চীনের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা
2024-04-08 15:30:49

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা ঐতিহ্যিক সভ্যতার উন্নয়ন ও সম্প্রচার দেশের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে চীনের বিভিন্ন এলাকার অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রচার কাজে অনেক যুবক মনোযোগী হয়েছে। তারা নিজে ওয়ার্কশপ চালু করা বা অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তৈরিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চীনের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রাখছেন।

আজকের অনুষ্ঠানে চীনের আনহুই প্রদেশের আনছিং শহরের পাইরোগ্রাফি হস্ত-শিল্পকর্ম প্রচার নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে আনহুই প্রদেশের আনছিং শহরের লিংহু পার্কের কাছে একটি অস্থায়ী পাইরোগ্রাফি স্টলে দেখা যায় এর যুব-মালিক এবং তার সহকর্মীরা আন্তরিকভাবে রাস্তার আশেপাশে পর্যটক ও বাসিন্দাদের কাছে পাইরোগ্রাফির বুকমার্ক ও শুকনো লাউয়ের খোলে আঁকা শিল্পকর্ম তুলে ধরেন। বস্তুত তারা সবাই আনছিং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২০২৩ সাল থেকে স্থানীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের উন্নয়ন ও নবায়ন করতে চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা, তারা ওয়ার্কশপ স্থাপন করেছেন এবং জৈব প্রযুক্তি দিয়ে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার উন্নয়নে চেষ্টা করে আসছেন।

চলতি বছরের ১৩ মার্চ আনছিং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাইরোগ্রাফি ছবির অনুশীলন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে আকৃষ্ট করে। পাইরোগ্রাফি ছবি চীনের ঐতিহ্যিক ছবি আঁকার পদ্ধতির অন্যতম। ছাত্রছাত্রীরা ওয়ার্কশপের কর্মীদের কাছ থেকে পাইরোগ্রাফি ছবি তৈরির পদ্ধতি শেখার সুযোগ পেয়েছে এবং এ ধারার ছবির ঐতিহ্যিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। শ্রেষ্ঠ পাইরোগ্রাফি শিল্পকর্ম দেখার পর নিজেই সুন্দর পাইরোগ্রাফি ছবি আঁকতে চেষ্টা করে ছাত্রছাত্রীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগান ও উদ্যান বিভাগের ছাত্রী হুয়াং ছাং ওয়ে এখন নিয়মিতভাবে পাইরোগ্রাফি কলম নিয়ে কাঠে প্রিয় ছবি আঁকেন। এ ছবি তৈরির প্রক্রিয়া ও অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এমন অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়ে বেশ ভালো লাগে। ছবি তৈরির সময় তাপমাত্রা ও কলমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ছবির আকার ও বিস্তারিত দিকে আঁকতে চাইলে বারবার চর্চা করতে হয়। ছাত্রী হুয়াংয়ের সহপাঠী লিয়াও চিং ইয়া পাইরোগ্রাফি ছবি আঁকার পদ্ধতি জানার পর ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির আমেজ অনুভব করেছে এবং মজা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো বেশি ছাত্রছাত্রী এ কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এটিও তার জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক ও গর্বের ব্যাপার।

জৈব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছাও সিন ইয়ু পাইরোগ্রাফি ছবির কৌশল শেখার পর মনে করে, যদি ঐতিহ্যিক শিল্পকর্মের ডিজাইনে জৈব বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিষয় যুক্ত হয়, তাহলে পাইরোগ্রাফি ছবি আঁকার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের জৈব কাঠামো ও আকার জানা সম্ভব, এটি নিজের পড়াশোনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ধীরে ধীরে পাইরোগ্রাফি ছবির আধুনিক ডিজাইন কাজে নতুন উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা প্রায় শূন্য থেকে পাইরোগ্রাফি আঁকার পদ্ধতি শিখতে শুরু করে, ক্লাসের অবসর সময়ও পাইরোগ্রাফির ছবি আঁকার কৌশল চর্চা করে, অনেকে শূন্য থেকে দক্ষভাবে পাইরোগ্রাফির কলম দিয়ে কাঠ, বাঁশ ও লাউতে ছবি আঁকতে পারে। জৈব বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে নতুন পদ্ধতিতে ঐতিহ্যিক পাইরোগ্রাফি ছবি এঁকেছে শিক্ষার্থীরা। লাউতে ‘শুভকামনা’সহ বিভিন্ন চীনা অক্ষর খোদাই করেছে তারা, এর সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যিক ডিজাইন ছাড়া মাশরুম, জৈবিক কোষসহ নতুন ধরনের ডিজাইন লাউতে এঁকেছে, এটি দেখতে বেশ মজার।

ধীরে ধীরে আনছিং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো করে পাইরোগ্রাফি ছবি আঁকতে শিখেছে, আরো বেশি লোকের কাছে এ হস্তকর্ম শিল্পের পরিচয় তুলে ধরতে তারা সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটিতে দর্শনীয় স্থান বা শপিংমলের রাস্তার কাছে অস্থায়ী স্টল চালু করে। সেখানে পাইরোগ্রাফি লাউয়ের বিশেষ ডিজাইনের শিল্পকর্ম তৈরি ও বিক্রি করে। ভোক্তাদের প্রিয় ডিজাইন অনুসারে তারা শাপলা ফুল, ধান ও তারাসহ বিভিন্ন ছবি পাইরোগ্রাফি কলম দিয়ে আঁকে। এটিও ভোক্তাদের জন্য অনন্য উপহার।

শিক্ষার্থীরা যৌথ প্রয়াসে ওয়ার্কশপ স্থাপন করেছে, তারা বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গিয়ে বাচ্চাদের কাছে পাইরোগ্রাফি ছবির ইতিহাস ও তৈরির প্রযুক্তি পরিচয় করিয়ে দেয়। এটিও বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রিয় কার্টুন চলচ্চিত্রের চরিত্র আঁকতে বাচ্চাদের সহায়তা করে। বাচ্চারা মজা করে প্রিয় হস্ত-শিল্পকর্ম তৈরি করে এবং অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে আরো বাস্তব ধারণা পায়।(সুবর্ণা/হাশিম/মুক্তা)