প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর কোনও দেশের ‘পিছন দিকের উঠোন’ হওয়া উচিত নয়
2024-04-05 18:22:46

এপ্রিল ৫: জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড সম্প্রতি বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করবে না, তবে কেবলমাত্র এ অঞ্চলের দেশগুলোকে চীনের ‘আরোপিত’ চ্যালেঞ্জের জবাব দেওয়ার জন্য একটি বাছাই প্রদান করবে।

মার্কিন প্রতিনিধি যে মন্তব্য করেছেন তা কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং সঠিক এবং ভুলের বিষয়েও বিভ্রান্ত করে। চীনকে বদনাম করার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভন্ডামিও আরো একবার উন্মোচিত হলো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘চীন হুমকি তত্ত্ব’ এবং ‘ঋণ ফাঁদ তত্ত্বে’র মতো বিভিন্ন মিথ্যা বিবৃতি ব্যবহার করেছে, যাতে চীন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় এবং পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা নষ্ট হয়। কিন্তু সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন সবাই জানে যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর স্বার্থ ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করে না। আমেরিকান রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিতে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুধুই দাবার ঘুঁটি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সফর, দূতাবাস খোলা, শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন, বা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ সহায়তা যাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আচরণ তার আধিপত্য ধরে রাখার জন্য। তাই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতায় জড়িত অন্য দেশগুলোকে ঘৃণার চোখে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে উপেক্ষা করেছে। স্থানীয়রা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মুখ দেখায়, হাত নাড়ায় এবং তারপর দীর্ঘ সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়, বলে বর্ণনা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোকে প্রশ্রয় দিয়েছে৷ তবে, প্রতিশ্রুতি পূরণে তার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুতর ‘বিশ্বাসের ঘাটতি’ রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঐতিহাসিক সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে, এই অঞ্চলে পরিচালিত পারমাণবিক পরীক্ষাগুলো স্থানীয় এলাকায় গুরুতর আঘাত হেনেছে। মার্কিন সরকারের একটি রিপোর্ট দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪০ এবং ১৯৫০ সালের সময় মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে কয়েক ডজন পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল, যা এখনও কিছু জায়গায় পারমাণবিক বিকিরণের বিপদ এবং হুমকি হয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের দেশগুলোর সাথে ‘ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে, একচেটিয়া সামরিক অনুপ্রবেশের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা বিনিময় করেছে৷ এর পিছনে রাজনৈতিক বিবেচনাগুলোও সন্দেহপূর্ণ।

চীনের সঙ্গে সহযোগিতা ভালো হোক বা না হোক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোর জনগণই সবচেয়ে ভালো জানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে পারমাণবিক বিস্ফোরণের গর্ত বানিয়ে ছেড়েছে। এর বিপরীতে, চীনের অংশগ্রহণে স্টেডিয়াম, টেলিযোগাযোগ টাওয়ার, রাস্তা, সেতু, ডক নির্মিত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর তাদের জন্য কী উপযুক্ত সে সম্পর্কে স্বাধীন বোঝাপড়া রয়েছে। অন্য দেশের চাপের কারণে পক্ষ বেছে নিতে চায় না তারা। ফিজির প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে চীনের সহায়তা আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

চীনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ও অঞ্চলে কোনো দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা নেই বা ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায়ও জড়াতে চায় না। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ও সহযোগিতার উন্নয়নে, চীন সর্বদা জোর দিয়ে এসেছে যে, ছোট এবং বড় সকল দেশ সমান, বেইজিং কখনোই কোনো রাজনৈতিক শর্ত সংযুক্ত করে না এবং কখনোই তার ইচ্ছা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয় না। পরিবর্তে, চীন ব্যবহারিকভাবে দ্বীপ দেশগুলোর উন্নয়নকে সমর্থন করে, কাজ করে এবং একটি ঘনিষ্ঠ চীন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলতে ইচ্ছুক।

(শুয়েই/হাশিম/জিনিয়া)