‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৬৫
2024-04-09 19:42:33


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

 

১। সিয়ং আন- ভবিষ্যত স্বপ্নের শহর 

২। রন্ধন শিল্পের জন্য বিখ্যাত হুবেই প্রদেশের চিয়ায়ু কাউন্টি

৩। রমজান বিশেষ- এক নজরে দক্ষিণ পূর্ব চীনের শাদিয়ান মস্ক

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।     

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬৫তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

 

১। সিয়ং আন - ভবিষ্যত স্বপ্নের শহর

 

এমন একটি শহরের কথা ভাবুন যেখানে ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। শহর জুড়ে সবুজ মাঠ, পার্কে প্রচুর গাছ। ফুটপাথ ধরে নিশ্চিন্তে হাঁটছেন পথচারীরা। রাস্তা পার হচ্ছেন ধীরে সুস্থে, নিশ্চিন্তে।

 

শান্তিময়, ইকো ফ্রেন্ডলি বা পরিবেশ বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে উঠছে সিয়ং আন। এই শহরটি গড়ে তোলা হচ্ছে চীনের হবেই প্রদেশে। বেইজিং শহর থেকে আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই শহর। 

 

 

সাত বছরেরও কম সময়ে, সিয়ং আন নকশা থেকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এই শহরে নির্মাণ করা হচ্ছে অনেকগুলো আন্ডার গ্রাউন্ড টানেল। বাণিজ্যিক পরিবহন সবই চলবে মাটির নিচ দিয়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রিত হবে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। এইসব পরিবহন চলবে পরিবেশবান্ধব শক্তি দিয়ে।

এছাড়া এখানে রয়েছে স্কুল, কলেজ এবং  হাসপাতাল । শহরের বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে সবুজ গাছপালা, রয়েছে নীল জলের লেক।

 

শহরের রাস্তায় মাটির উপরে শুধু দেখা যাবে পথচারীদের এবং বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত গাড়ি। সেগুলোও আবার ব্যবহার করবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানী। ফলে শহরের পথে ঘাটে কোন রকম ট্র্যাফিক জ্যাম থাকবে না। শহরের মধ্যে দেখা যায় না পণ্যবাহী কোন ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান।

 

দৈত্যের মতো বহুতল ভবন দিয়ে শহরের আকাশকে সংকীর্ণ করে তোলার কোন ইচ্ছা নেই পরিকল্পনাকারীদের। এই শহরে কোন ভবন ৪৫ মিটারের বেশি উঁচু হবে না। শহরের দৈনন্দিন কাজ চলবে স্মার্ট প্রযুক্তিতে। নগরীর ৭০ ভাগ এলাকায় থাকবে সবুজ গাছপালা ও জল। এই শহরের মধ্যেই রয়েছে বাইইয়াংদিয়ান লেক। এই লেকের পানি যেন পরিষ্কার, টলটলে নীল থাকে সেজন্যও রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।

 

সিয়ং আন প্রকল্পের প্রচার পরিচালক বিয়ানচিয়ান কুয়ো বলেন, এই শহরের বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙবে ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দে নয়, পাখির কলকাকলিতে। শহরের জীবন যাত্রা হবে গ্রিন এবং ক্লিন (পরিবেশবান্ধব)।  এমনি এক স্বপ্ন শহর গড়ার কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ২০৩৫ সাল নাগাদ শহরটি পুরোপুরি বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। রন্ধন শিল্পের জন্য বিখ্যাত হুবেই প্রদেশের চিয়ায়ু কাউন্টি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক অপূর্ব মিশ্রণ চিয়ায়ু কাউন্টি। মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের সিয়াননিং শহরে অবস্থিত এই কাউন্টি  ছুটি কাটানোর জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা হিসেবে পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত।

মনোমুগ্ধকর পাহাড়, নদী, জলপ্রপাত, এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সমাহার এই অঞ্চলকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

চীনা ভাষায় চিয়ায়ু অর্থ হলো ‘ভালো মাছ’বা গুড ফিশ। চীনে জলজ প্রাণীদের নামানুসারে দুটি কাউন্টির একটি এই চিয়ায়ু। অন্যটি হল শানতোং প্রদেশের ইউথাই।

অনেক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণ থাকলেও রন্ধন শিল্পের জন্যই  বিখ্যাত চিয়ায়ু। কাউন্টি ঘুরতে আসা পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতেই বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেন।

প্রথমবারের মতো ভ্রমণকারীরা মাছ ও পদ্ম ফুলের ডাটা দিয়ে তৈরি বিশেষ এক ধরনের খাবার স্বাদ নিতে ভুল করেন না। প্রায় সব রেস্তোরাতেই এই উপাদান দিয়ে তৈরি খাবার পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে বেইজিংয়ের কবি সিয়াও উ বলেছেন, কিছু রেস্তোরা কেবল এই দুটি উপাদান দিয়েই কীভাবে পুরো টেবিলের খাবার তৈরি করতে পারে তা অবিশ্বাস্য।

হাজার লেকের প্রদেশ হিসেবে খ্যাত হুবেইয়ের দক্ষিণে অবস্থিত চিয়ায়ু কাউন্টি ১ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই পানি। এখানে ২১টি লেক, ১৫ ধরনের মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া বছরে ৬০ হাজার টন পদ্ম ডাটা উৎপাদন হয়ে থাকে।

চিয়ায়ু কাউন্টিতে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল বসন্ত ও শরৎকাল। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং ভিড় কম থাকে। চিয়ায়ু কাউন্টিতে থাকার জন্য অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে।  আপনি স্থানীয় বাস, ট্যাক্সি বা গাড়ি ভাড়া করে চিয়ায়ু কাউন্টিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

 

প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। রমজান বিশেষ- এক নজরে দক্ষিণ পূর্ব চীনের শাদিয়ান মস্ক

শাদিয়ান মস্ক দক্ষিণ পূর্ব চীনের বৃহত্তম মসজিদ। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ারও অন্যতম বড় মসজিদ।

চীনের ইউননান প্রদেশের গেচিউ বা কেচিউ শহরে এর অবস্থান। এটি কুনমিং সিটি থেকে ২৭৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

গ্র্যান্ড মস্ক অব শাদিয়ান প্রথম নির্মিত হয় ১৬৮৪ সালে। পরে অনেকবার এই মসজিদের সংস্কার হয়। ২০০৯ সালে শাদিয়ান মসজিদ নতুনভাবে নির্মিত হয়। ব্যয় হয় ১৩০ মিলিয়ন ইউয়ান। বর্তমানে মসজিদটির আয়তন ১৮ হাজার বর্গমিটার। এখানে একসঙ্গে দশ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।

এর নির্মাণশৈলী ও অভ্যন্তরীণ কারুকার্যে মদিনার পবিত্র মসজিদ নববীর রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এই মসজিদের অন্যতম সৌন্দর্য হলো এর বড় গম্বুজ। প্রধান বড় গম্বুজের চারপাশে চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের উপর একটি চাঁদ রয়েছে। মসজিদের চারটি সুউচ্চ মিনার এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। মসজিদের বিশালাকার হলরুমে পাথরের পবিত্র কোরান শরিফ আছে। সোনালি কারুকার্যে পবিত্র কোরানের বিভিন্ন আয়াত লেখা আছে।

মসজিদের ভিতরের কারুকার্যও খুব দৃষ্টিনন্দন। মসজিদের বাইরের দেয়ালে এবং অভ্যন্তরে ক্যালিগ্রাফিতে পবিত্র কোরান শরিফের আয়াত লেখা আছে। সরকারি উদ্যোগে মসজিদের প্রাত্যহিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। শাদিয়ান ইসলামি শিক্ষার একটি কেন্দ্রও বটে। সমরখন্দ, বুখারা ও সৌদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত আলেমগণ এই কেন্দ্রে প্রায়ই শিক্ষাপ্রদানের জন্য আসেন।

কুনমিং শহর থেকে গেচিউ শহরের শাদিয়ান টাউনে যাওয়ার জন্য সরাসরি বাস রয়েছে। চারঘন্টায় সেখানে পৌঁছানো যায়।

শাদিয়ান টাউনে হুই মুসলিম জাতির মানুষের বাসস্থান। এর আশপাশে হালাল খাদ্যের বাজারও রয়েছে।

গ্র্যান্ড মস্ক অব শাদিয়ান পর্যটন স্থান হিসেবেও বিখ্যাত। মসজিদটির নান্দনিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, নির্মাণ শৈলী দেখার জন্য মুসলিম ছাড়া অন্য ধর্মের পর্যটকরাও এখানে আসেন।

 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী