আকাশ ছুঁতে চাই ৬৭
2024-04-25 22:07:58

 

১. চীনে নারী অর্থনীতির জয়

২. সিচাংয়ের নৃবিজ্ঞানী বাইমা কুও

৩.  মিয়াও নৃগোষ্ঠীর মেয়েদের সিস্টার্স ফেস্টিভ্যাল


নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে  স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

চীনে নারী অর্থনীতির জয়

চীনের নারীরা অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন। নারীরা বিভিন্ন পেশায় যোগ দেয়ার ফলে তারা স্বাধীনভাবে উপার্জন করতে পারছেন। সে কারণে বর্তমানে নারীর ক্রয়ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলে নারী ক্রেতাদের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। নারী শক্তির এই বিষয়টিকে ‘শি- ইকোনমি’ বা নারী অর্থনীতি নামেও অভিহিত করছেন অনেক বিশ্লেষক। 

 

 শি ইকোনমি বা নারীর অর্থনীতির বেশ জোরালো প্রকাশ দেখা গেছে চীনে  সদ্য সমাপ্ত আন্তর্জাতিক ভোক্তা পণ্য মেলায়। সম্প্রতি দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের রাজধানী হাইখোও সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ছয়দিন ব্যাপী চতুর্থ চায়না ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার প্রোডাক্ট এক্সপো। এখানে ৭১টি দেশ ও অঞ্চলের চারহাজারের বেশি ব্র্যান্ড অংশ নেয়। এবারের ভোক্তাপণ্য মেলায় নারীদের প্রসাধনী, জুয়েলারি, বিউটি প্রোডাক্ট  এবং ‘নারী-কেন্দ্রিক’ ব্র্যান্ডগুলো ব্যাপক ব্যবসা করেছে। এগুলোর ক্রেতা মূলত নারী এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যাপক কেনাকাটাও করছেন। 

মেলায় অংশ নেয়া প্রসাধনী প্রস্তুতকারী আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড লরিয়েল চায়নার সিইওি ফেব্রিক মেগারবেন বলেন, ফ্রান্স থেকে রপ্তানির করা প্রতি তিনটি লিপস্টিকের একটির ক্রেতা চীনা নারী। 

ভোক্তা পণ্য মেলায় চোখ ধাঁধানো ফ্যাশন শো এবং জুয়েলারি ও বিউটি প্রোডাক্টের প্রাধান্য প্রমাণ করেছে ‘নারী অর্থনীতি’র শক্তি। 

 

এমনকি স্পোর্টস কার এর মতো ঐতিহ্যবাহী পুরুষ প্রাধান্যের জগতেও এবার দেখা গেছে নারীদের আগ্রহ এবং অনেক নারী ক্রেতা।বিশ্বখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক ইতালিয়ান ব্র্যান্ড অটোমোবিলি ল্যামবোগিনি চীনা ব্রাঞ্চের ম্যানেজিং ডিরেকটর কনস্টানটিন সেইচেভ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনে নারীর সংখ্যা এবং অবশ্যই নারী ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। তিনি জানান তার কোম্পানি নারীদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে এখন পণ্য তৈরি করছে।

 

এটা সম্ভব হয়েছে চীনে চাকরি বা ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ এবং তাদের ক্রয় ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার বৃদ্ধির ফলে। 

চীনে ৪০০ মিলিয়ন নারী কনজিউমার আছেন যাদের বয়স  ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। বছরে তাদের ব্যায় ক্ষমতা ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল সংখ্যক ক্রেতার প্রতি এখন মনোযোগ দিচ্ছে দেশি বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো।

 

মেলায় অংশ নিয়েছে বিলাসবহুল চেক ক্রিস্টাল ব্র্যান্ড ক্রাসনা ডুসে। এবারের মেলায় চীনা নারীদের জন্য তারা এনেছিল চোখ ধাঁধানো সব নতুন ডিজাইনের ক্রিস্টাল অলংকার। ক্রাসনা ডুসে চায়নার জেনারেল ম্যানেজার লুও ওয়ান জানান, চীনের নারীরা এই ক্রিস্টাল অলংকার পছন্দ করেন কারণ এটি যেমন এলিগেন্ট লুকিং তেমনি দামটাও আয়ত্তের মধ্যে। 

 

 মেলায় আগত একজন নারী বলেন, তিনি অলংকার কেনার সময় চিন্তা করেন সেটি সাশ্রয়ী কিনা। দামটা কম হতে হবে আবার দেখতেও ফ্যাশনেবল হতে হবে। অযথা উচ্চমূল্যের জুয়েলারির কদর এখন নারীদের মধ্যে কমছে। তারা চিন্তাভাবনা করে নিজের উপার্জিত অর্থ ব্যয় করেন এবং পণ্যটি কস্ট এফেকটিভ কিনা সেদিকটা চিন্তা করেন। 

অর্থনীতিতে নারী শক্তির এই অবদানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন দেশি-বিদেশি উৎপাদকরা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান


সিচাংয়ের নৃবিজ্ঞানী বাইমা কুও

সিচাংয়ের উচ্চ-পর্বতমালার কঠিন পরিবেশে বসবাসকারী পশুপালকরা তাদের অনন্য সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার জন্য বিখ্যাত। নৃবিজ্ঞানী বাইমা কুও দীর্ঘদিন ধরে এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছেন, তাদের জীবনধারা, রীতিনীতি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করছেন। কুও'র গবেষণা তিব্বতীয় পশুপালকদের জীবন সম্পর্কে বোঝার পরিধি বিস্তৃত করে তুলেছে এবং তাদের সংস্কৃতির টিকে থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে।

 

উত্তর সিচাং মালভূমির নাগচুতে জন্মগ্রহণ করেন বাইমা কুও । একজন নৃবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি সিচাংয়ের পশুপালকদের জীবনযাত্রা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছেন। স্নাতক থেকে ডক্টরেট পর্যন্ত নৃতাত্ত্বিক হওয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ২০১২ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি সিচাংয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গবেষণায় গভীরভাবে মনোযোগ দিয়েছেন।

তিনি তার কাজের জন্য বেশ কয়েকটি পুরষ্কার জিতেছেন। কুও তার গবেষণায়, তিব্বতীয় পশুপালকদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক উন্মোচন করেছেন। তাদের পশুপালন, কৃষিকাজ, বাণিজ্য এবং ধর্মীয় অনুশীলন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কুও দেখেছেন, তিব্বতীয় পশুপালকরা প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তারা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। তাদের জীবনযাত্রা ঋতু অনুসারে পরিবর্তিত হয় এবং তারা তাদের পশুপালনের উপর নির্ভর করে তাদের খাদ্য, পোশাক ও আশ্রয় সংগ্রহ করে।

বাইমা কুও বিশ্বাস করেন, সিচাং সম্পর্কে বিদ্যমান ভুল ধারণা দূর করার জন্য বিদেশীদের সিচাং আসা উচিত। তিনি মনে করেন, কেবলমাত্র বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সিচাংয়ের জনগণের জীবনযাত্রা ও তাদের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।

 

একজন নারী হিসেবে বাইমা কুও'র অভিজ্ঞতা তাকে একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে। তিনি নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান ক্ষেত্রে সিচাংয়ের নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।

চলতি বছর, ১৪তম ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের ডেপুটি হিসেবে, বাইমা কুও মাঠ অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু নীতিগত পরামর্শ জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে প্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা অব্যাহত রাখা এবং বয়স্ক ভাতার জন্য বয়সসীমা কমানো।

বাইমা কুও দীর্ঘদিন ধরে তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য নীতি নির্ধারকদের সাথে কাজ করে আসছেন। তার গবেষণা তিব্বতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করে এবং তিব্বতীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া 


মিয়াও নৃগোষ্ঠীর মেয়েদের সিস্টার্স ফেস্টিভ্যাল 

চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম মিয়াও জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। মিয়াও নারীদের পোশাক, অলংকার সবকিছুতেই রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মিয়াও সিস্টার্স ফেস্টিভ্যাল বা বোনদের উৎসব। এই উৎসব শুধু নারীদের জন্য। বিস্তারিত প্রতিবেদনে। 

শুধু নারীদের জন্য একটি উৎসব। উৎসবে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশ নিচ্ছেন নারীরা। পুরুষরাও আছেন। কিন্তু উৎসবটির মূল চালিকা শক্তি নারীর হাতে। 

 

মিয়াও নৃ-গোষ্ঠীর অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত মিয়াও সিস্টার্স ফেস্টিভ্যাল। এই জাতির নারীরাই মূলত এ উৎসবে অংশ নেয়।  

চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কুইচৌ প্রদেশের থাইচিয়াং কাউন্টিতে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব।  

 

জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত এই উৎসবটি মিয়াওদের ভালোবাসা দিবস হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী চীনা চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তৃতীয় চান্দ্র মাসের ১৫তম দিনে এই উৎসবটি শুরু হয়। 

এ উপলক্ষে ছিয়াংতংনান মিয়াও এবং তং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মিয়াওদের অংশ গ্রহণে একটি বৃহৎ কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক পরে দিবসটি উদযাপন করে মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর নারী ও শিশুরা।

এই উৎসব চলবে ৫ মে পর্যন্ত।

নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণে উৎসবটি জমজমাট হয়ে উঠেছে। নারীদের এ উৎসবে অংশ নিতে স্থানীয় পর্যটকরাও আসছেন। ফলে পর্যটনশিল্পেরও  উন্নয়ন হচ্ছে। 

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া 

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন ।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ