আকাশ ছুঁতে চাই ৬৬
2024-04-18 17:09:34

১. বাংলাদেশী নারী রাজিয়া ও চীনের পুরুষ ইয়াং এর সুখী সংসার

২. দক্ষ কেমিক্যাল টেকনিশিয়ান উইগুর নারী সুবিনুর আহাত

৩.  নারী শিশুর অংশগ্রহণে জমজমাট লোকজ উৎসব

 

সবাইকে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের শুভেচ্ছা জানিয়ে নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

বাংলাদেশী নারী রাজিয়া ও চীনের পুরুষ ইয়াং এর সুখী সংসার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেম ।এরপর একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ,অতঃপর বিয়ে। সংস্কৃতি ও মানচিত্রের বাধা টপকে শুরু হয় বাংলাদেশের মেয়ে ও চীনা ছেলের ভালোবাসার গল্প। শ্রোতা চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের চীনা ও বাংলাদেশির অসাধারণ এই প্রেমের গল্প শুনবো প্রতিবেদনে।

 

                                           

গল্পের শুরু ২০১৯ সালে। চীনে পড়তে গিয়েছিলেন নড়াইলের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা। পড়া শেষে ফিরে আসেন দেশে। চীনে থাকার সুবাদে বাংলাদেশে এলেও ফেসবুকে ফ্রেন্ড হয়ে যান বাংলাদেশে থাকা চীনের যুবক ইয়াং ওয়েইহুয়ার সঙ্গে। রাজিয়া চীনা ভাষা জানতেন বলে দুজনে মিলে গাঁথতে শুরু করেন নানান কথার মালা।

বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে নিজেদের অজান্তেই যেন দুজন ক্লিক করে বসেন মন দেওয়া-নেওয়ার বাটনে। এরপর শুরু হয় নতুন এক প্রেমের উপন্যাস রচনার পালা। সংস্কৃতি ও মানচিত্রের বাধা টপকে যে বইয়ের শেষ অধ্যায়ে এসে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন।

এদিকে, ব্যাপারটা জানতে পেরে শুরুতেই হ্যাঁ বলেনি রাজিয়া সুলতানার পরিবার।  ইয়াংকে নামতে হয় নিজেকে প্রমাণের পরীক্ষায়। আর সে পরীক্ষায় পেয়ে যান একশতে একশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি বউ রাজিয়া সুলতানা জানায়, “প্রথমে আমার পরিবার মেতে নিতে চায়নি। যেহেতু বাইরের দেশের ছেলে। আমি পরিবারের ছোট মেয়ে। আমার পরিবার থেকে ছয় মাস আমার বরের সাথে ওঠাবসা কথা বার্তা বলতে থাকে। একটা সময় পর তারা রাজী হয়”। 

বাংলাদেশের সংস্কৃতির পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম নিয়েও আগ্রহ জন্মায় তার। এক পর্যায়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন পদ্মা রেলসেতু সংযোগ প্রকল্পের চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের প্রকৌশলী ইয়াং ওয়েইহুয়া। এরপর রাজিয়ার পরিবারের মন গলতে আর দেরি হলো না।  ইয়াং এখন নিয়মিত নামাজ পড়ছেন। এবারের রমজানে রোজাও রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের বিয়ের আগেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন আমার হাজবেন্ড। ফোনে একটি চাইনিজ অ্যাপ থেকে কুরআন শেখে। এরপর অফিসের একজন বাঙালির সাথে মসজিদে যাওয়া শুরু করে, এখন তো রোজাও রাখে’।

কী দেখে রাজিয়াকে ভালো লেগেছিল ইয়াংয়ের? জানা গেল, রাজিয়ার বড় বড় চোখ আর সততাই মুগ্ধ করে ওয়েইহুয়াকে। একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগও হয় দুজনের। এরপরই তারা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

বিয়ের পর চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ানিয়ারিং করপোরেশনের ডিভিশন ৬ এর দ্বিতীয় ইউনিটের এই ঘরটিই এখন তাদের ভালোবাসার ঘর।

দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আছেন একসঙ্গে। একসঙ্গে করছেন অফিসও। হাসি-আনন্দেই কেটে যাচ্ছে দিন।

চীনা বর ইয়াং ওয়েইহুয়া জানান, সি আর ই সিতে কাজ করার সুবাদে আমি রাজিয়াকে পেয়েছি। তাই এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। 

কাজের পাশাপাশি বাড়ির মতো পরিবেশের এই অফিসের পুকুরে মাছ ধরা এবং আঙ্গিনায় সবজি চাষও করেন এই দম্পতি। 

একটানা বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশে থাকতে থাকতে ওয়েইহুয়ার এখন বাংলাদেশি খাবারই পছন্দ। স্বামীকে ভালোবেসে পছন্দের খাবারগুলোই রান্না করেন রাজিয়া।

চীনা বর ইয়াং ওয়েইহুয়া জানান, রাজিয়ার রান্না করা বিরিয়ানি, মাছ খুব পছন্দ তার। এদেশে বাংলা খাবারের পাশাপাশি তার জন্য চাইনিজ খাবারও রান্না করেন তার স্ত্রী।  

সুখের সংসারে ভাষা বাধা হতে পারে না। তবে এ নিয়ে মিষ্টি কিছু খুনসুঁটি তো থাকবেই।

 

দুজনে এখন বাংলাদেশে থাকলেও মাঝে মাঝে চীনে ইয়াংয়ের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে যান তারা। চীনা শ্বশুর শাশুড়ির ভালোবাসায় মুগ্ধ রাজিয়া। অন্যদিকে চীনা মেয়ের জামাইকেও আপন করে নিয়েছে রাজিয়ার পরিবার।

অন্য আরও অনেকের মতো এই দম্পতিও প্রমাণ করলেন, ভালোবাসা বোঝে না দেশকালের সীমানা। মুখে যে ভাষাতেই কথা হোক না কেন, মনের বর্ণমালা মিলে গেলে তাতে ধীরে ধীরে লেখা হয়ে যায় দারুণ এক জীবনগাথা।

প্রতিবেদন-আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ


দক্ষ কেমিক্যাল টেকনিশিয়ান উইগুর নারী সুবিনুর আহাত

 

রাসায়নিক শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ দীর্ঘদিন ধরে ছিল না। ঐতিহাসিকভাবে এই ক্ষেত্রটিকে পুরুষ-প্রধান বলে মনে করা হতো এবং নারীদের প্রবেশাধিকার সীমিত ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলো চীনে এই প্রবণতা পরিবর্তিত হচ্ছে। আর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সুবিনুর আহাত। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে

চীনে কেমিক্যাল শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও পুরুষদের তুলনায় এ সংখ্যা এখনও অনেক কম। সাধারণত নারীরা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন না। সে জায়গায় ব্যতিক্রম সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সুবিনুর আহাত। গত সাত বছর ধরে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কেমিক্যাল টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন তিনি। পেয়েছেন পদোন্নতিও।

দেশটির পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় (বেইজিং) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন সুবিনুর। এরপর নিজ শহর কারামায়ের একটি পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তেল পরিশোধনের সরঞ্জামগুলোর নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করার জন্য ২৪ ঘণ্টা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আর এ কাজটি করেন সুবিনুর। চাকরি শুরুর প্রথম চার বছর সুবিনুর পাইপলাইন এবং যন্ত্রপাতিগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কি-না তা পরীক্ষা করার জন্য রাতে টহল দিতেন।

কখনও কখনও যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করার জন্য হিমশীতল পরিবেশে ১০ মিটার উঁচুতে ফ্ল্যাশলাইট হাতে নিয়ে চড়তে হতো তাকে। আবার অন্য সময় বিষাক্ত ধোঁয়া, আগুন অথবা বিস্ফোরণের মতো বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার পাশাপাশি সমস্যার দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করতেও কাজ করতে হয়।

এই পদটিতে কাজ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সমস্যার সমাধান সিদ্ধান্ত  গ্রহণ দক্ষতার থাকা প্রয়োজন। যার সবটাই আছে সুবিনুরের।

কেমিক্যাল টেকনিশিয়ান সুবিনুর আহাত জানান, তার কাজের অনেক চাপ থাকলেও এটি তাকে দুর্দান্ত সফলতার অনুভূতি দেয়। নিরাপদ উৎপাদন বজায় রাখার জন্য তার কাজের গুরুত্ব আছে বলেও জানান তিনি।

৩২ বছর বয়সে সুবিনুর আহাত তার কোম্পানির কনিষ্ঠতম নারী রাসায়নিক টেকনিশিয়ানদের একজন। গত বছর তাকে সিনচিয়াং পিপলস কংগ্রেসের ডেপুটি নির্বাচিত করা হয়।

সুবিনুরের এমন অর্জনে চীনের রাসায়নিক শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের নীতিমালা, শিক্ষার উন্নতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এই প্রবণতায় সহায়ক হবে।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ

নারী শিশুর অংশগ্রহণে জমজমাট লোকজ উৎসব

চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কুয়াংসি চুয়াংয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় সানইয়ুয়ে সান উৎসব। চীনা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তৃতীয় চান্দ্র মাসের তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।

 

 উৎসবে চুয়াং জাতিগোষ্ঠীর নারী ও শিশুদের ঐতিহ্যবাহী  বর্ণাঢ্য পোশাক ও প্রাণবন্ত উপস্থিতি জমজমাট করে তোলে দিনটিকে। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনায়অংশ নেন লোকজ নারী শিল্পী ও শিশুরা।

 

 

নাননিং সিটিতে আয়োজন করা হয় গণভোজের। সেখানে ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সামগ্রীর আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল ছিল পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকজরীতির এই বৃহত্তম সামাজিক উৎসবে লাল-সাদা রঙের শাড়ি পরে বাংলাদেশের নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি এবং শিশুদের আনন্দমুখর কোলাহল উৎসবকে বর্ণিল করে তোলে।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন ।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল