দেহঘড়ি পর্ব-৬৬
2024-04-14 15:45:39

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

হিস্টিরিয়ারও চিকিৎসা আছে টিসিএমে

হিস্টিরিয়া একটি মানসিক রোগ। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো অনিয়ন্ত্রিত আবেগ এবং খ্যাপাটে আচরণ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যুক্তিহীন আচরণ করে, কখনও কখনও উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাঁদে আবার হাসে। হিস্টিরিয়ার প্রচলিত চিকিৎসা কালের পরিক্রমায় অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। এর প্রাথমিক ধাপের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ-ভিত্তিক। পরবর্তী ধাপে রোগীর মানসিক গঠন পরিবর্তনের লক্ষ্যে সাইকোথেরাপি দেওয়া হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএম একটি অনন্য ও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা প্রদান করে। এ চিকিত্সায় গুরুত্ব দেওয়া হয় শরীর, মন ও আত্মার ছন্দময় সম্পর্কে উপর।

টিসিএম দর্শনে হিস্টিরিয়াকে অত্যাবশ্যক শক্তি বা ‘ছি’ এবং রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতা এবং শরীরের অঙ্গ এবং মেরিডিয়ানগুলির মধ্যে অসামঞ্জস্যতা হিসাবে দেখা হয়। টিসিএম নীতি অনুসারে, মানসিক অশান্তি, চাপ ও অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যহীনতা ‘ছি’ ও রক্তের প্রবাহকে ব্যাহত করতে পারে, যা হিস্টিরিয়ার সাথে সম্পর্কিত উপসর্গ যেমন উদ্বেগ, বুক ধড়ফড়, অনিদ্রা ও অব্যক্ত শারীরিক সংবেদনের কারণ ঘটায়।

হিস্টিরিয়ার টিসিএম চিকিত্সার মূল লক্ষ্য থাকে ‘ছি’কে নিয়ন্ত্রণ করা এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য রক্তকে পুষ্ট করা। ভেষজ ওষুধ টিসিএম চিকিৎসায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ চিকিৎসাব্যবস্থায় চিকিৎসকরা প্রত্যেক রোগীর শারীরিক গঠন ও উপসর্গগুলো বিশ্লেষণ করে ভেষজ ফর্মুলেশন নির্ধারণ করেন। হিস্টিরিয়ার চিকিৎসায় ভেষজের মধ্যে সাধারণত থাকে বুপ্লেউরাম (ছাই হু), হোয়াইট পিওনি রুট (পাই শাও) এবং পলিগালা রুট (ইউয়ান চি)। এ ভেষজগুলো লিভারকে সুস্থ রাখতে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, মনকে শান্ত করতে এবং উদ্বেগ ও মানসিক অস্থিরতার লক্ষণগুলো দূর করতে সাহায্য করে।

টিসিএম চিকিৎসার আরেকটি স্তম্ভ হলো আকুপাংচার। আকুপাংচার শরীরে ‘ছি’ ও রক্তের প্রবাহকে মসৃণ করে এবং তার মধ্য দিযে হিস্টিরিয়া উপশমে সাহায্য করে। আক্রান্ত অঙ্গ ও মেরিডিয়ানের সঙ্গে সম্পর্কিত আকুপাংচার পয়েন্টগুলোকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে টিসিএম অনুশীলনকারীরা রোগীর শরীরের শক্তি ও মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনেন। আকুপাংচার হিস্টিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নির্দিষ্ট লক্ষণ যেমন অনিদ্রা, মাথাব্যথা ও হজমের ব্যাঘাত উপশম করে এবং সামগ্রিক সুস্থতা আনে।

টিসিএম হিস্টিরিয়া ব্যবস্থাপনায় জীবনধারা পরিবর্তন এবং স্ব-যত্ন অনুশীলনের উপর জোর দেয়। চিকিৎসকরা মানসিক ভারসাম্যকে সমর্থন করার জন্য ডায়েট পরিবর্তনের সুপারিশ করতে পারেন। এর মধ্যে থাকতে পারে ক্যাফিন ও অ্যালকোহলের মতো উদ্দীপক গ্রহণ কমানো এবং গোটা শস্য, পাতাযুক্ত সবুজ শাক ও চর্বিহীন প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ বাড়ানো। পাশাপাশি থাই চি, ছিকং ও মেডিটেশনের মতো মন-শারীরিক অনুশীলনের পরামর্শও দেওয়া হতে পারে। এসব অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে, শারীরিক স্বস্তি আনতে এবং মানসিক শক্তি বাড়াতে সক্ষম, যার মাধ্যমে রোগীদের দেহের অভ্যন্তরীণ শান্তি আসে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

পশ্চিমা ও টিসিএম চিকিৎসার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে ছেংদু ফার্স্ট পিপলস হসপিটালে

ছেংদু ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংদুতে অবস্থিত একটি জেনারেল হাসপাতাল। এটি ছেংদু ইন্টিগ্রেটেড টিসিএম এবং ওয়েস্টার্ন মেডিসিন হাসপাতাল নামেও পরিচিত। আধুনিক পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থার অগ্রগতির সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সমন্বয়ে এই হাসপাতাল প্রতিনিধিত্ব করে প্রাচীন জ্ঞান ও সমসাময়িক বিজ্ঞানের একটি অনন্য সংমিশ্রণের।

 

ছেংদু ফার্স্ট পিপলস হসপিটালের দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি বিশ্বাস। সেটা হলো সত্যিকারের স্বাস্থ্যসেবা আসলে সামগ্রিক; শুধুমাত্র অসুস্থতার শারীরিক উপসর্গ মোকাবিলা নয়; শরীর, মন ও আত্মার অন্তর্নিহিত ভারসাম্যহীনতাকে নিশ্চিত করা। এ হাসপাতালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি আকুপাংচার ও ভেষজ ওষুধ এবং ছিকংয়ের মতো শতাব্দী-প্রাচীন টিসিএম অনুশীলন এবং অত্যাধুনিক পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থার সমন্বয়ে প্রত্যেক রোগীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনের ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রদান করে। এতে করে সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত হয়।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকে উপশম খুঁজছেন যেসব রোগী, তাদের জন্য ছেংদু ফার্স্ট পিপলস হসপিটালের আকুপাংচার বিভাগ একটি নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প প্রদান করে। এখানে আকুপাংচারে প্রশিক্ষিত টিসিএম চিকিৎসদের দক্ষ হাতে আকুপাংচার প্রয়োগ করা হয়।।

ভেষজ ওষুধ এ হাসপাতালের চিকিৎসা-পদ্ধতিতে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। টিসিএম চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যায় বিস্তৃত পরিসরের ভেষজ ফর্মুলেশন নির্ধারণ করে দেন। হজমজনিত ব্যাধি থেকে শুরু করে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা পর্যন্ত -- এই প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলো রোগীদেরকে ফার্মাসিউটিক্যালের একটি মৃদু কিন্তু শক্তিশালী বিকল্প প্রদান করে, যার রয়েছে ন্যূনতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

চিকিৎসার উপর ফোকাস করার পাশাপাশি, ছেংদু ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থতার উপর জোর দেয়। শিক্ষামূলক কার্যক্রম, কর্মশালা ও পরামর্শের মাধ্যমে রোগীদেরকে তাদের জীবনধারা পরিবর্তনসহ স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে সক্ষম করে তোলে এ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান।

অধিকন্তু, হাসপাতালটি সমন্বিত ওষুধের ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে। এখানে গবেষকদের আন্তঃবিভাগীয় দল কঠোর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে টিসিএম থেরাপির কার্যকারিতা মূল্যায়নে এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির বিকাশে কাজ করে।

প্রাচীন জ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞানের নিরাময় সেবা যখন একত্রিত হয়, তখন চিকিৎসাক্ষেত্রে কতটুকু অর্জন সম্ভব হয় এবং মানবকল্যাণে কতটা কাজ করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছেংদু ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের জন্য এমন এক পথ তৈরি করছে, যেখানে প্রতিটি রোগী তার জন্য প্রয়োজনীয়, ব্যাপক ও আন্তরিক স্বাস্থ্যসেবা পাবে।

 

#হারবাল_হিলিং

প্রাচীনতম ভেষজ ক্যামোমাইল

মানবজাতির কাছে পরিচিত সবচেয়ে প্রাচীন ঔষধি ভেষজগুলোর মধ্যে একটি ক্যামোমাইল। এর দুটি সাধারণ জাত আছে যেগুলোর ফুল ডেইজির মতো এবং এ ফুল চা হিসাবে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন দেশে। ক্যামোমাইল ফুলে ফ্ল্যাভোনয়েড নামক এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, যার জন্য চা হিসাবে এটা গ্রহণ করলে নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মানুষের জন্যই ক্যামোমাইল চা নিরাপদ। তবে, গর্ভবতী বা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই চা এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় সাধারণত৷

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যামোমাইল চা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে পারে। ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্লাইসেমিক ও লিপিড প্রোফাইল উন্নত করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে ক্যামোমাইল।

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে: ক্যামোমিলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-প্রভাব অক্সিডেটিভ চাপ কমিয়ে অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে৷ ২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ক্যামোমাইল স্টেরয়েড চিকিৎসার কারণে ইঁদুরের অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে৷

প্রদাহ কমায়: ক্যামোমাইল চায়ে এমন সব যৌগ রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে পারে৷ হেমোরয়েডস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যথা, বাত, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বিভ্রাট, স্থূলতা ও বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ প্রশমনে কার্যকর ক্যামোমাইল চা।

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করে: কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যামোমাইল চা ক্যান্সার কোষের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। এ ফুলের যৌগগুলো গ্লিওমা, লিভার ক্যান্সার, সার্ভিকাল ক্যান্সার ও লিউকেমিয়া বৃদ্ধি রোধে সাহায্য করতে পারে।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।