এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। পর্যটকরা উপভোগ করছেন শৌসিহু হ্রদের নৈসর্গিক সৌন্দর্য
২। বিশ্বমানের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ কুইচৌ প্রদেশের লিপোও
৩। ঘুরে আসুন কুনমিংয়ের তাকুয়ান পার্ক থেকে
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। পর্যটকরা উপভোগ করছেন শৌসিহু হ্রদের নৈসর্গিক সৌন্দর্য
চীনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মন ভোলানো সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর এই ভরা বসন্তে সেসব সৌন্দর্যে গা ভাসাতে বেড়াতে যাচ্ছেন অনেকে।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়াংচৌ শহরে পর্যটকরা উপভোগ করছেন শৌসিহু হ্রদের নৈসর্গিক সব স্থান।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দর্শনীয় স্থানটি পর্যটকদের ব্যাপক আনাগোনার সাক্ষী হয়েছে। প্রতিদিনে এ পার্কে আসছেন প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থী। যা এ স্থানটিকে তুলে দিয়েছে বসন্ত পর্যটনের শিখরে।
শহরটিকে যেন পর্যটকরা আরও ভালো করে বুঝতে পারেন, সেজন্য মার্চজুড়ে চলেছে একটি সিরিজ কার্যক্রম।
পার্কটিতে শিল্পকলা প্রদর্শনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা লি লি বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কার্যকলাপের একটি বিন্যাস সতর্কতার সঙ্গে তৈরি করেছি। যাতে তারা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নির্যাসটা পায় এবং এর যে জৌলুস আছে সেটাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। সেই সঙ্গে শৌসিহু হ্রদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর সময় মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য অনুভব করতে পারে।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের একটি সাফারি পার্কে একদল শিশু এসেছে তাদের মা-বাবার সঙ্গে। সঙ্গে আছেন চিড়িয়াখানার অভিজ্ঞ কর্মী। প্রাণীদের খাদ্য ও জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে তারা। এমন শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে এ ধরনের ট্যুরের আয়োজন বসন্তকালে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ। এ অভিভাবকরা জানালেন, শিশুদের জন্য প্রকৃতিকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার এটিই সেরা সময়।
অনলাইন ট্র্যাভেল প্ল্যাটফর্মগুলোর মতে, এখন বসন্তকালীন পর্যটনে শিশুদের শিক্ষামূলক ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গতমাসের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি পর্যটকের আনাগোনা দেখছে তারা। তবে এর মধ্যে মূলত একদিনের ঘুরে বেড়ানোর আয়োজনই বেশি।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের খাড়া পাহাড়ে ঘেরা একটি পার্কে, শহুরে তরুণরা হাইকিং ও গুহায় অভিযানের দুঃসাহসিক আয়োজন করেছে। বুনো প্রকৃতিতে নিজেদের পুরোপুরি ডুবিয়ে দিতে চায় তারা।
বেইজিং থেকে আসা পর্যটক লিউ বিং বলেন, ‘আমরা শুধু প্রকৃতির মধ্যে মিশে যেতে চাই এবং পাহাড়ের দিকে তাকাতে চাই। কারণ সবুজ আমাদের চোখের জন্যও ভালো।’
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের উয়ুয়ানে, সমগ্র চীন থেকে আসা পর্যটকরা এখন মেতে আছেন রেপসিড ফুলের আশ্চর্যজনক দৃশ্যে।
প্রতিবেদন- ফয়সল আবদুল্লাহ
সম্পাদনা- আফরিন মিম
২। বিশ্বমানের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ কুইচৌ প্রদেশের লিপোও
সবুজে ঘেরা প্রকৃতি, পাহাড়, ঝর্ণা, অরণ্য, স্বচ্ছ পানি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের লিপোও কাউন্টি।
মনোরম দৃশ্য এবং বছরব্যাপী নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর জন্য বিখ্যাত এই জেলা। এ বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রেকর্ড ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন পর্যটকের আগমন ঘটেছে এ কাউন্টিতে, যার জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার।
কুইচৌ প্রদেশের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত, কাউন্টিটি দক্ষিণ চীন কার্স্টের বিশ্ব ঐতিহ্যগত সম্পত্তি এবং বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের বিশ্ব নেটওয়ার্কের জন্যও বিখ্যাত।
গ্রীষ্মের ছুটিতে এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুদের উপচে পড়া ঢল নামে। দিনে ১ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ও দর্শনার্থীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে লিপোওর প্রাচীন শহর এলাকায় সম্প্রতি ৮০টির বেশি হোমস্টে খোলা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য রাত্রিযাপন ব্যবস্থার হার প্রায় ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এ ছাড়া জাতিগত সংখ্যালঘু সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্ট্যযুক্ত রন্ধনপ্রণালীর সুবিধা গ্রহণ করে আরও বৈচিত্র্যময় রাত্রিকালীন পর্যটন বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
অনেক দর্শনার্থী ব্রিজ জুড়ে হাইকিং এবং এমনকি রাফটিং ভ্রমণের মাধ্যমে লিপোওর জলপথের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখতে আসেন। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাও অনেকে নিতে আসেন।
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা সংস্কারই লিপোও পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কুইচৌর এই কাউন্টিতে চলতি বছরে পর্যটকের সংখ্যা ২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন তারা।
২০২১ সাল থেকে তিনটি পৃথক ইউনিটের মাধ্যমে কাউন্টি স্তরের পর্যটন উন্নয়ন কমিটি প্রতিষ্ঠা করে এই অঞ্চলের পর্যটনের প্রসার ঘটানো হয়েছে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
৩। ঘুরে আসুন কুনমিংয়ের তাকুয়ান পার্ক থেকে
কুনমিং সিটিতে পার্কের অভাব নেই। বিশেষ করে কুনমিংয়ের সবচেয়ে বড় লেক তিয়ান শি বা কুনমিং লেককে ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। তাকুয়ান পার্ক হচ্ছে তিয়ানশি লেকের তীরে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পার্ক। কুনমিংয়ের দক্ষিণ পশ্চিম উপকণ্ঠে এই পার্ক অবস্থিত। লেকসাইড পার্কটিতে চমৎকার হাঁটাপথ রয়েছে। এখানে অনেকে আসেন ঘুড়ি উড়াতে, চা পান করতে এবং বোটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য।
এই পার্কের মূল আকর্ষণ হলো একটি তিনতলা প্যাভিলিয়ন। এর নাম তাকুয়ান লোও। এটি সম্রাট খাংশির সময় নির্মিত হয়েছিল। এই প্যাভিলিয়নে বসে লেকের চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তাকুয়ান এর অর্থই হলো বড় দৃশ্য বা গ্র্যান্ড ভিউ।
বর্তমানে এই ভবনে রয়েছে চীনা হস্তলিপি বা ক্যালিগ্রাফির সমৃদ্ধ সংগ্রহ। এখানে ক্যালিগ্রাফিতে লেখা অনেক বিখ্যাত কবিতা রয়েছে। এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটি হলো ছিং রাজবংশের পণ্ডিত সুন রানের লেখা ১১৮ ক্যারেকটার বা চীনা শব্দের শ্লোক। এটি পাথরের উপর খোদাই করা হয়েছে। আরও অনেক কবির কবিতা ক্যালিগ্রাফিতে লেখা রয়েছে। এজন্য এটি কবিতার পার্ক হিসেবেও পরিচিত।
তাকুয়ান স্রোতধারা পার্কের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিয়ানশি লেকে পড়েছে। এই পার্কে যেমন লেকের অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় তেমনি অপর তীরে সিশান বা ওয়েস্টার্ন হিলস পর্বতের দৃশ্য চোখে পড়ে।
১৬৯৬ সালে সম্রাটের আদেশে ইয়ুননান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং চিওয়েন প্রথম এই ভবন ও পার্ক নির্মাণ করেন। পরবর্তি দুই তিনশ বছরে এর অনেক সংস্কার হয়েছে এবং আরও কয়েকটি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকরা এখানে এসে ভবন ও পাথরের সেতুর কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হন। এখানে বোটে চড়ে লেকের জলে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। শিশুদের জন্য কয়েকটি রাইডও আছে। এখানে উইলো গাছ এবং বিভিন্ন রকম ফুলের বাগান রয়েছে যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
আরেকটি বিনোদন হলো গাংচিল পাখিকে খাবার খাওয়ানো। পর্যটকরা গাংচিল পাখিকে রুটি ও অন্যান্য খাবার দেন। পাখিগুলো নির্ভয়ে হাত থেকে খাবার খায়। এই পার্কে বিকেলবেলা অনেক সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী