বিজ্ঞানবিশ্ব ৬৭তম পর্ব
2024-04-21 20:29:49


চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৬৭তম পর্বে যা থাকছে:


* শুকরের কিডনি মানব দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন

* মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের ভবিষ্যদ্বাণী

* প্রাচীন প্রবালের জীবাশ্ম আবিষ্কার


শুকরের কিডনি মানব দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন

কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। জিনগতভাবে পরিবর্তিত শুকরের কিডনি মানব দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছে তারা।

সিচিং হাসপাতালের অধ্যাপক ছিন ওয়েইচুনের নেতৃত্বে এবং অধ্যাপক তৌ কেফেং এর নির্দেশনায় গত মার্চ মাসে সফল এ অস্ত্রেপচারটি সম্পন্ন হয়। চীনে এবারই প্রথম শুকরের কিনডি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা হলো।

 

ইউরোলজি, লিভার-পিত্ত নালীর শল্যচিকিৎসা, এনেসথেসিয়োলজিসহ হাসপাতালের ২১টি বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সফল প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। সফল অস্ত্রাপচারের পর প্রতিস্থাপিত কিডনিটি নয়দিন ধরে সঠিকভাবে কাজ করছে।

এ ধরনের অস্ত্রোপচার ‘জেনোট্রান্সপ্লাটেশন’ নামে পরিচিত। জেনোট্রান্সপ্লাটেশন হলো এক প্রজাতির জীব দেহ থেকে সুস্থ অঙ্গ নিয়ে অন্য প্রজাতির জীব দেশে প্রতিস্থাপন।

শেষ ধাপের রেনাল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই গবেষণাটি আশার আলো দেখাচ্ছে।

অ্যলোজেনিক রেনাল প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা রোগীদের জন্য অঙ্গের ঘাটতি একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি এবং জেনোট্রান্সপ্লাটেশন এ ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে।

 

ছেংতু ক্লোনঅর্গান বায়োটেকনোলজি কম্পানি লিমিটেড দাতা শূকরটি সরবরাহ করেছে। মানবদেহে শূকরটির কিনডি প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি কমাতে জিনগত রূপান্তর করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মস্তিষ্ক-নিষ্ক্রিয় ওই রোগীর পরিবার স্বেচ্ছায় এই অগ্রণী গবেষণায় অংশগ্রহণ করে।, তাদের নিষ্ঠা প্রদর্শন করে।

এই সাফল্যটি কিডনি রোগীদের জন্য একটি বড় আশার আলো। বর্তমানে, কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করার সময় অনেক দীর্ঘ এবং অনেক রোগী প্রতিস্থাপন পাওয়ার আগেই মারা যান। জেনোট্রান্সপ্লাটেশন অসংখ্য জীবন বাঁচানো সাহায্য করবে। তবে, এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছেম তবেই এটি ব্যপকভাবে কার্যকর হবে।

অঙ্গ প্রতিস্থাপনই হলো আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের সেরা আবিষ্কার। এ পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত কিডনি, হৃপিণ্ড, ত্বক, হাত, অস্থিমজ্জা, যকৃত, ফুসফুস, ককলিয়া, কর্নিয়া, লিগামেন্টসহ আরও বেশকিছু অঙ্গ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ


মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের ভবিষ্যদ্বাণী


অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফ পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, মহাসাগরীয় প্রবাহ এবং সূর্যের আলো প্রতিফলিত করার  ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই বরফ দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে। এর ফলে বিরূপ পরিণতি দেখা দিতে পারে। এই হ্রাসের হার ভবিষ্যতে কতটা হবে তা পূর্বাভাস দেওয়া জটিল। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এই জটিল কাজটি করে দেখালেন চীনা গবেষকরা।

 

ডিপ লার্নিং বা মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে চীনা বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের বিষয়ে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হয়েছেন। এই গবেষণাটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে এবং ভবিষ্যতের পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমোসফেরিক সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয় এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল।

সুন ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুয়াংতোংয়ের দ্য সাউদার্ন মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরির একদল গবেষক এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষক দলটি গত ডিসেম্বরে তাদের পূর্বাভাসের ফলাফল জমা দেন। এ গবেষণা দলটি বরফের পূর্বাভাস মডেল তৈরি করতে কনভোলিউশানাল লং শর্ট-টার্ম মেমোরি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছেন।

 

তাদের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যান্টার্কটিক সাগরের বরফ নিম্ন স্তরেই ছিল, তবে রেকর্ডের সর্বনিম্ন মাত্রায় নামেনি। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সমুদ্র বরফ অঞ্চল এবং বরফের পরিমাণের পূর্বাভাস ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এবং ২ দশমিক ১০ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। তাদের পূর্বাভাসটি স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও যাচাই করা হয়। 

গবেষকদের মতে, পূর্বাভাস ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে তুলনা করে দুটোর মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। এই মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমটির মাধ্যমে বরফের পরিমাণের উপর প্রভাব ফেলে এমন বিভিন্ন কারণ, যেমন সমুদ্রের তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, এবং বাতাসের গতি, বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ অ্যালগরিদমটি ভবিষ্যতের বরফের পরিমাণ সম্পর্কেও সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে।

এই গবেষণাটি মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এটি দেখায় যে মেশিন লার্নিং জলবায়ু বিজ্ঞানের জটিল সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে, আমরা মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে আরও অনেক জলবায়ু-সম্পর্কিত ঘটনা, যেমন ঝড়, বন্যা এবং খরা, ভবিষ্যদ্বাণী করার আশা করতে পারি।



|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ


প্রাচীন প্রবালের জীবাশ্ম আবিষ্কার

চীনের হুবেই প্রদেশের ইউনসি কাউন্টির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ছিনলিং পর্বতমালায় প্রচুর পরিমাণে ঐতিহাসিক দেবোনিয়ান যুগের প্রবালের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন একদল চীনা গবেষক। প্রবালের জীবাশ্মগুলো প্রায় ৪০ কোটি বছর আগের।

 

এ আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং পৃথিবীর অতীতের জলবায়ু এবং পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

গবষেকদের ধারণা এক সময় ছিনলিং পর্বতমালা সমুদ্রের গভীরে নিমজ্জিত ছিল, যা বর্তমানে বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

হুবেই প্রদেশের ভূ-বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষণা দলটি গত মার্চ মাসের শেষের দিকে এ আবিষ্কারটি করে।

জীবাশ্ম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক এবং হুবেইয়ের প্রাদেশিক জীবাশ্ম কমিটির সদস্য চাও বি জানান, প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ কোটি বছর আগের দশটিরও বেশি প্রজাতির প্রবাল শনাক্ত করা হয়েছে। এই জীবাশ্মগুলো অধ্যয়ন করে পৃথিবীর তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে তা জানা যাবে। এটি অতীতে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

৩০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি অঞ্চলজুড়ে প্রবালের এসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কারটি প্রমাণ করে যে, প্রায় ৩৬ কোটি বছর পূর্বে ছিনলিং পর্বতমালা এক সময় সমুদ্রের নিচে নিমজ্জমিত ছিল এবং সেখানে প্রাচীন প্রবাল প্রাচীর ছিল।

এই আবিষ্কারগুলো ছিনলিং পর্বতমালার উৎপত্তি ও বিবর্তনের রহস্য এবং দেবোনিয়ান পিরিয়ডের ভূতত্ত্ব অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন তথ্য জানা যাবে।


|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ


নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।


প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার


অডিও সম্পাদনা- নাসরুল্লাহ রাসু


স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী