্যান।

বেইজিং আন্তর্জাতিক স্বয়ংচালিত প্রদর্শনী ২০২৪ এ প্রথম প্লাগ-ইন হাইব্রিড সুপার SUV, URUS SE উন্মোচন করেছে সুপার-কার নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠান। ২৫ এপ্রিল শুরু হওয়া প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে ৪ মে।  

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২. চীনের প্রযুক্তি খাতে তারুণ্যের জয়গান

 

চীনে বিকশিত হচ্ছে সেন্সর প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তিতে অভিনব সব আবিষ্কারের জন্য চাই নতুন মোড়কে নতুন ধারায় চিন্তা করতে পারার মতো মেধাবী কর্মী। আর চীনের মেধাবী তরুণরাই এই কর্মীবাহিনীর মূল প্রাণশক্তি। এমনকি প্রযুক্তি খাতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চীনে নেওয়া হচ্ছে মেধা অন্বেষণের নতুন কিছু কৌশল।

সেন্সর ও এ সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে চীন যত এগিয়ে যাচ্ছে তত দরকার হচ্ছে নতুন ও মাল্টিটাস্কিং মেধার। যাকে বলা হচ্ছে হাইব্রিড ট্যালেন্ট। আর বহুমাত্রিক প্রতিভার এ যোগানটা আসছে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে। এ ধরনের সংস্থায় এখন তরুণদের পদচারণাই বেশি।

 

চীনের হ্যনান প্রদেশের চেংচৌ শহরের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সেন্সর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে একই ইউনিফর্ম পরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল একদল সেন্সর গবেষকদের। গুটিকয়েক বয়স্ক কর্মীর সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করে আসা তরুণরা।  

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলেও অনেক তরুণ তাদের মেধার জোরে পেয়েছেন প্রমোশন। তারাও তৈরি করছেন অভিনব সব সেন্সর। এমন এক গবেষক হলেন হ্যনানের ইন্টেলিজেন্ট সেন্সর প্রতিষ্ঠানের উপ পরিচালক ছেন হাইইয়ং।

তিনি বললেন, ‘লেজার গ্যাসের একটি সেন্সর আমরা তিন মাসেই তৈরি করেছি। এতে অপটিক্যাল পাথ, স্ট্রাকচার, সার্কিট, প্রসেস, প্রোগ্রাম অ্যালগরিদম আছেন। আমরা বাজারের চাহিদা ভালো করে পূরণ করতে কাজের বিভিন্ন অংশের  জন্য বিভিন্ন মানুষকে একত্রিত করছি।

 

এখন তরুণদের নিয়োগের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে চীনের সেন্সর শিল্প আরও নতুন গবেষণা সংস্থা চালু করছে। যেগুলোর কাজ হবে তরুণদের তৈরি প্রযুক্তিগত ব্রেকথ্রুগুলোকে দৃশ্যমান আবিষ্কারে পরিণত করা। চীনের গবেষণা ও উন্নয়নের সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই তরুণ।

এক জরিপে দেখা গেছে চীনের উচ্চগতির রেল ডিজাইন ও উন্নয়ন টিমে যারা কাজ করছে তাদের গড় বয়স ৩৮ বছর। চীনের বেইতৌ স্যাটেলাইটের মূল দলে যারা কাজ করছে তাদের গড় বয়স ৩৬ বছর। আবার চীনের অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের গড় বয়স ৩৫ বছরের নিচে। 

 

প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

৩. সিনচিয়াংয়ে একঝাঁক তরুণ নিয়ে স্প্রিং ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

 

 

"চীনা সেতু" ২০২৪  স্প্রিং ক্যাম্পে শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও-ভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদেরকে উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেয়া হয়।   

 

বসন্তকালীন এই ক্যাম্প চলাকালে ভারত, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরানের শিক্ষার্থীরা সিনচিয়াংয়ের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন, সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নেন, ঐতিহ্যবাহী চীনা চা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং ক্যালিগ্রাফির অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

পনর দিনব্যাপী চলা এই স্প্রিং ক্যাম্পে চীনা সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে পেরে খুশি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা।

"আমি চীনে পড়ার পরিকল্পনা করছি এবং একটি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। তাই আমি চীনাদের সঙ্গে আরও কথা বলতে চাই। চীন যে মহান ও গভীর সেটা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমি খুবই খুশি যে, আমি এখানে অনেক কিছু শিখেছি।’  

বসন্ত শিবিরটি আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চীনা ও বিদেশি ভাষা বিনিময় ও সহযোগিতা কেন্দ্র এবং সিনচিয়াংয়ের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিক্ষা বিভাগ। এটি এসসিও দেশগুলোর তরুণদের চীনা ভাষা শেখার এবং চীনা সংস্কৃতির রস আস্বাদনের একটি প্ল্যাটফর্ম যুগিয়েছে।    

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

৪. আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে চীনের চেচিয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৬তম আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব - ২০২৪। অনুষ্ঠানের মুল প্রতিপাদ্য ছিল পারস্পরিক উপলব্ধি, সম্প্রীতি এবং অগ্রগতি।

 

প্রতিবারের মতো এবারও সাংস্কৃতিক উৎসবটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক, জাতিগত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও শৈলী, খেলার ক্রিয়াকলাপ এবং বিশেষ রান্নার মাধ্যমে তাদের দেশের সংস্কৃতি প্রদর্শন করে।

অনুষ্ঠানে দুই হাজারের বেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাছাড়া অনলাইনে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ উৎসবটি উপভোগ করেন। বাংলাদেশ, চীন, মরক্কো, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বেনিন, তানজানিয়া, নাইজেরিয়া, গিনি, ঘানা, নামিবিয়া, লাইবেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, কঙ্গো, ইথিওপিয়াসহ ২৬টি দেশ অংশ নেয় সাংস্কৃতিক উৎসবে।

 

প্রতিবেদক : শান্তা মারিয়া

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

  

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী