ফিলিপাইনের উচিত ইতিহাসকে সম্মান জানানো
2024-04-29 13:15:09

এপ্রিল ২৯: ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গিলবার্তো তেওডোরো শনিবার দাবি করেছেন যে, ২০২২ সালে বর্তমান সরকার শপথগ্রহণের পর থেকে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধের বিষয়ে চীনের সঙ্গে কোনো অভ্যন্তরীণ সমঝোতা সম্পর্কে অবগত নয় বা ঐকমত্যে পৌঁছায়নি। এটি হল ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পর দেশটির কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির আবারও রেনআই রিফ সমস্যায় চীন ও ফিলিপাইনের কোনো সমঝোতাকে অস্বীকার করা।

তাহলে চীন এবং ফিলিপাইনের সমঝোতা কী? এতে কী কী বিষয় রয়েছে? আর কী কী ভূমিকা পালন করে? ইতিহাসের দিকে একটু তাকালে তা খুব স্পষ্ট হয়ে যাবে।

রেনআই রিফ হল চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের একটি জনবসতিহীন দ্বীপ। ফিলিপাইনসহ আসিয়ান দেশগুলোর সাথে চীনের স্বাক্ষরিত ‘দক্ষিণ চীন সাগরে দেশগুলোর আচরণ সংক্রান্ত ঘোষণা’র পঞ্চম অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, দক্ষিণ চীন সাগরের জনবসতিহীন দ্বীপ ‘বসতিহীন এবং স্থাপনাবিহীন’ অবস্থা বজায় রাখতে হবে। ১৯৯৯ সালের ৯ মে,  ফিলিপাইনের যুদ্ধজাহাজ ‘সিয়েরা মাদ্রে’ অবৈধভাবে রেনআই রিফে নোঙ্গর করেছিল। চীন কঠোর মনোভাব জানানোর পরে, ফিলিপাইন অবৈধভাবে ‘সৈকতে নোঙ্গর করা’ যুদ্ধজাহাজটিকে সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং বলেছিল যে, দক্ষিণ চীন সাগরে দেশগুলোর আচরণের ঘোষণাপত্র লঙ্ঘনকারী প্রথম দেশ হবে না তারা। কিন্তু ২৫ বছর পরেও, ফিলিপাইন এখনও জাহাজটি সরিয়ে নেয়নি।

ফিলিপাইনের রদ্রিগো দুতার্তে সরকারের সময়, দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করার জন্য চীন এবং ফিলিপাইন রেনআই রিফ বিষয় নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি পৌঁছায়। সমঝোতা অনুযায়ী ফিলিপাইন অবৈধভাবে ‘সৈকতে বসে থাকা’ জাহাজে আর কোনো নির্মাণ সামগ্রী পাঠাবে না, চীন মানবিক দিক থেকে, সেই জাহাজে ফিলিপাইনের প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন জিনিসপত্র পাঠাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। এমন সমঝোতা গোপনীয় কোনো ব্যাপার নয়। এর মধ্য দিয়ে চীন ও ফিলিপাইন মতভেদকে পাশে রেখে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ত্বরান্বিত করেছে। ফিলিপাইন এমন সুযোগে অর্থনৈতিক উন্নয়নও করতে পেরেছে।

২০২২ সালের জুন মাসে, ফিলিপাইনের এই মেয়াদের সরকার শপথগ্রহণের পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত, চীন এবং ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা সবসময় এই চুক্তি মেনে চলেছে। ২০২৩ সালে, চীন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের চীন বিষয়ক বিশেষ দূতকে রেনআই রিফের পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনার জন্য চীনে আসার আমন্ত্রণ জানায় এবং একটি অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ায় পৌঁছায়। একই বছরের শুরুতে, চীন কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ফিলিপাইনের সাথে বারবার আলোচনা করেছে এবং রেনআইন রিফের পরিবহন এবং সামগ্রী সরবরাহের একটি ‘নতুন মডেলে’ পৌঁছায়। যাহোক, প্রাসঙ্গিক বোঝাপড়া এবং ব্যবস্থা একবার বাস্তবায়িত হওয়ার পর ফিলিপাইন কোনো কারণ ছাড়াই একতরফাভাবে তা পরিত্যাগ করে।

তা থেকে বোঝা যায়, ফিলিপাইনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে তারা পূর্ববর্তী সরকার এবং চীনের মধ্যে যে ‘ভদ্রজনোচিত চুক্তি’ হয়েছিল তা জানেন না এবং তারা সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্ত হওয়ার ভান করছেন। সবাই বুঝতে পারে যে, প্রথমত, ফিলিপাইনের সরকার অসৎ; দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ফিলিপাইন বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে।

সম্প্রতি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের যুক্তরাষ্ট্র সফরেরসময়, কিছু ফিলিপিনো বিক্ষোভকারী উল্লেখ করেছিলেন যে ফিলিপাইনকে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘প্রথম দ্বীপ চেইনে’ টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যা চীনকে প্রতিরোধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল।

কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার স্বার্থ রক্ষার জন্য, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনকে একটি ‘নতুন উপনিবেশে’ পরিণত করছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সমস্যা সৃষ্টি করতে, চীনকে প্রতিরোধ করতে আঞ্চলিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। ফিলিপাইনের কাছে সঠিক বাছাই হল ইতিহাসকে সম্মান করা, প্রতিশ্রুতি মেনে চলা এবং সংলাপ ও আলোচনার সঠিক পথে ফিরে আসা।

(শুয়েই/হাশিম)