এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘আমেরিকা,কানাডার চেয়েও চীন বেশি সুন্দর’
২। ঘুরে আসুন ফাইউয়ান টেম্পল থেকে
৩। টুকরো খবর-
· প্রথম প্রান্তিকে চীনে বিদেশিদের সফর বেড়েছে তিনগুণ
· মে দিবসের ছুটিতে চাঙা হবে পর্যটন খাত
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১।সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘আমেরিকা,কানাডার চেয়েও চীন বেশি সুন্দর’
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে এ পর্বে কথা হয়েছে শুনবো চীন ঘুরে বেড়ানো একজন বাংলাদেশির কথা। তিনি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের চীনা ভাষার শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন চীন থেকে। তার বাংলা নাম সাঈদ আলম সাদ এবং চীনা নাম লি চেন।
· প্রশ্ন- ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত। কেমন আছেন আপনি?
সাদ- আমি ভালো আছি।
· প্রশ্ন- আপনি তো সম্প্রতি চীন ঘুরে এসেছেন। কোথায় কোথায় ঘুরেছেন?
সাদ- গত বছর আমি ‘চাইনিজ ব্রিজ’ প্রতিযগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে আমি গিয়েছিলাম ইয়ুননান ইউনিভার্সিটিতে, কুনমিং এবং শিশুয়ানবান্না শহরে। সেখানকার পাহাড় অনেক বেশি সুন্দর। এছারা আমরা গ্রামেরো গিয়েছিলাম। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি। গেল মার্চেও আমি একটি স্মার্টি টিচার্চ প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম।
· প্রশ্ন- সেখানে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সাদ- আমার সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে গ্রামে গিয়ে। সেখানকার গ্রামে গিয়ে ছোটবেলার চকুপাতি খেলার মতো মাটি দিয়ে তাদের তৈরি নানারকম মূর্তি দেখেছি। কালচারাল প্রোগ্রামের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বানাতে দেখেছি।
· প্রশ্ন- চীনাদের জীবনপ্রকৃতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কী নতুন ধারণা হলো?
সাদ- মানুষরা মনে করে আমেরিকা , কানাডা বেশি সুন্দর, কিন্তু আমার কাছে চীন বেশি সুন্দর। সবার চীন যাওয়া উচিত। চীনের নিরাপত্তা সিস্টেম দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ছোট বড় সবার জন্যই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
· প্রশ্ন- আপনি তো চীনা ভাষা পারেন। এই ভাষা শেখার যাত্রা সম্পর্কে বলুন।
সাদ- আমার এই ভাষা শেখার যাত্রা শুরু ২০১৯ সালে। আমি একটি পাঁচ তারা হোটেলে হোটেল ম্যানেজমেন্টে কাজ করতাম। সেখানে একজন চীনা গেস্ট বলেছিল, তুমি ইংরেজি ভালো জানো, যদি চীনা ভাষাটাও শিখো তাহলে জীবনে ভালো করবে। এরপর আমি চীনা ভাষা শেখার ক্লাসে ভর্তি হই।
· প্রশ্ন- যারা চীনে যেতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
সাদ- চীন একটি সুন্দর দেশ। তারা আগামীতে কালচারাল, বিজনেস, অনেক অপরচুনিটি অফার করছে। তো আমি চাইবো যারা ভ্রমণে যাবেন তারা কম খরচেও চীন ঘুরে আসতে পারেন।
· প্রশ্ন- আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সাদ-আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
২। ঘুরে আসুন ফাইউয়ান টেম্পল থেকে
বেইজিং মহানগরীর সবচেয়ে পুরনো বৌদ্ধ মন্দির ফাইউয়ান সি। এর প্রকৃত নাম মিনচোং টেম্পল। থাং রাজবংশের শাসনকালে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট থাইচোং প্রথম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তিকালে এই মন্দির পুনর্নিমাণ করা হয় মিং রাজবংশের শাসনকালে। মিং সময়ের চ্যংথোং পর্বে( ১৪৩৬-১৪৪৯ অব্দ) এই মন্দিরের অনেক সংস্কার হয়। থাং সম্রাট থাইচোং প্রথম এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন তার দলের শহীদ বীর যোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
৬৭০০ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণ গড়ে উঠেছে। এখানে বেশ কিছু প্রাচীন সাংস্কৃতিক নিদর্শন রয়েছে। ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্য, পাথরের সিংহ এবং তিন বুদ্ধের ভাস্কর্য রয়েছে। মিং ও ছিং রাজবংশের সময় এখানে বৌদ্ধ ধর্মের বেশ কিছু বই লেখা হয়।
বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে ড্রাম টাওয়ার ও বেল টাওয়ারের সাথেই এই মন্দির অবস্থিত। স্বর্গ রাজার কক্ষ, মূল কক্ষ, হল অব গ্রেট কমপ্যাশন, সূত্র কক্ষ এবং মন্দিরের ফটক কারুকার্য খচিত। মন্দিরের ভিতরে মঞ্জুশ্রী, সামন্তভদ্রসহ বেশ কয়েকটি অসাধারণ নান্দনিক ভাস্কর্য রয়েছে।
এখানে পূর্ব হান রাজবংশের সময়কার অর্থাৎ ২৫ থেকে ২২০ খ্রিস্টাব্দের সময়ে নির্মিত চীনা মাটি শিল্পের কিছু অসাধারণ সুন্দর নিদর্শন রয়েছে। এখানে পূর্ব উ রাজবংশের সময়কার (২২৯-২৮০ খ্রিস্টাব্দ) মৃৎশিল্পের নিদর্শন আছে।
পুরো মন্দির প্রাঙ্গণের শান্তিময় পরিবেশ এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখার জন্য পর্যটকরা এই মন্দির পরিদর্শন করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে এই সময়ে মন্দিরপ্রাঙ্গণে ফুলের শোভা দেখতেও আসেন অনেকে। এখানে প্রাচীন কিছু গাছ রয়েছে। আরও রয়েছে চেরি ও পিচ ফুলের গাছ। এই সময়ে চেরি ও পিচ ফুলের ছায়ায় মন্দির প্রাঙ্গণ আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। টুকরো খবর-
· প্রথম প্রান্তিকে চীনে বিদেশিদের সফর বেড়েছে তিনগুণ
বিদেশি নাগরিকরা এই বছরের প্রথম তিন মাসে চীনে ১ কোটি ৩০ লাখ বার এসেছেন। যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি। চীনের জাতীয় অভিবাসন প্রশাসন জানাল এ তথ্য।
পর্যটক আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক সম্মেলন এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে চীন তার আকর্ষণীয় দিকগুলো উপস্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
গত মার্চে চীনের স্টেট কাউন্সিল বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে একটি বড় কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। যার মধ্যে রয়েছে চীনের বাজার প্রসার করা এবং বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করে তোলার নানা কৌশল।
একই লক্ষ্যে মার্চের শেষ দিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজন করে ‘চীনে বিনিয়োগ করুন’ থিমে একটি জমকালো অনুষ্ঠান। তাতে অংশ নিয়েছিলেন ১৪০ জনেরও বেশি উদ্যোক্তা, ১৭টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা চেম্বার অফ কমার্স ও ব্যবসায়িক সমিতির প্রতিনিধিরা।
এর মাঝে আমদানি ও রপ্তানি মেলা তথা ক্যান্টন ফেয়ার এবং শুক্রবার সাংহাইয়ে শেষ হওয়া প্লাস্টিক ও রাবার শিল্পের ৩৬তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতেও এসেছিলেন অনেক বিদেশি উদ্যোক্তা ও ক্রেতা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনে ১২ হাজার নতুন বিদেশি-বিনিয়োগকারী সংস্থা চালু হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
· মে দিবসের ছুটিতে চাঙা হবে পর্যটন খাত
চীনের পর্যটন খাত মে দিবসের ছুটিতে আবার চাঙা হচ্ছে। মে দিবসের ছুটির সময় বড় একটি ভ্রমণ ঢেউ দেখা যাবে বলে আশা করছে পর্যটন কর্তৃপক্ষ। মে দিবসের ছুটি ১ থেকে ৫ মে পর্যন্ত চলবে। এরমধ্যেই অনেক জনপ্রিয় পর্যটন স্পটের বুকিং সম্পূর্ণ হয়েছে।
ভিসার তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পাঁচ দিনের ছুটির জন্য জনপ্রিয় বিদেশী গন্তব্য হল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ড।
অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে, বেশ কয়েকটি ট্রাভেল সার্ভিস প্ল্যাটফর্মের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে বেশি দূরত্বের ভ্রমণের বুকিং ইতোমধ্যেই মোটের অর্ধেক হয়ে গেছে। বেইজিং, শাংহাই, ছোংছিং এবং হাংচৌর মতো শহরগুলোর প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি।
বেইজিং তিনটি হেলিকপ্টার দর্শনীয় রুট চালু করেছে, যা পর্যটকদের আকাশ থেকে বিশাল পর্বত, মিয়ুন জলাধার, বাইহে নদী ক্যানিয়ন এবং গ্রেট ওয়াল দেখায়।
বাওশান, হুয়াইহুয়া, ছিফং এবং হ্যচের মতো ছোট শহরগুলোতে বিমানের বুকিং গেল বছরের এই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা-শান্তা মারিয়া, ফয়সল আবদুল্লাহ
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী