এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিচাং নিয়ে কথা বলব।
তিব্বতি ভাষায়, ‘সিসিয়াপাংমা’ মানে ‘ঠান্ডা জলবায়ু, কঠোর ও পরিবর্তনশীল আবহাওয়া’। এর নামকরণ থেকেই সিসিয়াপাংমা পর্বতশিখরের আবহাওয়া কতোটা বিরূপ তা আপনি কল্পনা করতে পারেন। এই তুষার শিখরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০১২ মিটার উপরে এবং এটি মাউন্ট এভারেস্ট থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এটি বিশ্বের ১৪টি ৮০০০ মিটার পর্যায়ের উচ্চ শিখরের মধ্যে ১৪তম স্থানে রয়েছে। এটি পুরোপুরি চীনের তিব্বতে অবস্থিত ৮০০০ মিটারের উচ্চতাসম্পন্ন বিখ্যাত শিখর।
‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখরের চূড়ার কাছাকাছি আরও দুইটি শৃঙ্গ রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা যথাক্রমে ৮০০৮ মিটার ও ৭৯৬৬ মিটার। এগুলো মূল শিখরের ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখর এলাকায় হিমবাহের বিশাল এলাকা রয়েছে। এখানকার হিমবাহের আয়তন প্রায় ৭৮৯ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ২৬টি উপত্যকা হিমবাহ রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটারের বেশি , এবং ১০টি উপত্যকা হিমবাহ রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটারের বেশি। সবচেয়ে বিখ্যাত হল ইয়েবোকাঙ্গাল হিমবাহ এবং শিগাত্সে অবস্থিত ডাকু হিমবাহ। ইয়েবোকাঙ্গাল হিমবাহটির দীর্ঘ ১২.৫ কিলোমিটার। পশ্চিমে ১৩.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দাকু হিমবাহ। অন্যান্য কয়েকটি বড় আকারের হিমবাহের মধ্যে রয়েছে ফুকু হিমবাহ, গেয়া হিমবাহ, ইত্যাদি।
অনেক হিমবাহ এবং খাড়া পর্বত রয়েছে বলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ থেকে ৫৮০০ মিটারের মধ্যে ‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সেরাক বনভূমি রয়েছে। এই এলাকার সেরাকগুলো কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এবং তাদের মধ্যে বড় ও ছোট সেরাকগুলো বিভিন্ন আকারের এবং সুন্দর। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবং উজ্জ্বল সূর্য নিচে নেমে গেলে, বরফের টাওয়ার বন অঞ্চলটি রূপালী আলোর প্রতিফলন ঘটনায় এবং আপনার মনে হবে আপনি একটি রূপকথার দেশে আছেন। এখানে দাঁড়িয়ে মহিমান্বিত ‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখর দেখলেই দেখা মিলবে অন্য এক অবর্ণনীয় ও অপূর্ব সৌন্দর্য।
‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখরের হিমবাহ
‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখরের উত্তরে রয়েছে ইয়েবোকাঙ্গাল হিমবাহ, যার দৈর্ঘ্য ১২.৫ কিলোমিটার, আয়তন ২০.০২ বর্গকিলোমিটার, এবং এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫৫৩০ মিটার (তুষার রেখা ৬০০০ মিটার উঁচু)।
যেভাবে যাবেন
লাসা থেকে চীন-নেপাল হাইওয়ে ধরে Gyantse ও Shigatse হয়ে সেগার পৌঁছানোর জন্য একটি বাস নিন, এর যাত্রা ৬৭০ কিলোমিটার। তারপর অব্যাহতভাবে পশ্চিমে যান এবং ৫০ কিলোমিটার পর দক্ষিণ দিকে যান, তার পর একটি সহজ রাস্তা অনুসরণ করে ‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখরের উত্তর দিকে পৌঁছাতে পারেন। ইয়েবোকাঙ্গাল হিমবাহটির উত্তর দিক হচ্ছে ‘ছুং ছি লুং’ পর্বত, যার উচ্চতা ৫১১৪ মিটার, যাকে আরোহণের বেস ক্যাম্প বলে অভিহিত করা হয়।
‘সিসিয়াপাংমা’ পর্বতশিখরের জলবায়ু সাধারণত মাউন্ট এভারেস্টের মতো। প্রতি বছর এপ্রিল, মে, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে, টানা দুই দিনের বেশি ভালো আবহাওয়া সাধারণত এক মাসে দুই থেকে তিন বার হতে পারে এবং তিন দিনের বেশি আবহাওয়া সাধারণত এক থেকে দুই বার হতে পারে। পর্বতারোহণের জন্য সময়টি ভালো।
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে সিচাং’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও সিচাংয়ের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মি/আলিম)