জাপানের ধারাবাহিক পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কী?
2024-04-14 20:03:06

এপ্রিল ১৪: বড় আকারে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা চুক্তিকে উন্নীত করে, দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ফিলিপাইনের সাথে যৌথভাবে সামরিক মহড়া করে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ত্রিপক্ষীয় জোটে ( AUKUS) যোগদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে সম্প্রতি জাপান ঘন ঘন বিপজ্জনক অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।

খোদ জাপানেই সর্বস্তরে দেশটির সরকারের এ প্রচেষ্টার বিরোধিতা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। জাপানের কিছু পন্ডিত ব্যক্তি উল্লেখ করেছেন যে, দেশটির সরকার সামরিক জোটের সাহায্যে তার সামরিক শক্তি প্রসারিত করার চেষ্টা করছে এবং ‘যুদ্ধের অভিমুখে একটি বিপজ্জনক যাত্রা’ শুরু করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক দেশগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্ক থাকা উচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে সিএমজি সম্পদকীয়তে।

জাপানের ধারাবাহিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সবচে বিতর্কিত বিষয় হলো যুক্তরষ্ট্র-জাপান সামরিক জোটকে শক্তিশালীকরণ। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরাভূত হওয়ার পর, জাপান সরকার যথাক্রমে মার্কিন সরকারের সাথে দুটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলো। সেগুলো হলো ১৯৫১ সালে স্বাক্ষরিত পুরানো সংস্করণের নিরাপত্তা চুক্তি এবং ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত নতুন সংস্করণের নিরাপত্তা চুক্তি। এ দুটি চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে জোটের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং এটি ছিল শীতল যুদ্ধের একটি পণ্য।

নতুন সংস্করণের চুক্তি অনুযায়ী জাপান আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিরক্ষায় সহায়তা করতে বাধ্য এবং তখন মার্কিন সামরিক বাহিনী জাপানে সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ হলে, জাপানের প্রতিরক্ষা সহায়তার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল’ অনুসরণ করেছে এবং জাপানকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। জাপানের কিছু ডানপন্থী শক্তি শান্তিবাদী সংবিধান থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে এবং দেশকে সামরিক শক্তিতে বড় দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।  এ বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।

গত বছর জাপান সরকার স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওপর নতুন দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করেছে। এর ফলে প্রতিরক্ষা থেকে আক্রমণ চালানোর অধিকার পেয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, উভয় দেশ জোট সম্পর্ক থেকে ‘যৌথ প্রতিরক্ষার সহযোগিতা’ চালানোর ‘বৈশ্বিক অংশীদারে’ উন্নীত করেছে নিজেদের।

বিশ্লেষকদের মতে জাপান সরকারের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধন করা এবং সামরিক ক্ষেত্রে সার্বিক ক্ষমতা অর্জন করা।

আসাহি শিম্বুন সম্প্রতি মন্তব্য করেছে যে, ‘একটি 'শান্তিপূর্ণ দেশ’ হিসেবে জাপানের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি হিসেবে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার একটি শক্তিশালী সামরিক প্রভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে সামরিক জোটের উন্নয়ন এখানে মূল ভারসাম্য ভঙ্গ করতে পারে, অন্যান্য দেশে উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য লুকানো বিপদ ডেকে আনতে পারে।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে সামরিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে তার পুরানো পথে ফিরে গেলে এবং সামরিকবাদের পুনরুত্থান ঘটালে তারা আরো বিপজ্জনক অবস্থায় পড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে সিএমজি সম্পাদকীয়তে।

(লিলি/হাশিম/শিশির)