এপ্রিল ২২: ১২তম ইরাক আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী গত শনিবার বাগদাদের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে। এবারের প্রদর্শনীতে চীন, ফ্রান্স, পাকিস্তান, ইরানসহ ১৯টি দেশের ১১২টি সামরিক নিরাপত্তা ও বেসামরিক সরঞ্জাম কোম্পানি অংশ নিয়েছে। ৪ দিনের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো আসল অস্ত্র ও সরঞ্জাম এবং মডেল ও ভিডিওর মাধ্যমে এসব প্রদর্শন করে।
এবারের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে চীনের সবচেয়ে বেশি ১৩টি কোম্পানি রয়েছে। এ সব চীনা কোম্পানি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার, ড্রোন ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শন করে, যা ঐতিহ্যবাহী ও উদীয়মান প্রতিরক্ষার সব ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
চীনের প্রদর্শনী এলাকায় দেখা যায়, চীনের নিজস্ব নকশা ও প্রযুক্তিতে তৈরি ভিএন২২ চাকাযুক্ত সাঁজোয়া গাড়ি। এই চাকাযুক্ত সাঁজোয়া গাড়ি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রে প্ল্যাটফর্ম বহন করতে পারে, যা সেনাবাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনীর অভিযানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এমন সাঁজোয়া গাড়ি প্রথমবারের মত বাদগাদদে প্রদর্শিত হচ্ছে।
চায়না নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ছেন সিয়াং ইয়ু জানান, এবারের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে তাদের ৩টি প্রতিপাদ্য আছে, তা হল: আকাশ পাহারা দেওয়া, শান্তি রক্ষা করা এবং উন্নয়নে সাহায্য করা। এবার তারা প্রদর্শন করেন সর্বশেষ সার্বিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী অস্ত্র, স্মার্ট গোলাবারুদ, আর্মার, অ্যান্টি-আর্মার এবং মানববিহীন সরঞ্জাম ইত্যাদি, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সার্বিক ও ওয়ান-স্টপ সুবিধা দিতে পারে। ইরাক যুদ্ধ করেছে এবং দেশটির অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা বিবেচনা করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীনা কোম্পানি ওয়ান-স্টপ সলিউশনের ভিত্তিতে ইরাককে প্রতিরক্ষা শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। আরো নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইরাক প্রতিষ্ঠায় সাহায্য এবং, আঞ্চলিক শান্তি স্থিতিশীলতার জন্য অবদান রাখতে ইচ্ছুক চীন।
২০১৪ সালের জুনে চরমপন্থি সংগঠন আইএস ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করার পর গত ১০ বছরের মধ্যে ইরাকের পরিস্থিতি অব্যাহত সংঘাত ও যুদ্ধ থেকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ও পুনর্গঠনের দিকে যাচ্ছে। সহিংস চরমপন্থী কার্যকলাপের পুনরুত্থান রোধ করার জন্য সামরিক নির্মাণ জোরদার, সন্ত্রাসবাদ দমনের দক্ষতা বৃদ্ধি বর্তমান ইরাকি সামরিক বাহিনীর প্রধান উন্নয়ন লক্ষ্য। প্রদর্শনী চলাকালে ইরাকের সামরিক শিল্পের প্রধান প্রশাসনের মহাপরিচালক মোস্তফা আতি হাসান চীনের সঙ্গে সহযোগিতার প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত এই ধরনের প্রদর্শনী বিশ্বের আধুনিক সামরিক শিল্প কোম্পানির প্রযুক্তিগত অর্জনগুলো জানার একটি জানালা। চীন ও ইরাকের সামরিক শিল্প খাতের ভালো বোঝাপড়া ও পারস্পরিক আস্থা রয়েছে। হালকা ও মাঝারি অস্ত্র ও সাঁজোয়া গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে চীনের সামরিক কোম্পানির সঙ্গে ভালো সহযোগিতা রয়েছে ইরাকের। যুদ্ধের পর চীনা কোম্পানিগুলো ইরাকের শিল্প পুনরুদ্ধারে বড় অবদান রেখেছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চীনা সামরিক কোম্পানির সমর্থনে ইরাক আরো বেশি সামরিক প্রকল্প চালু করতে পারে।
ইরাকি সামরিক শিল্প কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক আলী মহসিন হুদেল বলেন, বর্তমান ইরাক ও চীন অব্যাহত সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনা সামরিক পণ্য উপযোগী, অসামান্য এবং তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলে। সামরিক পণ্য, সামরিক শিল্পায়নের ভিত্তি, যা জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের সামরিক ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়ক। ইরাকি সসশস্ত্র বাহিনী এই দিকটিতে উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
(তুহিনা/হাশিম)