বিজ্ঞানবিশ্ব ৬৬তম পর্ব
2024-04-15 18:39:12

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৬৬তম পর্বে যা থাকছে:

 

* জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাচীন চীনের জাতিগত সংখ্যালঘু সম্রাটের প্রোফাইল

* কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইমিউনথেরাপিউটিক এজেন্ট তৈরি

* ব্যাঙের চোখের ইশারায়

 

জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাচীন চীনের জাতিগত সংখ্যালঘু সম্রাটের প্রোফাইল

জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাচীন চীনের জাতিগত সংখ্যালঘু একজন সম্রাটের জিনগত প্রোফাইল সম্পন্ন করেছেন চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল। স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

সিয়ানবেই নেতৃত্বাধীন উত্তর চৌ রাজবংশের সম্রাট উ (৫৫৭-৫৮১ খ্রিস্টাব্দ), যিনি ইউয়েন ইয়ং নামেও পরিচিত ছিলেন। এ সম্রাট ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। তিনি মঙ্গোলীয় মালভূমির স্থায়ী যাযাবর গোষ্ঠী শিয়ানবেইয়ের অন্তর্গত ছিলেন।

 

উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের সিয়ানইয়াং শহরের একটি গ্রামে ১৯৯৩ সালে সম্রাটের সমাধি আবিষ্কৃত হয়। এরপর ১৯৯৪ এবং ১৯৯৫ সালে তার সমাধিক্ষেত্র খননের সময় তার খুলি এবং হাড়গুলো আবিষ্কৃত হয়।

ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ওয়েন শাওছিংয়ের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী তার দেহাবশেষে পাওয়া ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ছয় বছর গবেষণার পর সম্রাটের চুলের রং, ত্বক এবং চোখের মূল বৈশিষ্ট্য এবং আকৃতি ডিকোড করতে সক্ষম হন তারা।

প্রযুক্তির সাহায্যে পুনর্গঠিত নতুন মুখটিতে দেখা গেছে, ইউয়েন ইয়ংয়ের কালো চুল, হলুদ ত্বক এবং বাদামী চোখ ছিল। তিনি দেখতে এশিয়ার পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মানুষদের মতোই ছিলেন।

সিয়ানবেই জনগোষ্ঠীর মুখের গঠন কেমন ছিল সেটি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক রেকর্ডে পাওয়া গেছে, গোষ্ঠীটির পুরুষদের ঘন দাড়ি, হলুদ চুল এবং উঁচু নাক ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলোতে পাওয়া গেছে—এ জনগোষ্ঠীর মানুষ এবং এশিয়ার উত্তর-পূর্বের অন্যান্য লোকদের মধ্যে চেহারার কোনও পার্থক্য ছিল না।

ইউয়েন ইয়ংয়ের জিনোমিক ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওয়েনের দলটি আরও দেখতে পায় যে তার পূর্বপুরুষদের একটি বড় অংশ প্রাচীন উত্তর-পূর্ব এশীয় মানুষদের মধ্যে থেকে এসেছে।

সহযোগী অধ্যাপক ওয়েন জানান, গবেষণায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া প্রাচীন সিয়ানবেই ব্যক্তিদের জিনগত বৈচিত্র্য প্রকাশ পেয়েছে।

এ ছাড়াও গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই সম্রাটের মৃত্যু হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ায়। প্রাচীন মানুষরা আয়ু বাড়ানোর জন্য এক ধরনের খাবার খেত। সেই খাবারের ফলেই এ বিষক্রিয়া হয়েছিল বলে জানান গবেষকরা।

পুরাতত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন ইউয়েন ইয়ংয়ের ওপর এমন গবেষণা চীনা ইতিহাসের জাতিগত একত্রীকরণ বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জনগোষ্ঠী এবং উত্তরের যাযাবর জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর একত্রীকরণ বোঝার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। পাশপাশি এ এই গবেষণাটি প্রাচীন চীনা জনগোষ্ঠীর জিনগত বৈচিত্র্য এবং উত্স সম্পর্কে আমাদের বোঝার উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি শিয়ানবেইয়ের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টিও প্রদান করে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইমিউনথেরাপিউটিক এজেন্ট তৈরি

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি নতুন ইমিউনথেরাপিউটিক এজেন্ট তৈরি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এই এজেন্টটি টিউমার কোষে সফলভাবে প্রবেশ করার পর টি সেলের কার্যকারিতা বাড়িয়ে টিউমার কোষ ধ্বংস করে এবং কোলন টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে।

 

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল একাডেমিক জার্নাল ‘এসিএস ন্যানোতে’ প্রকাশ করা হয়েছে। ইমিউনথেরাপি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা রোগীর ক্যান্সার কোষগুলোকে আক্রমণ এবং ধ্বংস করতে নিজস্ব ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে।

ইমিউনথেরাপিউটিক এজেন্টগুলো বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে, ইমিউন চেকপয়েন্ট ব্লকিং, সিটিটিএল-৪, ইনহিবিশন এবং অ্যান্টিবডি থেরাপি।

গবেষণা পত্রের লেখক থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান স্কুলের লু ছুনওয়ান জানান, প্রাণীদেহে পরীক্ষায় দেখা গেছে এজেন্টটি টিউমার কোষে সফলভাবে প্রবেশ করার পর টি সেলের কার্যকারিতা বাড়িয়ে টিউমার কোষ ধ্বংস করে এবং কোলন টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে। এজেন্টটি স্বাভাবিক কোষের উপর কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না।

এছাড়া এজেন্টটি টিউমার ইমিউনোজেনিসিটি বাড়াতে পারে এবং কোলন টিউমারে বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে সক্ষম। প্রথাগত কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসার তুলনায় এ চিকিৎসায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম।

দীর্ঘ ল্যাটেন্সির কারণে কোলন ক্যানসারে মৃত্যুর হারের বেশি। মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসাবে দেখা দেয়। লুর মতে, বিভিন্ন থেরাপিগুলোর মধ্যে, ইমিউনোথেরাপি সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলের মধ্যে একটি বিবেচনা করা হয়।

যদিও এ উদ্ভাবনটি পরীক্ষামূলক পর্যায় রয়েছে এবং সব রোগীর জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। নতুন এ পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

ব্যাঙের চোখের ইশারায়

চোখের ইশারা প্রেমের নিঃশব্দ ভাষা। প্রেমের সূচনা থেকে শুরু করে পরিণতি পর্যন্ত সবকিছুই ফুটে ওঠে চোখের ভাষায়। চোখের ইশারার মাধ্যমে আমরা প্রিয়জনের মনের ভাব বুঝতে পারি, তার অনুভূতি অনুধাবন করতে পারি। তবে চোখের পলক ফেলার কিংবা চোখের ইশারায় শুধু যে প্রাইমেটরা যোগাযোগ করে কিংবা সঙ্গীকে আকৃষ্ট করে তা নয়।

চীনা গবেষকদের এক গবেষণায় দেখা গেছে যোগাযোগ কিংবা প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্র স্ত্রী ব্যাঙও চোখের পলক ফেলে। আনহুই নরমাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের করা এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষণা দলটি জানিয়েছে, বাঁকা-কানযুক্ত টরেন্ট প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙগুলো পুরুষ ব্যাঙদের আকৃষ্ট করতে চোখের পলক ব্যবহার করে। বাঁকা-কানযুক্ত টরেন্ট প্রজাতির স্ত্রী ব্যাঙগুলো এক প্রজাতির চীনা ব্যাঙ। এদের কানের গঠন বেশ অস্বাভাবিক। এই ব্যাঙের কানের পর্দা গর্তের মধ্যে থাকে, যা সাধারণ ব্যাঙের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

এ গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে অ-প্রাইমেট প্রজাতির প্রাণীরাও চোখের পলক ফেলে সামাজিক যোগাযোগ করে থাকে।

গবেষণা দলের প্রধান চাং ফাং জানিয়েছেন, এই গবেষণাটি ব্যাঙের যোগাযোগ ব্যবহার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং প্রাণীদের মধ্যে দৃশ্যমান যোগাযোগের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য তুলে ধরেছে।

গবেষকরা মাঠ পর্যবেক্ষণ, অ্যামপ্লেক্সাসের সময়ে পরীক্ষা এবং ভিডিও প্লেব্যাকের মতো পরীক্ষামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, স্ত্রী ব্যাঙরা তাদের পছন্দের সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে পলক ফেলানোর মাধ্যমে সংকেত দেয়। কেবল এই পলক ফেলানোর সংকেত পাওয়ার পরেই একটি পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙের সঙ্গে সঙ্গম কিংবা প্রত্যাখ্যান করে।

 

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী