রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সফরের শততম বার্ষিকী উদযাপন
2024-04-30 19:04:33

২০ এপ্রিল, ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় সফরের শততম বার্ষিকী স্মরণে একটি বিশেষ প্রদর্শনী ও ধারাবাহিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং বিন এবং প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পাদকীয় কমিটির উপ-পরিচালক হু ডংচেং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং বিশেষ প্রদর্শনী উন্মোচন করেন।

ইয়াং বিন তার বক্তৃতায় এক শতাব্দী আগে রবীন্দ্রনাথের চীন সফরের ঐতিহাসিক পদচিহ্নের দিকে ফিরে তাকান। তিনি বলেন যে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের সফরের ১০০ বছর পূর্তি উদযাপনের তাত্পর্য রয়েছে। এটি শুধু ইতিহাসের পর্যালোচনা নয়, বর্তমানের জন্যও এটি একটি উৎসাহব্যাঞ্জক ব্যাপার। এটি চীন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সভ্যতার মধ্যে ক্রমাগত বিনিময় বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করার প্রত্যাশা প্রদর্শন করে। ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় যে সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতায় একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, জনগণের মধ্যে কূটনীতিকের পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা পালন করে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।

“কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই, দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।” ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদযাপনী অনুষ্ঠানে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, জাপানি, স্প্যানিশ, ইংরেজি এবং চীনা ৭টি ভাষায়  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ‘গীতাঞ্জলি’র ৬৩তম কবিতা আবৃত্তি করা হয়। তার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার স্নেহময়, ছন্দময় সৌন্দর্য প্রদর্শিত হয়।

১৯২৪ সালের এপ্রিলে, লিয়া ছি চাও-এর নেতৃত্বে চীনা সাংস্কৃতিক গ্রুপ লেকচার সোসাইটির আমন্ত্রণে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রথম চীন সফর করেন। তিনি সাংহাই, হাংচৌ, নানচিং, চিনান, বেইজিং, থাইইউয়ান এবং হানকোসহ সাতটি শহর পরিদর্শন করেন। তার চীন সফরের সময় মনোরম ছিংহুয়া ইউনিভার্সিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টপ ছিল। ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক সপ্তাহের জন্য ছিংহুয়ায় অবস্থান করেন। ছিংহুয়ায় থাকাকালীন, রবীন্দ্রনাথ একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাস্তব জগতের মুখোমুখি হতে এবং তাদের নিজস্ব দায়িত্ব গ্রহনের আহ্বান জানান। তিনি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের সাথে দর্শন ও জীবন নিয়ে আলোচনা করেন। ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্রনাথের জন্য বড় আকারের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এই ঐতিহাসিক সফরটি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরেরও বেশি ইতিহাসে রেকর্ড করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিনিময় অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছে এবং চীন-ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসেও একটি চিহ্ন রেখে গেছে।

প্রদর্শনীতে ১৯টি ছবি ও টেক্সট ডিসপ্লে প্যানেল এবং ৮টি ফিজিক্যাল ডিসপ্লে ক্যাবিনেট রয়েছে: ‘রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রথম দেখা’, ‘চীনে সফর’, ‘ছিংহুয়া চিহ্ন’, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং ছিংহুয়া পিপল’ এবং ‘চীন-ভারতীয় বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস’সহ ৫টি প্রধান বিষয় রয়েছে। এতে ৫০টিরও বেশি চিত্রকর্ম ও ঐতিহাসিক ফটো ও তথ্যচিত্র, ১৩টি ঐতিহাসিক বই ও সাময়িকী ছিংহুয়া লাইব্রেরি এবং অন্যান্য শারীরিক প্রদর্শনী দ্বারা সংগৃহীত। এ প্রদর্শনী রবীন্দ্রনাথের চীন সফরের ঐতিহাসিক পটভূমি, প্রধান ভ্রমণসূচী এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে বিস্তৃতভাবে এবং পদ্ধতিগতভাবে প্রতিফলন করে। প্রদর্শনীতে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা থেকে শুরু করে, লিয়াং ছি চাও, ফেং ইউ লান, ওয়েন ই ডুও, ঝেং ঝেন ডুও, জি শিয়ান লিন, বিং জিন এবং অন্যান্য সাহিত্যিক ব্যক্তিদের রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে মন্তব্যও রয়েছে।

স্মারক বিশেষ প্রদর্শনীটি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জাদুঘরের প্রথম তলায় ২০ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রদর্শিত হয় এবং তারপরে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গ্রন্থাগার এবং ভ্রমণের জন্য অন্যান্য স্থানে স্থানান্তরিত করা হবে।

জানা গেছে যে, ইতিহাস জাদুঘর, বিদেশী ভাষা বিভাগ, লাইব্রেরি এবং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভস এই স্মারক অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে। বিশেষ প্রদর্শনীর পাশাপাশি, গোলটেবিল বৈঠক, ‘রিয়েল-লাইফ লাইব্রেরি’ ইন্টারেক্টিভ বক্তৃতা, বিশেষ বুকশেলভ ডকুমেন্ট ডিসপ্লে এবং কবিতা আবৃত্তিসহ একাধিক একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছিল এতে। এর লক্ষ্য হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহান অবদানের পর্যালোচনা, তার চেতনা প্রচার করা এবং চীন-ভারত দুই দেশের মধ্যে একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রচার করা। (স্বর্ণা/হাশিম)