ডিজিটাল রিডিং প্রতিবেদন পড়ার নতুন প্রবণতা প্রদর্শন করে
2024-05-01 09:39:34

মোবাইল ফোন বের করে অ্যাপের মাধ্যমে বই পড়া যায়। হেডফোন পরে অন্যদের বই পড়ার অডিও শোনা যায়। ডিজিটাল রিডিংয়ের এ সময়ে আমরা আরও বেশি পদ্ধতিতে বই ‘পড়তে’ পারি। 

 সম্প্রতি ইউননান প্রদেশের খুনমিং শহরে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জাতীয় পাঠ সম্মেলন এবং সেখানে প্রকাশিত হয় ২০২৩ চীনা ডিজিটাল রিডিং প্রতিবেদন। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে চীনে ডিজিটাল রেডিং বাজারের আকার ছিল ৫ হাজার ৬৭০ কোটি ইউয়ান এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৭ কোটি।

 

কে বই পড়ে, কীভাবে পড়ে এবং কী পড়ে— তা নিয়ে এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা চীনে ডিজিটাল রিডিংয়ের নতুন কিছু ধারা খুঁজে পাই।

প্রথমে কে বই পড়ে?

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালের তুলনায় ডিজিটাল রিডিংয়ের ব্যবহারকারী ৭.৫৩ শতাংশ বেড়েছে, আর সব নেটিজনের মধ্যে তাদের অনুপাত ৫২.১৯ শতাংশ। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নেটিজনের মধ্যে ডিজিটাল রিডিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যা ডিজিটাল রিডিং শিল্পের উত্সাহব্যঞ্জক বিস্তৃতি দেখিয়েছে।

এই ৫৭ কোটি ডিজিটাল রিডিং ব্যবহারকারীর মধ্যে ১৯-৪৫ বছর বয়সীর অনুপাত সবচেয়ে বেশি, ৬২.৭ শতাংশ। পাশাপাশি ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী ব্যবহারকারীর অনুপাত ২০২২ সালের ২.৭৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালের ৪.২ শতাংশ হয়েছে।

 

প্রবীণ ব্যবহারকারীর অনুপাত বেড়েছে তার মানে প্রবীণরা বই পড়তে আগ্রহী এবং প্রবীণ পাঠ-বাজারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিজিটাল রিডিংয়ের ব্যবহারকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা ডিজিটাল রিডিং বাজারের আকারও প্রসারিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে চীনা ডিজিটাল রিডিং বাজারের আয় ২০২২ সালের তুলনায় ২২.৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা গেল ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি।

 

চায়না অডিওভিজ্যুয়াল অ্যান্ড ডিজিটাল পাবলিশিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ভাইস চেয়ারম্যান চাং ই চুন বলেন, একদিকে, চীন সরকার মানুষের ডিজিটাল সাংস্কৃতিক সাক্ষরতা জোরদার করতে ভালোমানের ডিজিটাল পণ্য প্রদান করে, আর অন্যদিকে অডিও পড়া, পেশাদার পড়া ও স্বাভাবিকপড়াসহ নানা পড়ার পদ্ধতি সব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অ্যাপে বিজ্ঞাপন যোগ দিলে এ বাজারের আয় আরও বেশি হবে।

 

দ্বিতীয় বিষয়, কীভাবে পড়া

ডিজিটাল রিডিং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়। কম্পিউটার, মোবাইলফোন, পেশাদার রেডিং ডিভাইসসহ  ডিজিটাল রিডিংয়ের পদ্ধতি অনেক পরিবর্তন হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে, চীনে ৬৭.৪৬ শতাংশ ডিজিটাল রিডিং ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সাহিত্য ও ডিজিটাল বই পড়ে ৩০.৬৮ শতাংশ অডিও (শোনার মাধ্যমে বই পড়া) পদ্ধতিতে। বাকিরা অনলাইন ক্লাস ও মাল্টি মিডিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে বই পড়ে।

অনেক পাঠক মনে করে মোবাইলফোন ও ডিজিটাল রেডিং ডিভাইস  অনেক সুবিধাজনক। বড় একটি বই ছোট করে পকেটে রাখা যায় এবং তারা নানা কাজের ফাঁকে কিছু কিছু পড়তে পারেন, যা পড়াকে সহজ করে।

শানসি প্রদেশের থাই উয়ান শহরের বাসিন্দা চেং আই ছেন একজন অবরসপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। তিনি অডিও পড়া পছন্দ করেন। তার মতে দুর্বল দৃষ্টিশক্তির প্রবীণদের জন্য অডিও ভাল একটি পড়ার পদ্ধতি। অডিওতে বই ছাড়াও বইয়ের সম্পর্কে নিজের ধারণা শেয়ার করেন বক্তা।

বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে বক্তা আসল মানুষ নন, এআই প্রযুক্তির সাহায্যে একটি বই সহজে অডিওতে পরিণত হতে পারে। পাশাপাশি ভিআর ডিভাইসের মাধ্যমে বই পড়াও একটি নতুন ধারা। শিশুরা ভিআর চশমার পরে বই পড়তে পারে। নতুন যুগে শিশুরা আধুনিক ও প্রযুক্তির এক সময়ে নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে পড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং বিচিত্র সব উপায়ে তাদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

চীনের গ্রামেও ডিজিটাল রিডিং জনপ্রিয় হয়েছে। গ্রামের গ্রন্থাগারে ঢুকলে এআই কৃষকদের জন্য উপযোগী বই সুপারিশ করে। যেমন শরত্কালে ফসল কাটার বই, বসন্তকালে সার এবং কীটপতঙ্গ প্রতিরোধের বই। 


আর শেষ বিষয়, যখন আমরা ডিজিটাল রিডিং করি, আমরা কী কী পড়ি? প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে চীনে ডিজিটাল রিডিং বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি তা ২০২২ সালের তুলনায় ১২.৫৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ডিজিটাল বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৫ ধরনের বই হচ্ছে উপন্যাস, কমিক্স, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, হাস্যরস ও জীবনী। পাশাপাশি ইন্টারনেট সাহিত্যের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্যান্টাসি, কল্পবিজ্ঞান ও গোয়েন্দা কাহিনী ইত্যাদি। অডিও রিডিংয়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য ও ইতিহাস সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়।

চীনে যদি কোন টিভি নাটক জনপ্রিয় হয় তাহলে তার সংশ্লিষ্ট বইও জনপ্রিয়তা পায়। কোনো কোনো টিভি নাটক উপন্যাসের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, কোন কোন টিভি নাটকে জনপ্রিয় চরিত্র একটি বই পড়েন বা টিভি নাটকের লিপি অনুযায়ী উপন্যাস পরে প্রকাশিত হয়। এ সব বই চীনে জনপ্রিয়তা পায়। দর্শক টিভি নাটক দেখার পাশাপাশি এ সংশ্লিষ্ট বইও পড়ে এবং অনলাইনে মতবিনিময় করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয় ২০২৩ সালে চীন মোট ৭ লাখ ৬২ হাজারের বেশি  ডিজিটাল রিডিং পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে। তা ২০২২ সালের তুলনায় ২৩.৩৫ শতাংশ বেশি এবং শাক্তিশালি উন্নয়ন প্রবাহ দেখায়।  উত্তর আমেরিকা, দক্ষীণ কোরিয়া ও জাপান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া হল চীনের ঐতিহ্যবাহি রপ্তানি বাজার আর এখন লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় চীনের ডিজিটাল রিডিং অডিও রপ্তানি হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভালো মানের ডিজিটাল রিডিং বিষয়বস্তু ও উচ্চমানের ডিজিটাল রিডিং চীনে বৃদ্ধি হয়। পাশাপাশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও মজার চীনা ডিজিটাল রেডিং শিল্পকর্মও বিদেশে যায়। তার মাধ্যমে বিদেশীরা চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবে।(শিশির/হাসিম/লিলি)