ছোট কাঁচির কারিগর থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
2024-04-04 10:00:03

বেইজিংয়ের শিল্প বাণিজ্য প্রযুক্তি কলেজে পোশাক ডিজাইন ও উৎপাদন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হু পিং শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরি করতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। “এ বিষয়ের নাম ডাবল খোলা লাইন। এখানে দুটি লাইন সেলাই করা দরকার। তারপর কাঁচি দিয়ে কাটতে হবে। অতিরিক্ত সুতো রাখা যাবে না।”

কথাগুলো বলছিলেন হু পিং। তার বয়স ২৫ বছর। তিনি ৪৪তম বিশ্ব কারিগরি প্রতিরোধমূলক পোশাক প্রযুক্তি ধারার চ্যাম্পিয়ন, বিশ্ব কারিগরি প্রতিযোগিতার বেইজিং পোশাক প্রযুক্তি ধারার চীনা প্রশিক্ষণ কোচ এবং বেইজিংয়ের তৃতীয় শীর্ষ কারিগর।

বিশ্ব কারিগরি প্রতিযোগিতাকে কারিগরি মহলের অলিম্পিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পোশাক ডিজাইন ও উৎপাাদন একটি জটিল কারিগরি কাজ।

তরুণ হু পিং কীভাবে শক্তিশালী প্রতিযোগীদের মধ্যে সফল হয়েছেন?

হু পিং বলেন, “ছোট বেলায় আমি হস্তশিল্প খুব পছন্দ করতাম। পেপার কাটিং, ছবি আঁকাসহ ওই ধরনের কাজ করতে খুব ভালো লাগতো আমার।”

২০১৩ সালে হু পিং বেইজিংয়ের শিল্প ও বাণিজ্য প্রকৌশলী কলেজে পোশাক ডিজাইন ও উৎপাদন বিষয়ে ভর্তি হন।

যখন তিনি তার সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থী ছেন বি হুয়ার ৪৩তম বিশ্ব কারিগরি প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক লাভের খবর শোনেন, তখন তিনি খুব উৎসাহিত বোধ করেন। তাই তিনি কলেজে বাছাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তারপর তাকে প্রতিযোগিতার জন্য স্থাপিত ক্লাসে ভর্তি করা হয়।

সে দু’বছর ছিল অত্যন্ত কঠিন সময়। তবে সে সময় তার সক্ষমতা অনেক বাড়ে। হু পিং দু’বছর ধরে পোশাক ডিজাইন ও উৎপাদনের দক্ষতা উন্নত করেন। কোচের উৎসাহ ও নির্দেশনায় তিনি অনেক দক্ষ হয়ে ওঠেন।

সুযোগ সব সময় থাকে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ৪৪তম বিশ্ব কারিগরি প্রতিযোগিতার চীনা দলের বাছাই প্রতিযোগিতায় হু পিং অন্যদের চেয়ে ভালো করেন। চীনের পক্ষ থেকে তিনি ২০১৭ সালের অক্টোবরে আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ৪৪তম বিশ্ব কারিগরি প্রতিযোগিতার পোশাক কারিগর ধারায় অংশ নেন।

হু পিং স্মরণ করে বলেন, “পোশাক ডিজাইন ও তৈরি করতে ১৪ ঘন্টা দেওয়া হয়। এটা খুব কম সময়। মাঝখানে কোনও ভুল হলে সময় মতো আর তা শেষ করতে পারতাম না।”

উনত্রিশটি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের পর হু পিং ৫টি প্রতিযোগিতার বিষয় শেষ করেন এবং মোট ৭৪৯ নম্বর পেয়ে এ ধারার চ্যাম্পিনশিপ জেতেন।

বিশ্ব পোশাক কারিগরি ধারার চীনা বিশেষজ্ঞ দলের নেতা লি নিং মনে করেন, এ প্রতিযোগিতা তরুণদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে। হু পিংও নিজের পছন্দের ক্যারিয়ার বেছে নিতে পেরেছেন।”

বেইজিংয়ের শিল্প ও বাণিজ্য কারিগরি কলেজের মহাপরিচালক উ সিয়াও মেং বলেন, “হু পিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই উৎসাহিত হয়। চীনে ৩৬০টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতেই চ্যাম্পিয়ন থাকতে পারে।”

হু পিং বলেন, পোশাকের কারিগরি বিষয়কে পছন্দ করার কারণে নিজের মহলের মধ্যে এ ব্যাপারে নিজেকে সবচেয়ে ভালোভাবে গড়ে তুলেছি এবং এখনও আরও নিখুঁত অবস্থানে পৌঁছতে চাই। এটি খুব আনন্দের ব্যাপার বলে আমি মনে করি।”

স্বপ্ন দেখা তরুণ থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং প্রযুক্তিগতভাবে নবীণ থেকে দক্ষ কারিগরে পরিণত হয়েছেন হু পিং। কারিগরদের বলিষ্ঠ ও পরিশ্রমী হবার এবং সবসময় সেরা হয়ে ওঠার চেতনা হু পিংয়ের মতো তরুণরা ধরে রেখেছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে।