মার্চের শেষ দিকে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর শিচিয়াচুয়াং থেকে ইউরোপীয় শহর, সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে একটি মালবাহী ট্রেন। চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেসের একটি নতুন রুটে যাত্রা করা ট্রেনটি বেইজিং-থিয়ানচিন-হেবেই অঞ্চলকে সার্বিয়ার সাথে সংযোগকারী প্রথম সরাসরি রেলপথ।
চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেল পরিবহন পরিষেবা ২০১১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রত্যক্ষ করেছে এবং বছরের পর বছর ধরে ‘বেল্ট এবং রোড’ উদ্যোগ সহযোগিতার জন্য পরিবহন ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেল এশিয়া এবং ইউরোপকে সংযুক্তকারী একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য রেললাইন হিসাবে কাজ করছে। অটোমোবাইল, খুচরা যন্ত্রাংশ, পোশাক, মদ, কফি বিন এবং কাঠসহ ৫০ হাজার ধরনের পণ্য পরিবহন করছে এই রেলরুট।
চায়না স্টেট রেলওয়ে গ্রুপ কোং লিমিটেডের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ, রেলওয়ে পরিষেবাটি ২৫টি ইউরোপীয় দেশের ২১৯টি শহরের সাথে ১২০টি চীনা শহরকে সংযুক্ত করে, যা এটিকে চীন ও ইউরোপের মধ্যে অন্যতম প্রধান পরিবহন রুটে পরিণত করেছে।
এই বছরের প্রথম দুই মাসে পরিষেবাটি ক্রমাগতভাবে প্রসারিত হয়েছে, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে ট্রেনের সংখ্যা ২ হাজার ৯২৮-এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে।
প্রথম দুই মাসে এই রেলরুটে ২০ ফুট সমতুল্য প্রায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ইউনিট পণ্য পরিবহন করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে, চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস পণ্য পরিবহনের আরও নিরাপদ এবং স্থিতিশীল উপায় হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে, কারণ এটি জাহাজ এবং বিমানের মতো অন্যান্য পরিবহনে তুলনায় মহামারিতে কম প্রভাবিত হয়েছিল।
তাছাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচুর পরিমাণে পণ্য এবং আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স পার্সেল পরিবহনের জন্য রেলপথ বেছে নিতে পছন্দ করছে।
ইউরোপের একটি প্রধান লজিস্টিক কোম্পানি মেট্রান্স, ২০১৭ সালে তার প্রথম চীন-ইউরোপ ট্রেন পরিষেবা চালু করেছে৷ এখন এটির ইউরোপ জুড়ে ২০টি কন্টেইনার টার্মিনাল রয়েছে৷
মেট্রান্সের সিল্ক রোড এবং সিআইএস বিভাগের পরিচালক মার্টিন কৌবেক বলেন, ‘আমরা রেলপথে চীন থেকে কার্গো পরিবহনের সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছি, সেই কারণেই আমরা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পোল্যান্ডের মালাসজিউইজে টার্মিনালটি কিনেছিলাম, যেটি সিল্ক রোডের সাথে অনেক বেশি সংযুক্ত এবং আমরা মালাসজিউইচের মাধ্যমে চীনের সাথে সংযোগ বাড়াতে শুরু করি।’
চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেল চরম আবহাওয়া বা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্যও কম ঝুঁকিপূর্ণ। এইভাবে আন্তর্জাতিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নিশ্চিত করে এ রেলরুট।
মার্কো ফোরজিওন, ইনস্টিটিউট অফ এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের মহাপরিচালক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘ইউরোপের রেলপথ একটি কার্যকর বিকল্প এবং আমরা সেই রুটের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখছি।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেল পরিষেবা আরও দক্ষ হয়ে উঠেছে। আজ, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সি’আন থেকে জার্মানির ডুইসবার্গে যেতে একটি ট্রেনের প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। ২০২৩ সালের চেয়ে এখন ২ দিন সময় কম লাগে।।
রেলগেট ইউরোপের প্রধান ব্যবসায়িক উন্নয়ন কর্মকর্তা জুলিজা সিগলাইট ফেব্রুয়ারি মাসে সিএনবিসিকে বলেন, তাদের পণ্য পরিবাহক কোম্পানিটি চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেল ব্যবহার করে, কারণ এ রুটে ভ্রমণের সময় সমুদ্র পথের চেয়ে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ভাল’।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বেইজিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেলের রুটের সাথে, শুল্ক ছাড়পত্র এবং পরিদর্শন ক্রমবর্ধমান সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে, প্রবেশ বন্দরে ব্যবসার পরিবেশ ক্রমাগত উন্নত হয়েছে, এবং আন্তঃসীমান্ত পরিবহন সম্পর্কিত নিয়ম ও প্রবিধানগুলো আরও মানসম্মত হয়েছে।’
উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দুটি প্রধান রেলওয়ে বন্দর, আলতাও পাস এবং হরকোস বন্দর, পদ্ধতিগুলোকে অপ্টিমাইজ করেছে এবং রুটে পরিবহন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বন্দরের ক্ষমতা প্রসারিত করেছে।
আমেরিকান ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে উচ্চ প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের (বিআরআই) একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস রেল।
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।