বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের আলোচনা: মানুষ কীভাবে পৃথিবী রক্ষা করবে
2024-04-23 16:24:35

এপ্রিল ২৩: ৫৫তম বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ছিল গতকাল (সোমবার)। মানুষের বসবাসের একমাত্র স্থান হিসেবে বর্তমান পৃথিবী বিভিন্ন গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে: বিশ্বের উষ্ণায়ন, বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে উঠছে, বিপুল সংখ্যক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, বায়ু ও রাসায়নিক দূষণ ভূমি, সাগর ও মানুষের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমরা নিজেদের অভিন্ন আবাসস্থল রক্ষার জন্য কী কী করতে পারি? জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি প্লাস্টিকের উপর নির্ভরতা কমানো, সবুজ যাতায়াত, সঠিকভাবে গাছ লাগানোসহ বৈশ্বিক পরিবেশ বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য ৫টি কর্ম নির্দেশনা দিয়েছে।

বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা মেরামত

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ২ বিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি জমি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং ২০০০ সাল থেকে খরার সংখ্যা ও সময়কাল ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমি পুনরুদ্ধার, মরুকরণ মোকাবিলা এবং খরা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের প্রকাশিত ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার হ্যান্ডবুক: পৃথিবীকে নিরাময় করার ব্যবহারিক গাইড’-এ বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের ৮টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এ সব বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা হল: বন, কৃষিভূমি, তৃণভূমি ও সাভানা, নদী ও হ্রদ, মহাসাগর ও উপকূল, শহর ও জেলা এবং পাহাড় ও পিটল্যান্ড।

হ্যান্ডবুকে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অংশ নেওয়ার জন্য ব্যক্তিদেরকে অনেক পরামর্শ দেওয়া হয়, যেমন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পার্ক, সৈকত, হ্রদ ইত্যাদি প্রাকৃতিক এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া; বাড়ি, স্কুল বা অফিসের সবুজায়নের সময়ে স্থানীয় উদ্ভিদ ব্যবহার করা; অনলাইন কার্যক্রম আয়োজন করে বাস্তুতন্ত্রের মূল্য ও হুমকি নিয়ে আলোচনা করা ইত্যাদি।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কথা বলুন

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে না কমলে এই শতাব্দীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, পৃথিবী এখন জরুরি অবস্থায় রয়েছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির উদ্যোগে কার্যক্রম ‘এখন ব্যবস্থা নিন, কথা বলুন’ দেখায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য মানুষ কীভাবে সরকার ও কোম্পানিগুলোকে সংস্কার করার তাগিদ দেয়। এই কার্যক্রম জলবায়ু সম্পর্কিত প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরে।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক মোকাবিলা

বর্তমানে প্লাস্টিক ব্যাপকভাবে পোশাক, গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি, খেলনা, খাদ্য প্যাকেজিং, চিকিত্সা সরঞ্জাম ইত্যাদি জিনিসে রয়েছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপর মানুষের নির্ভরতা পৃথিবীর জন্য বিপর্যয়কর। এ সব প্লাস্টিক ধ্বংস করতে হাজার বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। প্রতি বছর মানুষ ৪৩০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উত্পাদন ও ভোগ করে, এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, যা হ্রদ, নদী, মাটি ও সাগরকে দূষিত করছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির পরামর্শ হল একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, বিদ্যমান পণ্য পুনর্ব্যবহার করা, অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো।

বায়ু দূষণ দূর করা

বায়ু দূষণ বর্তমান সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে একটি। এ কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিয়ন অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি বায়ু দূষণ পরিবেশের ক্ষতি করছে, মহাসাগরের অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে, জলবায়ু সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির পরামর্শ হল পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা, ভ্রমণের সময় কম দূষণকারী উপায় বিবেচনা করা।

সঠিকভাবে গাছ লাগানো

বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে বনায়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভুল জায়গায় ভুল গাছ লাগানো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি বলে, যেখানে বনভূমি ছিল, সেখানে গাছ লাগানো ভালো। স্থানীয় গাছের প্রজাতি বেছে নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, এ সব গাছ স্থানীয় জলবায়ু ও মাটির সঙ্গে খাপ খায় এবং স্থানীয় জীববেচিত্র্যকে সমর্থন করতে পারে।

(তুহিনা/হাশিম)