এপ্রিল ৮: যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ফিলিপাইন গতকাল (রোববার) দক্ষিণ চীন সাগরে প্রথম যৌথ সামুদ্রিক মহড়ার আয়োজন করে। ফিলিপাইন গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে যে, চারটি দেশের যৌথ সামরিক শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য হল চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং শক্তির ভারসাম্য আনা। ওয়াশিংটনে আসন্ন ইউএস-জাপান-ফিলিপাইন শীর্ষ সম্মেলনের ক্ষেত্রে, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে এবং দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধকে আন্তর্জাতিকীকরণে ফিলিপাইনের অপচেষ্টা খুবই স্পষ্ট। একই দিনে চীনের গণ মুক্তি ফৌজের দক্ষিণাঞ্চলের কমান্ড দক্ষিণ চীন সাগরে যৌথ নৌ ও বিমান যুদ্ধ-টহলের আয়োজন করে।
গত বছর থেকে, ফিলিপাইন দক্ষিণ চীন সাগরে সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং বারবার চীনের হুয়াং ইয়ান দ্বীপ এবং রেনআই রিফের কাছে জলে অনুপ্রবেশ করেছে। সম্প্রতি, এটি একটি ‘নতুন ফ্রন্ট’ খুলেছে - ২১ মার্চ, ফিলিপাইন চীনের সতর্কতা উপেক্ষা করে ৩৪ জনের একটি ‘বাহিনী’ প্রেরণ করেছে এবং অবৈধভাবে চীনের থিয়ে সিয়ান রিফে অবতরণ করেছে। ৪ এপ্রিল, অনেক জাহাজ ফিলিপাইন থেকে চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের হৌথেং রিফের জলসীমায় অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়েছে এবং আইন অনুসারে চীনা কোস্ট গার্ড তার মোকাবিলা করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের একাধিক উস্কানির উদ্দেশ্য কী? কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে, ফিলিপাইন ক্রমাগত সমস্যা সৃষ্টি করে, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে উত্তেজনা অব্যাহত রাখতে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ করে চীনের জন্য তথাকথিত ‘সমস্যা’ তৈরি করতে চায়।
ফিলিপাইন আঞ্চলিক শান্তি অনুধাবনের কথা বলে, কিন্তু এর প্রকৃত কর্ম হল সংঘর্ষ ও সংঘাত সৃষ্টি করা। এর পেছনে মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহিরাগত শক্তির প্ররোচনা ও সমর্থন। কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে ফিলিপাইন সামরিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাহ্যিক শক্তির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। ওই বহিরাগত দেশগুলো ফিলিপাইনকে সাহায্য, যৌথ সামরিক মহড়া, যৌথ টহল ইত্যাদি দিয়ে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফিলিপাইনের দক্ষিণ চীন সাগর নীতি চীনকে দমন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি আধিপত্যবাদী হাতিয়ার এবং এটি ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে।
ফিলিপাইন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান ইমি মার্কোসও এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ফিলিপাইন সরকার যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং সামুদ্রিক সুরক্ষা সহায়তা গ্রহণ করে, তা ‘বিদেশী হস্তক্ষেপসহ অনেক ‘ট্রোজান ঘোড়াকে’ স্বাগত জানানোর’ সমতুল্য, যা দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, “চীনের সাথে আমাদের সামুদ্রিক বিরোধে, কারণের পরিবর্তে আবেগ প্রাধান্য পেয়েছে, যা আমাদেরকে একটি বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাবে...।” এই লক্ষ্যে, তিনি ফিলিপাইন সরকারকে চীনের সাথে সামুদ্রিক ইস্যুতে বিরোধে না জড়ানোর আহ্বান জানান। এটি অনেক আসিয়ান দেশের নীতিগত অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এপ্রিলের শুরু থেকে, আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা ঘন ঘন চীনে সফর করে। আসিয়ান দেশগুলোর নিবিড় সফর চীন এবং আসিয়ানের মধ্যে ক্রমাগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সত্য প্রতিফলন। সিঙ্গাপুরের ইউসুফ ইসা ইনস্টিটিউট অফ সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের আসিয়ান রিসার্চ সেন্টারের ২ এপ্রিল প্রকাশিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পরিস্থিতি রিপোর্ট দেখায় যে, বেশিরভাগ উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে এবং কৌশলগত অংশীদার হিসেবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আসিয়ান দেশগুলোর অনুকূল ধারণা হ্রাস পেয়েছে কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে, ফিলিপাইনের অযৌক্তিক আচরণের পিছনে, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ‘বন্ধু’রা রয়েছে, যারা এটিকে উস্কে দিয়েছিল। দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে চীনের বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিকার অর্থে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষা করে এবং সব দেশের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ফিলিপাইন হল এশিয়ার ফিলিপাইন এবং আসিয়ানের ফিলিপাইন। এটিকে অবশ্যই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পরিবারে ফিরে আসতে হবে, ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করতে হবে, কৌশলগত স্বাধীনতা মেনে চলতে হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।
(শুয়েই/হাশিম)