'বিজনেস টাইম'পর্ব- ১০
2024-04-26 22:17:04

 


চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।

এই পর্বে থাকছে:

১. চীনের কুয়াংচৌতে চলছে তিনলাখের বেশি নতুন পণ্য নিয়ে ১৩৫তম ক্যান্টন মেলা 

২. ভোগ্যপণ্যের বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি








চীনের কুয়াংচৌতে চলছে তিনলাখের বেশি নতুন পণ্য নিয়ে ১৩৫তম ক্যান্টন মেলা 


দারুণ সুন্দর সব পণ্য। চমৎকার সব প্লেট, ডিশ। খাবার টেবিলের সামগ্রী।  ক্রেতারা বিমুগ্ধ চোখে দেখছেন এসব টেবিলওয়্যার। চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরে চলছে ১৩৫তম চায়না আমদানি রপ্তানি মেলা। এই মেলা ক্যান্টন মেলা নামে বেশি পরিচিত। মেলার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে সম্প্রতি। মেলার দ্বিতীয় পর্বের প্রতিপাদ্য হলো মানসম্মত গার্হস্থ জীবন বা কোয়ালিটি হোম লাইফ। মেলায় তিনলাখের বেশি নতুন পণ্য ২ লাখ ১০ হাজার সবুজ ও নিম্নকার্বন পণ্য এবং ৩০ হাজার স্মার্ট ডিভাইস রয়েছে।

 

৫ লাখ ১৫ হাজার প্রদর্শনী এলাকা এবং ১৫টি জোন জুড়ে চলছে মেলা। রয়েছে ২৪ হাজার ৬শর বেশি বুথ। ৯হাজার ৮২০টি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে দ্বিতীয় পর্বে। 


এখানে রয়েছে গৃহস্থালি পণ্য, শোপিস, উপহারসামগ্রী, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ বিচিত্র সব পণ্য যা জীবনযাত্রাকে আরও সহজ এবং নান্দনিক করে তুলতে পারে।

 

ক্যান্টন ফেয়ারের এই পর্বে এগারোশর বেশি কোম্পানি নতুনভাবে প্রদর্শক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

মেলার দ্বিতীয় পর্বে আরও বেশি নামিদামী প্রদর্শক ও ব্র্র্যান্ড অংশ নিয়েছে। ৯শর বেশি প্রভাবশালী ব্র্যান্ডের মালিকানাধীন পাঁচ হাজারের বেশি ব্র্যান্ড বুথ রয়েছে। তবে শুধু খ্যাতিমান ব্র্যান্ড নয়, কয়েকটি দেশের সাধারণ উদ্যোক্তারাও এসেছেন। 

বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর উদ্যোক্তারাও অংশ নিচ্ছেন মেলায়।

 মেলায় কিচেনওয়্যার বা রান্নাঘরের সামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে ৭০ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে। ১৫০০ প্রদর্শক এসেছেন এসব পণ্য নিয়ে। রান্নাঘর আর টেবিলওয়্যার সামগ্রীর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল প্রচুর। বর্তমান প্রজন্ম যে আধুনিক ও মানসম্মত জীবনযাপন পছন্দ করে এই পণ্যগুলো তারই প্রমাণ বহন করছে। 

 ক্যান্টন মেলা তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি পর্ব পাঁচদিনের। ১৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত চলছে এ মেলা। 

১৯৫৭ সালে শুরু হওয়া ক্যান্টন মেলা বছরে দুবার অনুষ্ঠিত হয়। এটি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি প্রধান পরিমাপক হিসেবে বিবেচিত হয়। 

।। প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

।। সম্পাদনা: রহমান


বিশ্লেষণ পর্ব:

ভোগ্যপণ্যের বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাল, এ বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের জিডিপি বেড়েছে ৫.৩ শতাংশ। চীনের নিজস্ব ভোগ্যপণ্যের বাজার এ  প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে ৭৩.৭ শতাংশ।

আর এই ভোগক্ষমতা বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রাখছে তিনটি বিষয়—সেবা সম্পর্কিত বাজার, নানা উৎসব উদযাপন সংক্রান্ত ভোগ্যপণ্য এবং গৃহস্থলীর নানা পণ্যের প্রসার।


ভোগক্ষমতার নতুনধারা 

চীনে বিনোদন থেকে শুরু করে পর্যটন ও ডিজিটাল খাতে ভোগের পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যান্ডগুলো এখন চীনের ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে এবং সেই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে বিক্রিও। চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক “হর্স-ফেইসড-স্কার্ট” ও “নিও-চাইনিজ” গয়নার চাহিদাও এ বছরের প্রথম

 

দুইমাসে কয়েক গুণ করে বেড়েছে। আবার স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি খেলাধুলা বিষয়ক অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে চীনে। বিশেষ করে রানিং সু , দ্রুত শুকানো যায় এমন জামাকাপড় ও খেলাধুলার নানা সরঞ্জামের বিক্রি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উদ্যমী তরুণদের হাত ধরে নতুন একটি “মেইড ইন চায়না” বিপ্লবের সূচনা হয়েছে।

টেকসই ও স্থিতিস্থাপকতা 

চীনের ভোগক্ষমতাকে টেকসই রাখার প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে চলমান নগরায়ন এবং ক্রমবর্ধমান আয়। ২০২৩ সালের শেষের দিকের তথ্যানুসারে, চীনের ৬৬ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখন শহরাঞ্চলে বাস করছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, এক শতাংশ নগরায়ন বাড়লে চীনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাড়ছে ২০০ বিলিয়ন ইউয়ান।  

এখনও ১৭ কোটি অভিবাসী গ্রামীণ কর্মী আছে যারা এখনও শহরে স্থায়ী হতে পারেননি। তারা শহরে এলে চীনের অর্থনীতি আরও ফুলেফেঁপে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যদি ওই মানুষগুলো শহরে বাস করার সুযোগ পায় এবং নাগরিক মৌলিক সেবা পায় তবে তাদের ভোগের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। 

সরকারি তথ্যমতে, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে চীনের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয় ছিল ১১ হাজার ৫৩৯ ইউয়ান। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.২ শতাংশ বেশি। একই সময়ে শহরের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৫০ ইউয়ানে যা আগের চেয়ে ৫.৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে গ্রামে বসবাসকারীদের আয় ৬৫৯৬ ইউয়ান। এটি আগের চেয়ে ৭.৬ শতাংশ বেশি।

ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কর্মস্থানবান্ধব নীতির ফলে চীনের চাকরি বাজারের উন্নয়ন হয়েছে। শাংহাই-ভিত্তিক চায়না মার্কেট রিসার্চ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেন ক্যাভেন্ডার বলেছেন, অফিসভিত্তিক কাজে যুক্ত কর্মীরা আঁচ করতে পারছেন, বাজার অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে।  এতে তারা আরও ব্যয় করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি অনেক বছর ধরে নিজেদেরকে বিনিয়োগ থেকে সরিয়ে রেখেছিল, এখন তারাও চীনে ব্যবসা বাড়ানোর কথা ভাবছে। 

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর ডেপুটি হেড শেং লাইয়ুন বলেন, নাগরিকদের আয় বাড়ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে। এর ফলে সকলের ভোগক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নীতি প্রবর্তন

এ বছর ভোগক্ষমতার স্থিতিশীলতা রাখতে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ানো ও সঠিক অর্থনৈতিক প্রবাহ জোরদার করতে বদ্ধপরিকর চীন। গত মাসে, চীনের স্টেট কাউন্সিল এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা নেয়। নানা ধরনের শিল্প সরঞ্জামের উন্নয়নের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য প্রচার সম্পর্কিত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেসবের বিস্তারিত আছে এ পরিকল্পনায়।

চীন সরকার ঠিক করেছে, সরঞ্জামের মানোন্নয়ের সাথে জড়িত সংস্থাগুলোকে উন্নয়নের আওতায় আনার জন্য কর প্রণোদনা এবং সুদের হারে ভর্তুকি দেওয়া হবে। একই সাথে যেসব গ্রাহক কম দূষণের গাড়ি কিনতে ইচ্ছুক তাদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থাও করা হবে। 

স্থানীয় সরকার ও আসবাবপত্রের ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে যেন তারা পরিবেশবান্ধব এবং স্মার্ট বাণিজ্য করতে আগ্রহী গ্রাহকদের ভর্তুকি ও অগ্রাধিকার দেয়। 

চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপ্রধান চীনের প্রায় ১৪০ কোটি ভোক্তার যে বাজার, সেটার সম্ভাবনা এখনও বিশাল। আর এ বাজারের জন্য ভোগপণ্য তৈরির বিন্যাসও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে।


।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ 

।। সম্পাদনা:  শাহানশাহ রাসেল






প্রযোজনা ও  উপস্থাপনা: শাহানশাহ রাসেল


অডিও সম্পাদনা: নাজমুল হক রাইয়ান


স্ক্রিপট সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ 


সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী