‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চীনা আধুনিকায়নের প্রচার ও প্রসারে সিনোলজিস্ট সম্মেলন
চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসহ দেশটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের বলা হয় সিনোলজিস্ট।
চীনা আধুনিকীকরণ বলতে কী বোঝায়, বিশ্বজুড়ে সেটা জানানোর বিষয় নিয়ে আলাপ করতে আন্তর্জাতিক সিনোলজিস্টদের অংশগ্রহণে একটি সম্মেলন হলো পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরে। সম্মেলনে জড়ো হন ২০ জন সিনোলজিস্ট।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়। এ আয়োজন মূলত সিনোলজিস্ট এবং চীনের আধুনিকায়নে আগ্রহী যারা তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো এবং মতামত শেয়ার করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
চীন নিয়ে পুরনো ধারণা রয়ে গেছে বিশ্বের অনেক ,মানুষের। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তথাকথিত এসব ধারণার পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এলএমইউ মিউনিখ রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যান্স ভ্যান এস।
‘আমি মনে করি পশ্চিমের কিছু লোকের মনে এখনও পুরনো চীন রয়ে গেছে। তারা বুঝতে পারে না এখানে আসলে কী ঘটেছে, তাই আমি মনে করি এখানে কী ঘটছে তা দেখতে মানুষকে নিয়ে আসা এবং বন্ধুত্ব স্থাপন করাটা জরুরি। চীনা সহকর্মী ও বন্ধুদের ইউরোপে আনা উচিত।‘
অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা চীনের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও বোঝার জন্য অন্যান্য দেশের তরুণদের উৎসাহিত করার গুরুত্বে জোর দেন।
রোমের সাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফেদেরিকো মাসিনি বলেন,
‘একজন সিনোলজিস্ট হিসেবে আমাদের ভূমিকা শুধু চীনা ভাষা নিয়ে গবেষণা করা নয়। চীনা আধুনিকীকরণ কী তাও শেখাতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে চীনের সংস্কৃতিও বুঝতে সাহায্য করতে হবে।’
ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে তরুণদের ভূমিকা সর্বাগ্রে। তাই তরুণদের চীন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
একই দিনে, একটি গোলটেবিল সংলাপ এবং দুটি সমান্তরাল ফোরামও অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ভাষার ভূমিকা, অনুবাদকদের ভূমিকার পাশাপাশি প্রাচীন সামুদ্রিক সিল্ক রোডে ফুচিয়ান প্রদেশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভ্যতার বিনিময় মানব সভ্যতার অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি এবং ভাষা হলো সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বাহক বলে মন্তব্য করেন সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি কলেজের ডিন ছেন চিং।
‘আমাদের জন্য এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো মানব সভ্যতার আদান-প্রদানকে উন্নীত করা, যেখানে ভাষাগুলোকে মূল উপজীব্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।’
আয়োজকরা জানান, চীনা আধুনিকীকরণ সম্পর্কে জানাতে ফুচিয়ানের অন্য শহরগুলোতেও সিনোলজিস্টদের নিয়ে এমন আয়োজন করা হবে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
২. তরুণ প্রজন্মের কাছে পিকিং অপেরা
বেইজিংয়ে নাট্যমঞ্চ মাতাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী পিকিং অপেরার তরুণ শিল্পীরা। দর্শকরা মুগ্ধ তাদের পরিবেশনায়। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিকিং অপেরার তারুণ্যদীপ্ত পরিবেশনা আলোড়ন তোলে।
‘আমাদের অসামান্য ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে প্রচার করার জন্য সাংগঠনিক কমিটি বছরব্যাপী অনুসন্ধান চালায়। ২৯টি এলাকার ৬২ টি পিকিং অপেরা দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রথমত, বেইজিং অপেরা বা ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ অপেরা একটি থিয়েটারশিল্প। টিভি অপেরার উদ্দেশ্য হলো ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ সংস্কৃতির সংস্কৃতির প্রতি আরও বেশি তরুণ প্রজন্মের মানুষকে আকৃষ্ট করা। এই শো এর মাধ্যমে আরও বেশি তরুণ চাইনিজ অপেরা এবং বেইজিং অপেরা পছন্দ করবেন। তারা থিয়েটার হলে আসবেন এবং শিল্পীদের পরিবেশনা দেখবেন।’
এ বছর জানুয়ারিতে পিকিং অপেরার তরুণ শিল্পীদের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফাইনাল পর্যায়ে পৌছানো দশজন শিল্পী এবারে সিএমজির টিভিশোতে অংশ নেন। এখানে চিরায়ত পিকিং অপেরার ছয়টি অংশে তাদের নির্বাচিত হাইলাইটস পরিবেশিত হয়।
ওই সম্মেলনে পিকিং অপেরার একশ জনের বেশি তরুণ শিল্পী একত্রিত হন। সেখানে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের সামনে এই শিল্পীরা পরিবেশন করেন তাদের শৈলী। এর মাধ্যমে পিকিং অপেরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুনভাবে আকর্ষণ তৈরি করে।
‘একজন তরুণ পিকিং অপেরা শিল্পী হিসেবে আমি সিএমজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এমন একটি চমৎকার প্লাটফর্ম আমাদের মতো তরুণ পিকিং অপেরা শিল্পীদের দেয়ার জন্য। এই শোয়ের মাধ্যমে দর্শকরা এবং ভক্তরা আমাদেরকে আরও ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারবেন।’
পিকিং অপেরা চীনের চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। এই চিরায়ত শিল্পের প্রতি তরুণ প্রজন্মের মানুষদের আকৃষ্ট করতে সিএমজির এই শো দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রতিবেদক : শান্তা মারিয়া
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. চীনে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে সাইকেল
বাই সাইকেল এমন একটি বাহন, যা ব্যবহারে পরিবেশ নষ্ট হয় না, জীবনের ঝুঁকি কম এবং ব্যবহারকারীও স্বস্থি অনুভব করে। আর এই বাহন ব্যবহার বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। বিশেষ করে সাইকেল চালানো চীনে খুব জনপ্রিয়। দিন যতো যাচ্ছে তরুণদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। কারণ এখনকার অনেক তরুণই সহজলভ্য হওয়ায় সাইকেল চালাতে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
চীনজুড়ে তরুণদের মধ্যে এখন সাইক্লিং-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে এ কাজ একদিনে হয়নি। সাইকেলকে জনপ্রিয় করতে সাইকেল যারা চালাবেন তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ানোর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল চীনে। দর্শনীয় স্থানগুলোয় সাইকেল চালিয়ে কী করে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায় তা নিয়েও আছে প্রচারণা। সেই সঙ্গে অভিনব সাইক্লিং সরঞ্জামগুলোর সঙ্গেও পরিচয় ঘটানো হয়েছে তরুণদের।
কিছু অনলাইন সাইকেল বিক্রেতার দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, চীনে গত মার্চে সাইকেল বিক্রির আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬০ শতাংশ বেড়েছে এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে সাইকেল চালানোর হার বেড়েছে আড়াই গুণ।
দক্ষিণ চীনের ইয়ুননান প্রদেশের কুনমিং শহরে সম্প্রতি থিয়ানচি হ্রদের চারপাশে সাইকেল ভ্রমণে দেখা যায় একদল তরুণকে।
সাইকেলের আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র তাদের পছন্দের তালিকায় আছে দ্রুত শুকাবে এমন পোশাক, নিরাপত্তা হেলমেট, সানগ্লাস, লকিং জুতা ইত্যাদি। এসব সঙ্গে নিয়ে এই সাইক্লিস্টরা তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে ১০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ শেষ করতে সক্ষম হয়।
এরইমধ্যে, সাইকেল চালানোর রুটগুলো শহরের আশেপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ না হওয়ায় যানবাহন এবং সাইকেল সমন্বিত ট্যুর মডেলও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ভাঁজ করা যায় এমন সাইকেলের বাজারও দ্রুত বাড়ছে। আর তাতে চীনের তরুণরা কম ওজনের সাইকেল চালানোর ব্যাপারে উৎসাহ পাচ্ছে। আবার আপগ্রেড করা সাইকেলগুলোর দক্ষতা বাড়াতে সেগুলোর ট্রান্সমিশন ও ব্রেকিং সিস্টেমেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
অনেককে দেখা গেল সাইক্লিং করার জন্য নিজেরা নিজেদের মতো করে রাইডিং পোশাকও বানিয়ে নিচ্ছে। বাইকের জন্য নানা রঙের গিয়ার কিনে রাস্তায় জাহির করছে নিজের ফ্যাশন জ্ঞানও।
সাইকেল চালানোর প্রচলন চীনে অনেক আগে থেকেই ছিল। সময়ে সঙ্গে পরিবেশবান্ধব এই বাহনে এসেছে নানা পরিবর্তন। মাঝে এর ব্যবহার খানিকটা কমে গেলেও এখন আবার বেড়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে চীনের তরুণদের কারণেই ।
এখন মোবাইল ও কম্পিউটার ছেড়ে বাইরে খেলাধুলা করা তথা আউটডোর স্পোর্টসই চীনের তরুণদের কাছে জনপ্রিয়। এদিকে একইসঙ্গে বিনোদন, খেলা ও শরীরচর্চার অনুষঙ্গ হওয়ায় ব্যবহার বেড়েছে সাইকেলের। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিঃসন্দেহে চীনের তরুণ প্রজন্মের নতুন জীবনধারার হাতে হাত মিলিয়ে চীনের সাইকেল শিল্প হবে আরও সমৃদ্ধ।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী