এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।
কাজাখদের বিয়েকে প্রস্তাব, বাগদান এবং বিবাহের উপহার পাঠানোর মতো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিয়েটা খুব জমকালো এবং প্রাণবন্ত হয়। পুরো বিয়েটা হয় গান-বাজনার মাঝে। বধূকে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে তাকে বিদায় জানানো পর্যন্ত, সর্বত্রই থাকে গান। আপনি যদি সিনচিয়াংয়ে যান এবং একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সম্মুখীন হন, তবে তা দেখতে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে। আপনি শুধুমাত্র দম্পতির সুখ দেখে ক্ষান্ত হবেন না, বরং বিয়ের গানে নিজেও মত্ত হবেন।
কাজাখ বিয়ের অনুষ্ঠানের বেশিরভাগই সোনালী শরতে আয়োজিত হয়। একটি স্বাগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়; তৃণভূমিতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা বর-কনেকে অভিনন্দন জানাতে আসেন।
কনের পরিবারে, বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার আগে, কনেকে তার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের বিদায় জানাতে হয় এবং বর, তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব, শুভেচ্ছা জানানোর জন্য, বিয়ের আয়োজনে সাহায্য করতে কনের বাড়িতে যান। বিয়ের অনুষ্ঠানটি জমকালো এবং উত্সবপূর্ণ, তবে খানিকটা বিষন্নতায় আচ্ছাদিতও থাকে। বিয়ের আগের রাতে, কনের পরিবার অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য ভেড়া জবাই করে এবং স্টিউ করে। এটি একটি আনন্দময় রাত, যেখানে সবাই একসাথে ডুয়েট গাইতে জড়ো হয়। সবাই প্রথমে "টয়বাস্টাল" গায় যা "ওয়েডিং ওভারচার"। এই দ্বৈত কণ্ঠের গানের বিষয়বস্তু সর্বজনীন, কথা উন্নত। এই গানের অনুষ্ঠান সাধারণত সারারাত ধরে চলে।
মেয়ের বিয়ের আগে, তার বাবা-মা তার জন্য একটি ছোট ইয়র্ট তৈরি করেন, যা যৌতুক দিয়ে ভরা। উপজাতির বয়স্ক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রবীণরা কনেকে আশীর্বাদ করেন এবং তার সুখী বৈবাহিক জীবন কামনা করে। এই দিন থেকে বিয়ে করার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়া পর্যন্ত, কনেকে মেয়েদের সাথে বসতে হবে, পর্দা দিয়ে তার মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের "সারেন গান" (বিয়ের জন্য তাকে রাজি করানো একটি গান) গাইতে হবে। সারেন গান শুনে কনে পর্দায় মুখ লুকিয়ে কাঁদে। নিজের বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া একটা মেয়ের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার।
পরের দিন, আমন্ত্রিত আত্মীয় ও বন্ধুরা কনের পরিবারকে উপহার পাঠায়। কনের পরিবার অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য একটি বিবাহের ভোজ আয়োজন করে এবং বিনোদনমূলক কার্যকলাপ যেমন ঘোড়দৌড়, কুস্তি, মেয়েদের তাড়া করা এবং ভেড়া ধারণ করা, ইত্যাদির আয়োজন করে। তৃতীয় দিনে, কনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। একদল যুবক মেয়েটির ইয়র্টের বাইরে জড়ো হয় এবং যে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চলেছে তাকে বিদায় জানাতে "গাল, গার" (বিবাহকে উত্সাহিত করার জন্য একটি গান) গায়।
বিকেলে, নববধূ, তার বরযাত্রীদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে, ইয়ার্ট থেকে বেরিয়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে "সেনসমা" (বিয়ের গান) গান গেয়ে, তার আত্মীয় এবং স্বদেশের জন্য তার নস্টালজিয়া এবং অজানা নতুন জীবন সম্পর্কে তার উদ্বেগ প্রকাশ করে। মাঝে মাঝে জামাই কনের পক্ষ থেকে বিয়ের গান গায়। এটি খুবই দুঃখের গান।
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মি/আলিম)