এপ্রিল ১৭: চতুর্থ চীন আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলা সোমবার হাইনান প্রদেশে শুরু হয়। বিশ্বের ৭১টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ সহস্রাধিক ব্রান্ড এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলাটি চীনা অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) চীনের কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিদেশী গণমাধ্যমগুলো মনে করে, এটি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
পরিসংখ্যানটি প্রকাশিত হওয়ার সময় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ চীন সফর করছিলেন। সিমেন্স, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ-বেঞ্জের মতো জার্মান কোম্পানির নেতারা তার সঙ্গে সফরে ছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে, জার্মান গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, জার্মান সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মনে করেন, চীনের সাথে বিচ্ছেদ গ্রহণযোগ্য নয়। আর বিশ্লেষকরা মনে করেন, জার্মানি ও ইউরোপ এবারের সফরের মাধ্যমে চীনা অর্থনীতির আসল অবস্থা জানতে চায়। প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
ভোগ এখনও চীনা অর্থনীতির একটি বড় আকর্ষণ। এটি বাজারের বিরাট সুপ্তশক্তি দেখায়। প্রথম প্রান্তিকে সামাজিক ভোগ্যপণ্যের খুচরা বিক্রির পরিমাণ ৪.৭ শতাংশ বেড়েছে; পরিষেবার খুচরা বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশ বেড়েছে; টেক্সটাইল ও পোশাক, শুকনো ও তাজা ফল, গরুর মাংস ও টেলিভিশন আমদানির হার দুই অংকের সংখ্যা অতিক্রম করেছে। পোর্শে-র চীনা অংশের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাইকেল কিরশ সাংবাদিককে বলেন, চীনা বাজার পোর্শের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কোম্পানি চীনা ভোক্তাদের চাহিদা পুরণ করার চেষ্টা করবে এবং শ্রেষ্ঠ পণ্য ও সেবা সরবরাহ করবে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনে নতুন জ্বালানিচালিত যানবাহন উত্পাদনের পরিমাণ বার্ষিক ২৯.২ শতাংশ বেড়েছে; সোলার ব্যাটারি উত্পাদন বেড়েছে ২০.১ শতাংশ; পরিষেবা রোবট উত্পাদন বেড়েছে ২৬.৭ শতাংশ। পাশাপাশি, নতুন শিল্প ও পদ্ধতি অব্যাহতভাবে উত্থান হচ্ছে। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে খুচরা বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১.৬ শতাংশ বেশি।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রত্যাশা ও দিকনির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু লোক যারা চীনের অর্থনীতির দুরবস্থা দেখতে আগ্রহী, তারা কল্পনার জগতে বাস করেন। কিন্তু বাস্তব পরিসংখ্যানের সাথে তাদের কল্পনার কোনো মিল নেই।
আমেরিকান কনজিউমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেল (সিএসবিসি) ওয়েবসাইটের সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতি দ্রুত উন্নত হয়েছে। গোল্ডম্যান শ্যাক্স ও সিটি গ্রুপ সম্প্রতি ২০২৪ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেছেন, ইতিবাচক নীতিমালা এবং স্থিতিশীল ও শক্তিশালী মুদ্রাব্যবস্থার কারণে চলতি বছর চীনা অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে বাড়বে।
চীনা অর্থনীতির আসল অবস্থা কী? চীন বহুবার বলেছে, চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন দিয়ে বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বিস্তৃত সুবিধা সরবরাহ করতে ইচ্ছুক সে। বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি জটিলতা ও অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে। এ অবস্থায় চীনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নতির ভিত্তি এখনও শক্ত নয়। তবে, ইতিবাচক ফ্যাক্টর ক্রমশ বাড়ছে। ফলে, সারা বছর ধরে চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের ধারায় থাকবে বলে আশা করা যায়। (ছাই/আলিম)