বসন্তের আগমনের সাথে সাথে, উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে সর্বোচ্চ পর্যটন মৌসুম শুরু হতে চলেছে৷ কৃষিভিত্তিক অঞ্চলের গ্রাম থেকে শুরু করে শহুরে কারখানাগুলো পর্যন্ত সর্বত্র, ঐতিহ্যবাহী সিচাং (তিব্বতি) সাংস্কৃতিক পণ্য, যেমন চকচকে রূপা, তামা কিংবা ব্রোঞ্জের গয়না ও পাত্র, এবং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তিব্বতি কার্পেট তৈরির বিরাম নেই।
ওয়াং ফুবাং, একজন জেলা-স্তরের ‘রৌপ্য এবং তাম্রপাত্র তৈরি এবং গিল্ডিং দক্ষতার’ উত্তরাধিকারী এবং কারিগর। প্রায় ৩০ বছর ধরে রৌপ্য এবং তামার গয়না তৈরি করছেন, মঙ্গোলিয়া থেকে সাম্প্রতিক একটি অর্ডারের জন্য তিনি দিনরাত কাজ করছেন।
ওয়াং সিলভার এবং তামার পাত্রে গিল্ডিং কৌশলের জন্মস্থান জিনিং সিটির ইয়াংপো গ্রামে বাস করেন। বিখ্যাত তিব্বতি বৌদ্ধ মন্দির কুম্বুম মঠের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে, ১০০ বছরেরও বেশি আগে রূপা ও তামার কারিগররা এখানে বসতি গড়েছিলেন। গ্রামটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে কারণ ‘প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব ওয়ার্কশপ ছিল।’
ওয়াং বলেন, স্বল্প উৎপাদন এবং পরিচিতি না থাকার কারণে তিনি একটি সম্পূর্ণ শিল্প তৈরি করতে পারেননি। তার পণ্য অতীতে শুধুমাত্র প্রদেশে এবং তার বাইরে বিক্রি হত।
বিগত কয়েক বছরে, জাতীয় গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে, কারুশিল্প উৎপাদনের জন্য গ্রামে ৯০ ম্যু’র (৬৩ হাজার বর্গমিটার) বেশি এলাকা নিয়ে একটি ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। ৪০০টিরও বেশি পরিবার বা প্রায় ৪০ শতাংশ গ্রামবাসী ব্যবসায়িক মডেল ‘জয়েন্ট-স্টক কো-অপারেটিভ-বেস-ফার্মার্স"-এ যোগ দিয়েছে। ওয়াং এর পণ্য ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা অর্জন করায়, তিনি মঙ্গোলিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং অন্যান্য জায়গা থেকে অর্ডার পেয়েছেন।
হান এবং থাং রাজবংশের প্রথম দিকে, চীনা-পাত্র পশ্চিমে সিল্ক রোড ধরে মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং এমনকি ইউরোপেও পরিবহন করা হয়েছিল।
কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্রের জাতীয় জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতাত্ত্বিক বিভাগের একজন সিনিয়র গবেষক রুসলান দুভানবেকভ সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, দক্ষিণ কাজাখ শহর তারাজ এবং তুর্কেস্তানে চীন থেকে আনা বেশ কয়েকটি তেলের বাতি পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে তিনটি প্রদীপ বর্তমানে জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রয়েছে। "চীনা তেলের বাতিগুলো ভাল মানের উপকরণ থেকে তৈরি করা হয়েছিল, টেকসই এবং খুব উচ্চমানের কারুকার্য ছিল এগুলোতে।
২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালু হওয়ার পর থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রাচীন সিল্ক রোডের দক্ষিণ রুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিংহাই প্রদেশকে দেওয়া সুযোগগুলোকে পুঁজি করেছে৷ মালভূমির বৈশিষ্ট্যসহ এখানকার বেশ কিছু আইকনিক পণ্য দেশে এবং বিদেশে বিখ্যাত।
চিয়াইয়া গ্রামের তিব্বতীয় কার্পেটের অবৈষয়কি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে উত্তরাধিকারী ইয়াং ইয়ংচু ১৩ বছর বয়সে তার বাবার কাছ থেকে কারুশিল্প শিখেছেন। তিনি জানান, তাদের গ্রামটি ছিং রাজবংশের সময়কাল থেকে তিব্বতি কার্পেটের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। পশম নির্বাচন করা, উল ধোয়া, সুতা পাকানো এবং বোনা, এগুলো ব্যাপক পরিশ্রমলব্ধ মৌলিক দক্ষতা। বহু বছর প্রশিক্ষণের পরই তিনি তার পরিবারের সপ্তম প্রজন্মের কার্পেট তাঁতিতে পরিণত হন।
ইয়াং পারিবারিক কারখানা থেকে বড় আকারের উৎপাদন এবং তারপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিব্বতি কার্পেটের যাত্রা প্রত্যক্ষ করতে পেরে গর্বিত।
২০০৪ সাল থেকে, ছিংহাই বার্ষিক আন্তর্জাতিক তিব্বতি কার্পেট প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে তিনি একবার তার চমৎকার তিব্বতি কার্পেট বুনন দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। ২০০৬ সালে, তিব্বতি কার্পেট থেকে চিয়াইয়া গ্রাম চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শীর্ষ-স্তরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০০৭ সালে, শেংইউয়ান কার্পেট গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ইয়াং কোম্পানিটির প্রসারে ভূমিকা রাখেন।
ইয়াং বলেন, “ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি কার্পেটের নিদর্শনগুলো শুভ মেঘ, পদ্মের নিদর্শন এবং জলের ঢেউয়ের মতো উপাদানগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়।”
বর্তমানে, শেংইউয়ান কার্পেট গ্রুপ তিব্বতি কার্পেট উত্পাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং এর সর্বোচ্চ বাজার শেয়ার রয়েছে। যেহেতু ছিংহাইতে পর্যটন ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং একের পর এক দেশি ও বিদেশী অর্ডার আসছে, কোম্পানিটি গত দুই বছর ধরে পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে।
শেংইউয়ান কার্পেট গ্রুপের চেয়ারপার্সন শুয়ে থিং বিশ্বাস করেন যে তিব্বতি কার্পেটের একটি বিশাল বাজার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ বিআরআই সংশ্লিষ্ট অনেক দেশ এবং অঞ্চলে কার্পেট ব্যবহারের চল রয়েছে। শেংইউয়ান গ্রুপের পণ্য বর্তমানে সৌদি আরব, রাশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।