‘বিজনেস টাইম’ পর্ব- ০৮
2024-04-12 19:27:22


 

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।

এই পর্বে থাকছে:

১. ঢাকায় নতুন ভিসা সেন্টার চালু করলো চীনা দূতাবাস

২. বাংলাদেশে চালু হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান নির্মিত দেশের বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প।

৩. চীন একা বদলাবে না, বিশ্বকেও দেখাবে পথ- বিএফএ সম্মেলনে আশাবাদ বিশেষজ্ঞদের

 

বিশ্লেষণ পর্ব:

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় চালু হয়েছে চায়না ভিসা সেন্টার। গত ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে সেন্টারটির কার্যক্রম চালু হয়েছে। এখন থেকে সাধারণ পাসপোর্টধারীরা এই সেন্টার থেকে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন অথর্নীতি বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস)-য়ের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর।

 

 

কর্পোরেট প্রোফাইল:

‘চীন একা বদলাবে না, বিশ্বকেও দেখাবে পথ’

চীনে নতুন উদ্ভাবন বাড়ছে এবং পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বাড়াচ্ছে। যার ফলস্বরূপ ২০২৩ সালে, চীনের জাতীয় উদ্ভাবন সূচক পুরো বিশ্বে ১৩তম থেকে দশম অবস্থানে উঠে আসে।

পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বিকাশে চীন শুধু নিজের দেশে নয়, কাজ করে যাচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে।

সাম্প্রতিক খবরে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কথা। বাংলাদেশের উত্তরের এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার সোলার প্যানেলের একটি ৫০ মেগাওয়াটের প্রকল্প নির্মিত হয়েছে চীনের বিনিয়োগে। চীনের তৈরি স্থাপনাটি বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধবভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে।

মো. নাসিরুদ্দিন নামে ময়মনসিংহের এক বাসিন্দা সিনহুয়াকে বলেছেন, তার ছেলে মেয়েসহ অনেক আত্মীয় এই পাওয়ার প্লান্টে কাজ করছে। এতে তারা উপকৃত হচ্ছেন।

এশিয়ার দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়নের ও সহযোগিতার লক্ষ্যে চীনের বিনিয়োগে এই পরিবেশবান্ধব প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। এর মাধ্যমে চীনের সহযোগী মনোভাব ও মানসম্পন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিরই প্রমাণ পাওয়া যায়। 

সম্প্রতি শেষ হওয়া বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে চীনের মানসম্মত উন্নয়ন ও এর গতিশীলতার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়। এশিয়ার বাইরেও চীনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় এতে।

 

দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি

এবারের বোয়াও সম্মেলনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চীনের শীর্ষ আইনপ্রণেতা চাও ল্য চি। চীনের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেভাবে বিশ্বকে সমৃদ্ধ করতে পারে তা তুলে চাও বলেন, ‘গুণগত উন্নয়নের মাধ্যমে চীন সকল ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে এবং চীনের প্রতিবেশী দেশসহ সকল দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক অনেক অনিশ্চয়তা এবং নানা ধরনের চাপ থাকার পরও অর্থনৈতিকভাবে এখনও চীন অনেক দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর চীনের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.২ শতাংশ। যা স্পষ্ট করে যে, নানা বাধা অতিক্রম করেও প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে কর্মরত চীনের প্রতিনিধি স্টিফেন এলেন বার্নেট চীনের অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় বলেছেন, ‘গত বছর যে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেখানে এক-তৃতীয়াংশ অবদানই ছিল চীনের একার।’

বার্নেট আরও বলেন, গবেষণায় আরো দেখা যায়, চীনের প্রবৃদ্ধি এক শতাংশও গতিশীলতা লাভ করলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও গড় জিডিপির স্তর দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ে।

কম্বোডিয়ার রয়্যাল একাডেমির অধীনে অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা কিন ফেয়া বলেছেন, ‘যেহেতু চীন বৈশ্বিক উৎপাদনে জড়িত ও ভ্যালু চেইন স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে তাই চীনের প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতিরও প্রবৃদ্ধি।’

 

 

মানসম্মত প্রযুক্তি

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব এবং বর্তমানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার চেয়ারম্যান বান কি মুন বলেন, ‘চীনের অর্থনীতি উচ্চগতির উন্নয়ন থেকে উচ্চমানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর তা এখন নতুন মানের উৎপাদন শক্তিকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। ফলস্বরূপ উদ্ভাবনী, ভারসাম্যপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব ও উন্নয়নের দিক থেকে চীনের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।’

গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগে টেকসই প্রবৃদ্ধির ফলে চীনের জাতীয় উদ্ভাবন সূচক ২০২৩ সালে সারা পৃথিবীতে দশম হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ভালো।

চীন এখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, সৌরকোষের ফটোভোল্টাইক পণ্য, উন্নত পরিবহন প্রভৃতি রপ্তানি করছে। যার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক শূন্য ৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (দেড়শ বিলিয়ন ডলার)। এ আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২৯.৯ শতাংশ। 

এ ছাড়া চীন অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে যেমন: উচ্চগতির রেল, নতুন পণ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিতেও এগিয়ে যাচ্ছে।

জ্বালানির পরিবর্তনে বিশ্বকে চীনের নেতৃত্বদানের কথা তুলে ধরেন গবেষকরা। তারা বলেন, বায়ু ও সৌর শক্তির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া চীনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরির সুযোগ দেখছে।

 

পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ

জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও সংস্থাগুলো এবারের বোয়াও সম্মেলনে বলেন, ‘সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি  হয়ে পড়েছে।’

অর্থনীতিবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের অধ্যাপক বার্নার্ডো এম ভিলেগাস এক লিখিত সাক্ষাৎকারে  বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় চীন যেসব পণ্য ও প্রযুক্তির প্রচলন করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

 

 

।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল

 

ভিন দেশে চীন:

বাংলাদেশে চালু হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান নির্মিত দেশের বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প।

 

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌরবিদ্যুতের পর বায়ুশক্তিকেও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এবার দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে কক্সবাজারে। চীনা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিতে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম বায়ুশক্তি প্রকল্প, কক্সবাজার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি চীনের উলিং পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের বিনিয়োগে নির্মাণ করেছে পাওয়া চায়না ছেংতু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড। চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউএস–ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের সমস্ত যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে চীন থেকে।

উলিং পাওয়ার কর্পোরেশনের বাংলাদেশ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হেই চাও বলেন,

‘‌কক্সবাজার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। পাশাপাশি ৪৪ হাজার ৬০০ টন কয়লার ব্যবহার এবং ১ লাখ ৯ হাজার ২০০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে, সেইসাথে ১ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে৷ প্রকল্পটি নির্মাণের সময়, আমরা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি।’

কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথম বাণিজ্যিক বায়ু বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গনি জানান

‘কক্সবাজারের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের হাত ধরেই চীনের নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছে বাংলাদেশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও উন্নত করেছে এই প্রকল্প।‘

৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটিতে রয়েছে ২২টি টারবাইন। ৫০০ ফুট উঁচু উইন্ড টারবাইনের প্রত্যেকটিতে রয়েছে ৩টি পাখা। পাখাগুলোর দৈর্ঘ্য ২০০ ফুটের বেশি। বাতাসের শক্তিতে ঘুরবে পাখা, আর পাখার কারণে ‍ঘুরবে টারবাইন, তৈরি হবে শতভাগ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ।

 

।। প্রতিবেদন: আফরিন মিম

।। সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

 

প্রযোজনা ও  উপস্থাপনা - শাহানশাহ রাসেল

 

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী