চীনের হোনান প্রদেশের সিনইয়াং শহরের হুয়াংছুয়েন জেলায় এমন একটি গ্রামীণ অর্কেস্ট্রা আছে এবং এর ৮০ জনেরও বেশি সদস্য হচ্ছেন স্থানীয় খামারের শ্রমিক, কৃষক এবং শিক্ষার্থী। এ গ্রামীণ অর্কেস্ট্রার প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছর হলেও এর সদস্যরা একসঙ্গে পারফর্মে প্রায় ২০টি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে আরহু, কুজেং ও সুওনাসহ বিভিন্ন চীনা বাদ্যযন্ত্র এবং বেহালা, ভায়োলা এবং সেলোসহ বিভিন্ন পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র।
এই অর্কেস্ট্রার প্রতিষ্ঠা কুয়েন ইউ শেংয়ের বয়স ৬৮ বছর এবং তিনি অবসর-প্রাপ্ত একজন অধ্যাপক। চার বছরে গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছায় সংগীত শিক্ষা দিয়েছেন, তার সঞ্চয় এবং অবসরের অর্থ দিয়ে বাদ্যযন্ত্র কিনেছেন এবং ক্লাসরুমও প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি এই অর্কেস্ট্রা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং গ্রামাঞ্চলে সংগীতের প্রসার ঘটিয়েছেন। স্টাফ নোটেশন থেকে শুরু করে ছন্দের প্রশিক্ষণ পর্যন্ত, সংগীততত্ত্বের জ্ঞান এবং দক্ষতা, যাই শিক্ষার্থীরা আয়ত্ত করেছিলেন তা সবই ধীরে ধীরে কুয়েন ইউ শেং ধৈর্যের সাথে তাদের শিখিয়েছিলেন। অর্কেস্ট্রার বেশিরভাগ বাদ্যযন্ত্র কুয়েন ইউ শেং তার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কিনেছিলেন।
সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ, চার বছরে প্রায় প্রতিদিনই এভাবে বিনামূল্যে সংগীত শিক্ষাদান করেন তিনি। আজকাল ক্লাসের অনেক লোক সাবলীলভাবে যন্ত্রসংগীত বাজাতে পারেন এবং এটি কুয়েন ইউ শেংয়ের একটি বিশেষ Nostalgia নস্টালজিয়াও।
কুয়েন ইউ শেং হচ্ছেন জাতীয় প্রথম-স্তরের সুরকার এবং দ্বিতীয়-স্তরের কন্ডাক্টর। ২০১৯ সালে উহান আর্ট ট্রেনিং কলেজ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি জন্মস্থান হ্য নান প্রদেশের হুয়াং ছুয়েনে ফিরে আসেন।
অবসর নেওয়ার পর জন্মস্থানে শূণ্য থেকে অর্কেস্ট্রা প্রতিষ্ঠা করা শুধু খেয়ালের বশে ছিল না। সতর্কতার সাথে বিবেচনা করার পর একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তিনি কেবল শ্রমিক, কৃষক ও শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত একটি অর্কেস্ট্রা তৈরি করতে চাননি, তার নিজের জন্মস্থানকে চীনে ‘সংগীতের শহর’ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। এত বড় স্বপ্ন কোথা থেকে এলো?
বিংশ শতাব্দীর ৫০’র দশকে হুয়াং ছুয়েন জেলার হুয়াংহু ফার্ম একটি বর্জ্যভূমি থেকে উর্বর কৃষিভূমিতে রূপান্তর করা হয়েছিল। এখানেই কুয়েন ইউ শেংয়ের বড় হওয়ার জায়গা। আজকাল হুয়াংহু ফার্ম বিনোদনমূলক একটি নতুন ধরনের খামারে পরিণত হয়েছে। অবসর নেওয়ার পর আবার জন্মস্থানে ফিরে আসার পর কুয়েন ইউ শেং দেখেছেন যে, গ্রামবাসীদের বস্তুগত জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে, কিন্তু তাদের সাংস্কৃতিক জীবন তেমন বৈচিত্র্যময় ছিলো না।
অডিও সরঞ্জাম এবং বাদ্যযন্ত্র কেনার জন্য ১০ হাজারের বেশি ইউয়ানের সঞ্চয় ব্যয় করেছেন এবং পুরানো কারখানাকে একটি সংগীত ক্লাসরুমে রূপান্তর করেছেন তিনি। খামারে উঠে আসা এই অভিনব ক্লাসরুমটি অবিলম্বে গ্রামবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। যখন ক্লাস শুরু হয়, তখন শতাধিক লোক নাম তালিকাভুক্ত করেছিল, এবং কেউ কেউ তাদের পরিবারের তিন প্রজন্মের সাথে এসেছিলেন।
সুই পিং নামে হুয়াংছুয়েন জেলার হুয়াংহু খামারের একজন কৃষক বলেন, ‘অধ্যাপক আমাকে না বললে বাদ্যযন্ত্র কী তা আমরা জানতাম না। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, তিনি গান শেখাচ্ছেন। আমরা ধীরে ধীরে সংগীততত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেছি এবং আমি সংগীতের স্টাফ নোটেশন শিখেছি, তারপর আমি পাশ্চাত্য সংগীত এবং লোক সংগীত শিখেছি।’
অর্কেস্ট্রা প্রতিষ্ঠার শুরুতে মাত্র দশটির কিছু বেশি বাদ্যযন্ত্র ছিলো। কুয়েন ইউ শেং নিজের খরচে নানা বাদ্যযন্ত্র কিনেছেন এবং আস্তে আস্তে এই গ্রামীণ সংগীত ক্লাসরুমে ১০টির বেশি ধরনের ৬০টিরও বেশি বাদ্যযন্ত্র রয়েছে।
অর্কেস্ট্রায় কুয়েন ইউ শেং দলনেতা এবং শিক্ষক। প্রতি সপ্তাহের বুধবার, শনিবার ও রোববার সবাই তার সংগীত ক্লাসরুমে সবচেয়ে মৌলিক সংগীততত্ত্ব থেকে নানা বাদ্যযন্ত্রের বাজানোর কৌশল পর্যন্ত সংগীত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় শিখেন।
চাং চিয়েন ছেন হুয়াং ছুয়েন জেলার হুয়াংহু খামারের একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম বাদ্যযন্ত্র বা স্যাক্সোফোন অধ্যাপক বিনামূল্যে আমাকে উপহার দেন। আমি তিন বছর ধরে শিখছি। এখন আমি কয়েক ডজন সংগীত বাজাতে পারি। তারপর অধ্যাপক আমাকে আরহু এবং সিওহাউ উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ক্লাসরুমে আমি শুনেছি, বেহালার সুর খুব চমত্কার। তাই আমি নিজেই একটি বেহালা কিনে শিখতে শুরু করি।’
গত দুই বছরে কুয়ে ইউ শেং তার অর্কেস্ট্রাকে সর্বত্র পরিবেশন করার জন্য নিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে, যুবকদের নিয়ে গঠিত অর্কেস্ট্রা জাতীয় অপেশাদার প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে। গ্রামবাসীরা বহুবার অর্কেস্ট্রাদলের পরিবেশনায় আনন্দ পেয়েছেন এবং আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছেন।
বড় আকারের পারফরম্যান্সের সুযোগ অর্কেস্ট্রার প্রত্যেকের জন্যই বিরল। অর্কেস্ট্রা আকার নিতে শুরু করার পরে, কুয়েন ইউ শেং যেখানেই একটি মঞ্চ থাকবে সেখানেই সবাইকে পারফর্ম করতে নিয়ে যাবেন। তিনি হুয়াংহু প্রাইমারি স্কুলের চিলড্রেনস প্যালেসে অফ-ক্যাম্পাস কাউন্সেলর হিসেবেও কাজ করেছেন এবং শিশুদের বেইজিং ও সি’আনসহ নানা জায়গায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে নিয়ে গেছেন।
কুয়েন ইউ শেংয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে নিজের জন্মস্থানে সংগীতের প্রসার ঘটেছে। তবে ভবিষ্যতে, তার আরও অনেক লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, হুয়াং ছুয়েন জেলায় বিভিন্ন স্কুলে অর্কেস্ট্রা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা হবে তাঁর ভবিষ্যতের লক্ষ্য।