ই-কমার্সে নিযুক্ত নতুন প্রজন্মের তরুণ ওয়াং সিয়ে হোং
2024-04-05 10:00:04


বসন্ত ঋতুতে, ছিনলিং পর্বতমালার গভীর পশ্চিমে সকালের শিশির এখনও স্থির হয়ে রয়েছে। কানসু প্রদেশের খাং জেলায় কৃষক ওয়াং সিয়ে হোং অন্য কৃষকদের সঙ্গে রসুনের ক্ষেতে চারা বপন করতে যান। ওয়াং সিয়ে হোং ১৯৯০-এর দশকে জন্ম নিয়েছেন। তিনি ই-কমার্সে নিযুক্ত নতুন প্রজন্মের কৃষক। লোহার হুক মালচের মধ্যে দিয়ে কাটার সাথে সাথে একের পর এক সবুজ রসুনের চারা নিচ থেকে বের হয়। তাঁর সামনে উর্বর ক্ষেতগুলোর দিকে তাকিয়ে ওয়াং সিয়ে হোং খামারের কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করেন।

ডিজিটাল যুগে নতুন ই-কমার্স কৃষকদের ‘বসন্তে রোপন’ পদ্ধতিও নীরবে পরিবর্তিত হচ্ছে। মোবাইল ফোনগুলো নতুন খামার সরঞ্জামে পরিণত হয়েছে। মোবাইলের জনপ্রিয়তা  নতুন কৃষি পুঁজিতে পরিণত হয়েছে এবং ভিডিও শ্যুটিং এবং লাইভ সম্প্রচার নতুন খামার কার্যকলাপে পরিণত হয়েছে। ওয়াং সিয়ে হোং সাংবাদিকদের বলেন, এই বসন্তে তিনি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে ‘বসন্ত চাষাবাদ’ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন এবং একটি সুন্দর ‘বাঁকবদলে’র জন্য লড়াই করবেন।

২০১৭ সালে গ্রামে ফিরে ব্যবসা শুরু থেকে ওয়াং সিয়ে হোং এক দিকে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা মধু, গোলমরিচ, জলপাই এবং অন্যান্য স্থানীয় বৈশিষ্ট্যময় পণ্য বিক্রি করার জন্য ই-কমার্সে নিযুক্ত হয়েছেন। অন্য দিকে তিনি জমি হস্তান্তরের মাধ্যমে রোপণ শিল্পের বিকাশ করেন। বিগত কয়েক বছরে ই-কমার্স ব্যবসা ক্রমবর্ধমান হয়েছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে তার বিক্রি বছরে  ৩০ লাখ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে এবং  ৪০০ জনেরও বেশি কৃষককে তিনি আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন।  তবে অ্যাস্ট্রাগালাস এবং রবার্বসহ নানা ঐতিহ্যবাহী ঔষধি উপকরণ চাষাবাদে একের পর এক ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন ওয়াং সিয়ে হোং।

২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ওয়াং সিয়ে হোং শান তোং প্রদেশের চিন সিয়াং কাউন্টি থেকে ১৩.৩ হেক্টর জমির রসুন নিয়েছেন।  তিনি বিস্তৃত  রসুন ক্ষেতের দিকে ইঙ্গিত করে দৃঢ়ভাবে বলেন, “নতুন রসুন এখন প্রতি কিলোগ্রাম ৬ ইউয়ান বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিলে আমাদের জমি থেকে ১৫ লাখ ইউয়ান নিট মুনাফা করা কোন বিষয় নয়।”

 পাহাড় থেকে নেমে গ্রামে ওয়াং সিয়ে হোং’র অনলাইন ‘বসন্ত লাঙ্গল’ কেন্দ্রে প্রবেশ করলে দেখা যায় যে, সেটি উৎপাদন কর্মশালা, লাইভ সম্প্রচার কেন্দ্র এবং প্রদর্শনী হল দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে কৃষকদের উপকার করার জন্য স্থানীয় সরকারের নীতির সমর্থনে ওয়াং সিয়ে হোং এই প্রমিত ‘অনলাইন  ভাইরাল পণ্য’ প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট তৈরি করেন। এখানে তাঁরা কেনা কৃষিপণ্য প্যাকেজ করেন এবং দক্ষতার সাথে অনলাইন পণ্য উৎপাদন করেন। সেসব পণ্যগুলো নিজের পাশাপাশি অন্যান্য ইন্টারনেট সেলিব্রিটিদের মাধ্যমে বিক্রি করা যেতে পারে।



ওয়াং সিয়ে হোং বলেন, “আমরা কৃষিক্ষেত এবং কারখানার উপর ভিত্তি করে পরিশ্রম করবো। আমাদের নিজ গ্রামের কৃষি পণ্যগুলোকে পাহাড়ের বাইরে বিক্রি করতে এবং সারা দেশে  ছড়িয়ে দিতে ‘সংক্ষিপ্ত ভিডিও যোগ লাইভ সম্প্রচার’ ব্যবহার করবো।”

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে ব্যাপকভাবে গ্রামীণ এলাকায় জাতীয় ই-কমার্সের দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সে সময় থেকে কানসু প্রদেশ জেলা-থানায় তিন-স্তরের একটি ই-কমার্স পাবলিক সার্ভিস সিস্টেম নির্মাণ করে আসছে, যার মাধ্যমে কৃষি পণ্যের অনলাইন বিক্রয়ের পরিমাণ এবং দক্ষতা প্রসারিত করার পাশাপাশি যারা কৃষি ভালোবাসেন এবং ইন্টারনেট বোঝেন, ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত নতুন কৃষকদের লালন করা হয়। বিগ ডেটা থেকে জানা যায় যে, কান সু প্রদেশে ২০২৩ সালে কৃষিপণ্যের অনলাইন বিক্রয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৭৯০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.১৬ শতাংশ বেশি। 

নতুন যুগের বাতাসে নতুন ই-কমার্স চাষীরা বাঁশের কাণ্ডের মতো উঠে আসছে। তাঁরা গ্রামাঞ্চল ও কৃষিক্ষেতে ছুটে বেড়ান এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে লাইভ সম্প্রচার কক্ষে ‘বসন্তের চাষাবাদ’ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং ‘বাম্পর ফসলের’ অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁরা গ্রামবাসীদের আয় বাড়াতে এবং ধনী হতে পরিচালনার পাশাপাশি গ্রামীণ পুনরুজ্জীনের জন্য জোরালো প্রাণশক্তি যুগিয়েছেন।

(রুবি/হাশিম)