সংবাদ পর্যালোচনা: নানশা দ্বীপপুঞ্জ চীনের ভূখণ্ড
2024-04-06 19:03:03

এপ্রিল ৬: চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরে একাধিক নথি থেকে স্পষ্ট যে, নানশা দ্বীপপুঞ্জ চীনের ভূখণ্ড। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছেন, ফিলিপিন্স বারবার চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, কিন্তু চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের ভূখণ্ডে তার অবৈধ দখল ও লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করেনি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন সম্প্রতি বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফিলিপিন্স বারবার চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, কিন্তু চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের ভূখণ্ডে তার অবৈধ দখল ও লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করেনি। এটিই আসল প্রচারণা ‘ফাঁদ’। মুখপাত্র বলেন, রেন আই রিফসহ নানশা দ্বীপপুঞ্জ চীনের ভূখণ্ড। একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে ফিলিপিন্সের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে এবং নানশা দ্বীপপুঞ্জ তার মধ্যে নেই। ফিলিপিন্স বারবার চীনের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অভিযোগ করেছে এবং উস্কানি দিয়েছে, যা দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সামিল এবং সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, দীর্ঘকাল ধরে, চীন এবং আসিয়ান দেশগুলো সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে বিরোধগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য জোর দিয়ে আসছে এবং চীন ও আসিয়ান দেশগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একসাথে কাজ করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিপিন্স দক্ষিণ চীন সাগরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য বহিরাগত শক্তির সহায়তায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

চীনা মুখপাত্র আরও বলেন,  চীন আবারও ফিলিপিন্সকে তাগিদ দেয় যে, তারা সত্যকে সম্মান করবে, চীন ও ফিলিপিন্সের মধ্যে প্রাসঙ্গিক সমঝোতা মেনে চলবে, দক্ষিণ চীন সাগরে পক্ষগুলোর আচরণ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রের বিধানগুলো মেনে চলবে, চীন ও আসিয়ানের ঐকমত্য মেনে চলবে। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের সঠিক পথে ফিরে আসবে।

তা ছাড়া, ফিলিপিন্সের উচিত দক্ষিণ চীন সাগরে উসকানিমূলক আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করা। তিনি বলেন, চীন ও ফিলিপিন্সের মধ্যে বর্তমান ক্রমবর্ধমান সমুদ্র-সম্পর্কিত বিরোধের মূল কারণ হল দেশটি বহিরাগত শক্তির সমর্থনের উপর নির্ভর করে, তার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে এবং বারবার উস্কানি দেয়।

এদিকে,  সম্প্রতি সিজিটিএনে একান্ত সাক্ষাত্কারে, আন্তর্জাতিক আইনে সুপরিচিত পণ্ডিত এবং পিকিং ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের সম্মানসূচক ভিজিটিং প্রফেসর অ্যান্টনি কার্টি দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধের পিছনে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীর তথ্য প্রকাশ করেছেন। প্রফেসর অ্যান্টনি কার্টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের জাতীয় আর্কাইভগুলোতে বহু বছর গবেষণা করেছেন। সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ভূখণ্ড বিরোধে সবসময় নিরপেক্ষ থাকার দাবিদার যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে শান্তি দেখতে চায় না। ফিলিপিন্স ও অন্যান্য দেশগুলোকে ঘন ঘন চীনের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে উত্সাহিত করেছে দেশটি। নানশা দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক আর্কাইভগুলো স্পষ্টভাবে সত্য বললেও এখন তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে সত্য না জানার ভান করছে। বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি কার্টি বলেছেন যে, দক্ষিণ চীন সাগর দ্বীপপুঞ্জ প্রাচীনকাল থেকেই চীনের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর উপর দেশটির সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব রয়েছে, যার ঐতিহাসিক এবং আইনি ভিত্তি আছে।

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি একাডেমিক সেমিনারে, অ্যান্থনি কার্টি তার বই ‘দক্ষিণ চীন সাগরের ইতিহাস এবং সার্বভৌমত্ব’ লেখার প্রক্রিয়াটি তুলে ধরেন। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, কার্টি ১৯ শতকের শেষ থেকে দক্ষিণ চীন সাগর দ্বীপপুঞ্জের মালিকানার বিষয়ে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভ এবং মাঠ-জরিপ পর্যালোচনা করেন, এ দ্বীপপুঞ্জের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ও মালিকানা শনাক্ত করেন, যা দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব স্পষ্ট করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, দক্ষিণ চীন সাগর দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব চীনের অন্তর্গত, যা এ দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্বের অধ্যয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রমাণ সরবরাহ করে। (তৌহিদ)