কালো জমিতে নতুন কৃষক
2024-04-19 16:10:00

বসন্তকালে সারা বছরের পরিকল্পনা করতে হয়। ভোর সকালে চীনের হেই লুং চিয়াং প্রদেশের সুই হুয়া শহরের লুং শান গ্রামের একটি নদীর ধারে মাছের পুকুরে গ্রামটির সিপিসি’র সম্পাদক কুও ইয়ু বিন ও গ্রামবাসীরা বরফ ভেঙে মাছ ধরতে ব্যস্ত রয়েছেন।

কুও ইয়ু বিন উত্তেজিত হয়ে আমাদের সাংবাদিককে বলেন, “অর্ডার তুষারের মতো আসে। চীনের বসন্ত উত্সবের আগে থেকে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্রাম পাইনি।”

 

লুং শান গ্রামে রয়েছে সমৃদ্ধ সম্পদ। নি নদী গ্রাম ঘিরে বয়ে গেছে। আগে গ্রামবাসী পুকুরকে ধানের ক্ষেত হিসেবে ব্যবহার করতো। তবে তা থেকে আয় বেশি ছিল না। আয় বৃদ্ধি করতে কুই ইয়ু বিন গ্রামবাসীদের নিয়ে পালাক্রমে মত্স্য ও ধান চাষ শুরু করেন। তার পরিচালনায় ২২ পরিবার মত্স্য চাষে যোগ দিয়েছেন এবং ঠান্ডা পানির মাছের খামার প্রতিষ্ঠা করেছে। মত্স্য পণ্য বেইজিং, কুয়াং তোং ও সি ছুয়ান প্রদেশ পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। যা থেকে বার্ষিক মুনাফা ছিল ৩৭ লাখ ইউয়ানেরও বেশি। কুও ইয়ু বিন চাষী থেকে নতুন ধরণের কৃষকে পরিণত হয়েছেন।

চীনের গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের নীতি প্রবর্তনের পরে অনেক দক্ষ কৃষক প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীলতার সমর্থনে ধীরে ধীরে সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং ব্যবসা ভালো জানেন এমন নতুন ধরণের কৃষকে পরিণত হয়েছে, যা গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। 

চীনের তা ছিং শহরের লিন হোং ছি উপজেলার একটি প্রক্রিয়াজাত কারখানায় চাং সি তোং গ্রামবাসীদের কাছে লাইভে পণ্য বিক্রি করছেন। “আত্মীয়রা, রুটি খেতে চান, তবে ময়দা থেকে রুটি তৈরি করতে না চান, তাহলে আমার লাইভে রুটি কিনুন। ভালো রুটি পাওয়া যাবে এবং দ্রুত পাঠানো হয়।”

চাং সি তোং’র বয়স ৪০ বছর। তার পুর্বপুরুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে হোং ছি উপজেলার সিয়ান ফেং গ্রামে বাস করেন। গ্রামে প্রত্যেকের আবাদি জমির পরিমাণ ০.৩ হেক্টরের চেয়ে কম।  তিনি চাইনিজ ভেষজ ওষুধ এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ করেছেন, কিন্তু কয়েক বছর চেষ্টা করেও তেমন সফলতা পাননি।

চাং সি তোং বলেন, “ই-কমার্সের উত্তাপের কারণে আমার নতুন ধারণা হয়েছে।” এক বছরের বেশি সময় ধরে শেখার পর তিনি রুটি তৈরির পদ্ধতি আয়ত্ত করেছেন। ২০২০ সালে তিনি ১০ জনেও বেশি নারীকর্মী নিয়ে রুটি তৈরি শুরু করেন। লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে বাজার উন্মোচন করেছেন এবং লক্ষণীয় মুনাফা অর্জন করেছেন চাং সি তোং। 

বর্তমানে চাং সি তোং’র সৃষ্ট ‘চিন সিং ইয়ে’ নামের ব্র্যান্ডের রুটির বাজারে ভালো কাটতি। দিনে তিনি চার শ’র মতো অর্ডার পান। বছরে তিনি ১ কোটি রুটি বিক্রি করেন, যা থেকে ৩০ লাখের বেশি আয় করা সম্ভব  হয়েছে। ৩০ জনের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বার্ষিক ৩০ হাজার ইউয়ান উপার্জন বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লেই লুং চিয়াংসহ নানা প্রদেশ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশক্ষিণের মাধ্যমে কৃষকদের মাটি বিশেষজ্ঞ বানিয়েছেন।

ছি ছি হা’এর শহরের কান নান উপজেলার চু হোং গ্রামে কৃষক ইয়ুন চুং কুও বসন্তকালীন বপনের জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে উপজেলায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বসন্তকালীন বপনের জন্য কেনাকাটা করায় তিনি অভ্যস্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “উপজেলায় প্রশিক্ষণ ক্লাসে অংশ নিতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। সেখান থেকে আমি অনেক বপন ও পরিচালনার প্রযুক্তি শিখেছি।”

এখন তিনি একজন সাধারণ কৃষক থেকে সমবায় প্রতিষ্ঠান পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। ২০১৯ সালে ইউয়ান চুং কুও’র সমবায় প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি ট্রাস্ট ব্যবস্থাপনা শুরু করে। গ্রামবাসীরা যারা শেয়ার নিয়েছেন তারা বড় আকারের ভূমি ব্যবস্থাপনার ভালো ফল পেয়েছেন। এই বছর, সমবায় ৩ হাজার ৬৬৬ একর জমির জন্য একটি ট্রাস্ট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বর্তমানে তাদের জীবন দিন দিন উন্নত হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কান নান উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৪ হাজার জনের বেশি নতুন ধরণের কৃষককে লালন করেছে। ২ লাখ স্থানীয় কৃষকের জন্য সেবা প্রদান করেছে সংস্থাটি।

(রুবি/হাশিম)