চতুর্থ চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক কেমন ছিল?
2024-04-23 16:41:28

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং ফিনান্সিয়াল ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকে, উভয়পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভীর মতবিনিময় হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ঐকমত্য হয়েছে।

এটি হল এপ্রিল মাসের শুরুতে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেনের চীন সফরের পর অনুষ্ঠিত দুই পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে উভয়পক্ষ দুই দেশের ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পাশাপাশি আর্থিক স্থিতিশীলতা, টেকসই অর্থ-উন্নয়ন, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছে। এবারের বৈঠক বহুপাক্ষিক কাঠামোর মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য উভয়পক্ষের অভিন্ন ইচ্ছা, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য তাদের যৌথ প্রচেষ্টাকে  প্রতিফলিত করেছে।

কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে এই বৈঠক থেকে কিছু ফলাফল পাওয়া গেলেও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা মনোযোগের দাবি রাখে। ‘ভারসাম্যমূলক প্রবৃদ্ধি’ শব্দটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতিকে প্রতিফলিত করে। চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির আমেরিকান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লুই শিয়াং বিশ্বাস করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে চীনের বাজারকে নিজের বিকাশের জন্য ব্যবহার করতে চায় তাই নয়, চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি এবং উচ্চতর উত্পাদন ক্ষমতার উত্থানকেও দমন করতে চায় দেশটি। এই দ্বিমুখী চীন-নীতি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠকের সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও চীনের ‘অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটি স্পষ্টতই আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের প্রচারের সাথে যুক্ত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের উত্পাদন শিল্প থেকে সমর্থন বা ভোট অর্জন করার একটি কৌশলী ‘মনোভাব’। কিন্তু এটি একটি হতাশাজনক বিষয়। কারণ, একদিকে, বলা হচ্ছে যে, চীনের নতুন শক্তি শিল্প সরকারী সহায়তার উপর নির্ভর করে, যার ফলে অতিরিক্ত ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের নতুন শক্তি শিল্পের বিকাশে সহায়তার জন্য সহায়ক নীতিগুলো ক্রমাগত চালু করছে।

চীন স্পষ্ট করে বলেছে যে, তথাকথিত ‘অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ সমস্যা আসলে চীনা সরকারের একতরফা নীতি নির্দেশনার পরিবর্তে শ্রম ও বাজার চাহিদার আন্তর্জাতিক বিভাজনের স্বাভাবিক ফলাফল। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া এবং সবুজায়নের দিকে উত্পাদন শিল্পের রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে চীনের নতুন শক্তির যানবাহন শিল্প বিকশিত হচ্ছে। চীনের নতুন শক্তি শিল্পের সুবিধাগুলো সরকারী ভর্তুকির পরিবর্তে বাজার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গঠিত হয়। তথাকথিত ‘উত্পাদন ক্ষমতা ইস্যু’ শুধুমাত্র চীনের নিজস্ব বাজারের চাহিদার উপর নির্ভর করে না, বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার আকারের উপরও নির্ভর করে। ‘অত্যধিক রপ্তানি পণ্য মানে অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ এই দৃষ্টিভঙ্গি অযৌক্তিক। চীনের নতুন জ্বালানি শক্তি শিল্পের বিকাশ বিশ্বব্যাপী সবুজায়ন ও নিম্ন-কার্বন রূপান্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ এর থেকে উপকৃত হবে।

এই বৈঠকের ফলাফল এবং ঐকমত্য দেখায় যে মতপার্থক্য সত্ত্বেও, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র এখনও আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে ইচ্ছুক। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সংকটময় সময়ে, দু’পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা বিশ্ববাজারকে স্থিতিশীল করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেয়ার জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।

চীন সবসময় বিশ্বাস করে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে সংলাপ জোরদার করা উচিত, পার্থক্যগুলো বিচক্ষণতার সাথে পরিচালনা করা উচিত, পারস্পরিক কল্যাণের চেতনায় সহযোগিতাকে উন্নীত করা উচিত এবং দায়িত্বের সাথে আন্তর্জাতিক সমন্বয় জোরদার করা উচিত। বিশ্বাসযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে, আমাদের নিজ নিজ প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেবল তার মাধ্যমেই ‘সান ফ্রান্সিসকো ভিশন’কে ‘বাস্তবতায়’ রূপান্তরিত করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতায় চীন এটিই করে আসছে। আশা করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক হবে এবং এই সহযোগিতাকে সত্যিকার অর্থে ফলপ্রসূ ও কার্যকর করবে।

(স্বর্ণা/হাশিম/ছাই)