মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে চায় চীন
2024-04-22 14:38:02

মেলা হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক ও প্রদর্শনী জানালা। চীনে বছরব্যাপী অসংখ্য মেলা আয়োজন করা হয়। এ সব মেলা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা পালন করে। এ বছরে চীনের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়ে দেশী-বিদেশি বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেতু গড়ে তোলে এবং সুবিধাজনক ব্যবস্থা প্রদান করে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয়টি তুলে ধরবো।

চতুর্থ চীন আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলা গত সোমবার হাইনান প্রদেশে শুরু হয়েছে। বিশ্বের ৭১টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ হাজারের বেশি ব্র্যান্ড এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলাটি চীনা অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি গণমাধ্যমগুলো মনে করে, এটি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। চীনের প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলো অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, চীনা অর্থনীতি অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে এবং এর অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তিও বাড়ছে।

চীনা জাতীয় তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত মার্চে দেশের বিনিয়োগ সূচক আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে এবং বৃদ্ধির এ গতি দ্রুত।

বড় এবং ভালো বাজার হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে কাঙ্খিত উপাদান। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীনের বিশাল আকারের বাজার মানে যথেষ্ট আয়। বর্তমান চীন মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার থেকে বেরিয়ে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভোগের অবদান ছিল ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এপ্রিল মাসে চীনের খুচরা শিল্পের সমৃদ্ধি সূচক হলো ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। জার্মান ক্লিনিং ব্র্যান্ড কার্চার জানায়, চীনে প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ পণ্যের বিক্রি প্রতি বছর বাড়ছে।

১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া চীনের আমদানি ও রপ্তানি পণ্যমেলা তথা কুয়াংচৌ মেলা, অনলাইন ও অফলাইনে, তিন দফায় চলবে ৫ মে পর্যন্ত। এবারের মেলাস্থলের আয়তন ১৫.৫ লাখ বর্গমিটার, প্রদর্শনী স্টল প্রায় ৭৪ হাজারটি, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার। এটি মেলার নতুন রেকর্ড। এবারের কুয়াংচৌ মেলায় ৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ১৯৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিষ্ঠানের হার ৭৪ শতাংশ। এবারের মেলায় প্রথম বারের মত অন্তঃদেশীয় ই-কমার্স ও বিদেশী গুদাম প্রদর্শন ক্ষেত্র স্থাপিত হয়েছে। এতে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও ২০৫টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা মেলাটিতে অংশগ্রহণ করেন, এটি গত বারের মেলার চেয়ে ১৮.৫ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি চীনের সাধারণ শুল্ক বিভাগের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ১০.১৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। এটি ছয় প্রান্তিকের নতুন রেকর্ড, যা চীনের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে।

চীনের বড় বাজার, বিশ্বের জন্য বড় সুযোগ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলা আয়োজনের প্রেক্ষাপট হলো চীনের উন্মুক্তকরণ নীতি। ভোগ-প্রবণতা বাড়াতে মেলাগুলো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে এবং সুবিধাজনক নীতির সমর্থনে চীন বিশ্বের সাথে উন্নয়নের সুযোগ ভাগাভাগি করতে চায়। চীন নিজের বাজারকে বিশ্বের বাজারে রূপান্তরিত করতে চায় এবং চীনা উন্নয়নের মুনাফা শেয়ার করতে চায়। চীনা বাজার অবশ্যই বিশ্বের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য আরো বেশি চালিকাশক্তি ও সুপ্তশক্তি এনে দেবে।

(ছাই/হাশিম)