যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে ‘দায়িত্বশীল’ হবে বলে আশা প্রকাশ করে চীন: সিএমজি সম্পাদকীয়
2024-04-09 14:33:24

এপ্রিল ৯: মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ৯ এপ্রিল তার চীন সফর শেষ করেছেন। তিনি এই বছর চীন সফরকারী প্রথম মার্কিন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, এবং ৯ মাসের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বার চীন সফরে আসেন। এই সময়কালে, উভয়পক্ষ বহু-স্তরীয় এবং বহু-ক্ষেত্রের আলোচনা ও বিনিময় করেছে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যকে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচারে ও আর্থিক সহযোগিতায় নতুন ঐকমত্যের ফলাফলে পৌঁছাতে সম্মত হয়েছে। ইয়েলেন বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের ‘দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করা উচিত’ এবং এ কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, তারা চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান না।

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। চীন সবসময় বিশ্বাস করে যে, চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার সারমর্ম পারস্পরিক সুবিধা ও জয়-জয় ফলাফল অর্জন, এবং এ লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে বেইজিং। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজের জনগণ এবং বিশ্বের প্রতি তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইয়েলেন যেহেতু এবার ‘দায়িত্ব’ নিয়ে কথা বলেছেন, তাই সত্যিকারের ‘দায়িত্ব’ বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে কথা বলা দরকার। এটি কোনোভাবেই মার্কিন অর্থনীতির দায় এবং মার্কিন স্বার্থের উপর ভিত্তি করে নয়। বরং, এটি অবশ্যই দু’দেশে নিজ নিজ কোম্পানি এবং জনগণের জন্য আরও সুবিধা তৈরি করবে, পারস্পরিক সুবিধা ও জয়-জয় ফলাফল বিবেচনা করবে এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি সাড়া দেওয়া এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নীত করার কথাও বিবেচনা করবে। কিন্তু এটি কীভাবে করবে তারা? যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, বেশ কয়েকটি সূচক রয়েছে যা পরিমাপ করা যেতে পারে।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ইস্যুর রাজনীতিকরণ না করা বা ‘নিরাপত্তার’ নামে ‘অনিরাপত্তা’ সৃষ্টি না করা। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সেদেশে চীনা কোম্পানির শাখার উপর তল্লাশী চালিয়েছে, পেন্টাগন অনেক চীনা সংস্থা থেকে ব্যাটারি কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, টিকটকের কার্যক্রম বিঘ্নিত করেছে, ‘জাতীয় সুরক্ষার নামে যুক্তরাষ্ট্র চীনের উন্নয়নে বাধা দেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্র ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ অজুহাত হিসেবে ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন না করলে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ‘সঠিক পথে’ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে, চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা অর্থনৈতিক আইন এবং বাজারের নিয়ম অনুসারে পরিচালিত হওয়া উচিত। ইয়েলেনের সফরের সময়, দু’পক্ষ দু’দেশের মধ্যে সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ইস্যুতে চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ওয়ার্কিং গ্রুপের কাঠামোর মধ্যে যোগাযোগ করতে সম্মত হয়েছে। এই সম্মতিগুলো বাজারের উদ্বেগ দূর করতে এবং বাজারের নিশ্চয়তা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, এ দুটি প্রধান অর্থনীতির দায়িত্বও বটে।

সফরকালে ইয়েলেন চীনের নতুন জ্বালানি শিল্পে তথাকথিত ‘ওভার ক্যাপাসিটি’ সমস্যাটিও উত্থাপন করেছেন। আসলে, এটি একটি মিথ্যা বক্তব্য। তথাকথিত ওভার ক্যাপাসিটি বাজারের চাহিদার চেয়ে বেশি উত্পাদন ক্ষমতাকে বোঝায় এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য মার্কিন এ মনোভাবকে সমর্থন করে না।

ইয়েলেন এবার চীন সফরের সময়, কুয়াংচৌ এবং বেইজিংয়ে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন হতে’ চায় না। চীন একে স্বাগত জানায় এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করে। গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন সরকার চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ রপ্তানি সীমাবদ্ধ করা সংক্রান্ত নিয়মগুলো সংশোধন করেছে এবং বিধিনিষেধ আরও প্রসারিত করেছে। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিচ্ছিন্ন না হওয়া’র বক্তব্যের স্পষ্ট বিপরীত। ইয়েলেনের চীন সফরের পর, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘বিচ্ছিন্ন না হওয়া’র প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা এবং চীনা ও আমেরিকান কোম্পানি এবং জনগণের মঙ্গলের পথ উন্মুক্ত করা।

এ বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ গভীরভাবে জড়িত এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করা উভয়পক্ষের জন্য উপকারী, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও তা সহায়ক। এখন যেহেতু চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্রম অবনতি না হয়ে স্থিতিশীল হয়েছে, চীন আশা করে যে যুক্তরাষ্ট্র কাজের মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে ‘দায়িত্ব নিতে’ পারে কিনা তা গোটা বিশ্বকে দেখাতে হবে।

 

(জিনিয়া/হাশিম/শুয়েই)