১৪তম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান অতিথি দেশ ব্রাজিল
2024-04-18 15:19:45

১৮ এপ্রিল শুরু হওয়া ১৪তম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের প্রধান অতিথি দেশ ব্রাজিল। ব্রাজিলিয়ান চলচ্চিত্রের ইতিহাস ১৮৯৬ সালে শুরু হয়। ইতিহাসের পরিক্রমায় ব্রাজিলিয়ান চলচ্চিত্রগুলো লাতিন আমেরিকান সংস্কৃতির সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য উপাদানের প্রভাবকে ক্রমাগত গ্রহণ করেছে। প্রথম দিকে ব্রাজিলিয়ান চলচ্চিত্রগুলো প্রধানত ডকুমেন্টারি এবং শর্ট ফিল্ম আকারে শুরু হয়েছিল এবং তারপর ১৯৫৯ সালে (Marcel Camus) মার্সেল কামুসের পরিচালিত (Orfeu Negro) ওর্ফেউ নেগ্রো’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পামে ডি'অর, অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোবের সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে। ২০১৬ সালে পরিচালক ক্লেবার মেন্ডোজা ফিলহো’ ‘অ্যাকোরিয়াস’ এবং ২০১৯ সালে ‘বাকুরাউ’-এর মাধ্যমে তার আন্তর্জাতিক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রাজিলিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের অনন্য ভিজ্যুয়াল শৈলী ও সংগীত উপাদান এবং বর্ণনামূলক কাঠামোর অভিব্যক্তি ব্যবহার করে যুগে যুগে ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং দেশটির মানবতাবাদী চেতনা তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলের চলচ্চিত্র শিল্পের শক্তিশালী সম্ভাবনাকে প্রসারিত করেছেন।

২০২৪ সালে চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে মানবিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চীন ও ব্রাজিলের আদান-প্রদান ও সহযোগিতা জোরদার করা, দুই দেশের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর করা এবং একই সাথে বেইজিং চলচ্চিত্র উৎসবের আন্তর্জাতিক প্রভাবকে আরও সম্প্রসারণ করা ও আরো সার্বিক, উচ্চ ও বৈচিত্র্যময় আন্তর্জাতিক বিনিময় প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করার জন্য এই বছরের বেইজিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ব্রাজিলকে প্রধান অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং চীনে নিযুক্ত ব্রাজিলের দূতাবাসের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন আকর্ষণীয় কার্যক্রমের আয়োজনও থাকবে।

চীনা এবং বিদেশী চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যে আদান-প্রদান ও সহযোগিতাকে আরও গভীর করা এবং বেইজিং চলচ্চিত্র উৎসবের আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়ানোর জন্য ২০২১ সাল থেকে বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব প্রধান অতিথি দেশ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রতি বছর একটি দেশ বা অঞ্চলকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং ধারাবাহিক সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই দেশ বা অঞ্চলের চলচ্চিত্র সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়, উভয়পক্ষের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিনিময় ও বোঝাপড়ার প্রচার করা এবং আন্তর্জাতিক বাজার ও সহযোগিতার সুযোগ প্রসারিত করা যায়। গত তিন বছরে বেইজিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল যথাক্রমে গ্রিস, আর্জেন্টিনা এবং থাইল্যান্ডকে প্রধান অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, অতিথি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীকে বেইজিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ‘থিয়েনথান পুরস্কারের’ আন্তর্জাতিক জুরি হিসেবে প্রধান অতিথি দেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রধান অতিথি দেশের চলচ্চিত্র সপ্তাহের কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। ‘প্রধান অতিথি দেশ’ প্রকল্প শুধুমাত্র দেশি-বিদেশী চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিনিময়ের সেতু তৈরি করে না, বরং সাংস্কৃতিক কূটনীতির একটি সুদূরপ্রসারী মিশনও বহন করে, ফলে, দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের গভীর সংলাপ ও সহযোগিতায় চীনা চলচ্চিত্র শিল্পের বৈচিত্র্যময় বিকাশ ও প্রাণবন্ত সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব হবে।

২০২৩ সালের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল চীন সফর করেন। দুই দেশ যৌথভাবে চীন-ব্রাজিল ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীর করার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছেছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন ও ব্রাজিল যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান বাজারের দেশ। তাদের ব্যাপক সাধারণ স্বার্থ রয়েছে এবং উভয়পক্ষকে নিয়মিত কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রাখা, বাস্তব সহযোগিতা আরও গভীর করা, বিদ্যমান প্রধান সহযোগিতা প্রকল্পের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, মানবিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান ও সহযোগিতা ঘনিষ্ঠতর করা এবং চীন-ব্রাজিলের বন্ধুত্বের বেসরকারি ভিত্তিকে সুসংহত করা উচিত্। ‌

এবারের বৈঠকে ‘টেলিভিশন সহ-উৎপাদনের বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার এবং ফেডারেল রিপাবলিক অফ ব্রাজিল সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা উভয় দেশের বিনোদন এবং অডিওভিজ্যুয়াল ক্ষেত্রে আদান-প্রদান ও সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

চীন ও ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও সহযোগিতা গভীরতর করতে এবারের বেইজিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ব্রাজিলের সংস্কৃতি মন্ত্রী মার্গারেথ মেনেজেসকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি ১৮ এপ্রিলে বেইজিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বক্তৃতা দেবেন এবং চীন-ব্রাজিলের চলচ্চিত্র শিল্পের বিনিময়ে শুভ কামনা করবেন। একই সঙ্গে ব্রাজিলের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল এবারের বেইজিং ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ দেবে এবং ফিল্ম ও টেলিভিশনের উন্নয়ন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবে।

বিগত ১৩ বছরে বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চীন ও ব্রাজিলের চলচ্চিত্র শিল্পের সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। পঞ্চম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে ‘থিয়েনথান পুরস্কারের’ জুরি হিসেবে ব্রাজিলের বিখ্যাত পরিচালক ফেরনান্দো মেইরেল্লেসকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং ব্রাজিলের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

চলতি বছর চীনে নিযুক্ত ব্রাজিলের দূতাবাসের সাহায্যে কার্লোস সালদানহাকে এবারের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের ‘থিয়েনথান পুরস্কারের’ বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ‘আইস এইজ’ এবং ‘rio রিও’ নামে তার পরিচালিত বিখ্যাত সিরিজ কার্টুন ম্যুভি হলিউডে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। শুধু হলিউড নয়, তার শিল্পকর্মগুলো বিশ্বজুড়ে বিশাল সফলতাও অর্জন করেছে। ‘আইস এইজ’ হলো সারা বিশ্বে সবচে আয় করা ধারাবাহিক অ্যানিমেশন মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি ধাপে ধাপে এক বিশ্বব্যাপী মুভি’র ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

এবারের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চলাকালীন সপ্তাহব্যাপী ব্রাজিলের সিনেমা প্রদর্শনের কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে। বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের সাংগঠনিক কমিটি এবং চীনে নিযুক্ত ব্রাজিলের দূতাবাস ২০ এপ্রিল রাতে যৌথভাবে সপ্তাহব্যাপী ব্রাজিলিয়ান মুভির প্রদর্শনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। ব্রাজিলের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী, চীনে নিযুক্ত ব্রাজিলের দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের সাংগঠনিক কমিটির প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেবেন এবং ভাষণ দেবেন। ব্রাজিলের চলচ্চিত্র, শিল্পী ও চলচ্চিত্র ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চীনা জনগণের জন্য একটি বিরল সুযোগ এটি।

উল্লেখ্য, বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব বরাবরই ‘সম্পদের ভাগাভাগি করা এবং ভবিষ্যত অর্জন করার’ উদ্দেশ্য কেন্দ্র করে চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

( লিলি/হাশিম/শিশির)