আজকের টপিক: ব্লিঙ্কেনের চীন সফর কেমন ছিল?
2024-04-29 18:25:25

এক বছরের মধ্যে দু’বার চীন সফর। ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আবারও চীন সফর করেন। তিন দিনের মধ্যে, তিনি সাংহাই এবং বেইজিং সফর করেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সাথে আলোচনা করেন। তাহলে এবার দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা কেমন ছিল?

চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই রাষ্ট্রপ্রধানের ‘সান ফ্রান্সিসকো ভিশন’ বাস্তবায়নের দিক দিয়ে দেখলে, এই সফরের কিছু ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্যে অর্জিত ৫টি ঐকমত্য, সান ফ্রান্সিসকোতে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ঐকমত্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। কিন্তু ব্লিঙ্কেনের চীন সফরের আগে প্রকাশিত তালিকা থেকে বিচার করলে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্লিঙ্কেনের সাথে সাক্ষাতের সময় উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র ‘প্রথম বোতাম’ ঠিক মত লাগালে চীন-মার্কিন সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল ও ভালো হতে পারে এবং এগিয়ে যেতে পারে। ‘প্রথম বোতাম’ অর্থাৎ পরস্পরের সঠিক বোঝাপড়া। চীন পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতা মেনে চলে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও চীনকে তার প্রধান কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সবচেয়ে গুরুতর ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করে। তাহলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে  ভালো হওয়ার দিকে যেতে পারে?

ফুতান ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন এবং সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক উ শিন বো মনে করেন যে চীন-মার্কিন সম্পর্ক ভালোভাবে বিকশিত হতে পারে কিনা তা নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে নাকি অংশীদার হিসেবে দেখে, তার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের চীন সম্পর্কে তার ভুল ধারণা চিহ্নিত করে সংশোধন করার সাহস থাকতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় অর্ধবছর আগে ব্লিঙ্কেন চীন সফর করেন। এর প্রধান কারণ হল যে বাইডেন প্রশাসনকে নির্বাচনের আগে তার চীন সংক্রান্ত নীতিতে কিছু নির্দিষ্ট স্বার্থ ও লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে হবে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য, তাইওয়ান প্রণালী, দক্ষিণ চীন সাগর, কোরিয়ান উপদ্বীপ, ফেন্টানাইল এবং অন্যান্য সমস্যাসহ ব্লিঙ্কেনের কাছে তার মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সব বিষয়ে চীনের কাছে তাদের উদ্বেগ উত্থাপন করেছে এবং আশা করেছিল যে চীন তাদের স্বার্থ ও প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে পারে।

চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা স্বল্পমেয়াদী স্বার্থের লক্ষ্য পূরণে পরিচালিত হতে পারে না, তা অবশ্যই চীন-মার্কিন সম্পর্কের বৃহত্তর কাঠামোর মধ্যে বিবেচনা করতে হবে।

গত বছরের জুনে ব্লিঙ্কেনের চীন সফরের আগে, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-ফিলিপাইন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। এ বছর তার চীন সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ফিলিপাইন তিন দেশের মধ্যে প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উভয় বৈঠকে পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালীর মতো বিষয়গুলো জড়িত ছিল। বাইডেন প্রশাসন এই পদক্ষেপগুলো ব্যবহার করে ব্লিঙ্কেনের চীন সফরের জন্য কিছু সুবিধা পেতে এবং চীনের বিরুদ্ধে খেলায় মার্কিন অবস্থানকে শক্তিশালী করার আশা করেছিল। কিন্তু চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই পদক্ষেপগুলো কেবল দেখায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আন্তরিক নয়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যে তারা চীনকে দমন করতে চায় না বা চীনের বিরুদ্ধে মিত্রচক্র গঠন করতে চায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা আসলে তাদের কথার ঠিক বিপরীত। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো চীনের কাছে তার আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে তাদের প্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেওয়াও চীনের পক্ষে কঠিন।

প্রেসিডেন্ট সি, ব্লিঙ্কেনের সাথে সাক্ষাতের সময় উল্লেখ করেন যে, চীন একটি আত্মবিশ্বাসী, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ এবং বিকশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় এবং আশা করে যে যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে। শুধুমাত্র ‘প্রথম বোতাম’ সঠিক লাগালে, তখনই চীন-মার্কিন সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল, ভালো হতে পারে এবং এগিয়ে যেতে পারে।

(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)