সিনচিয়াংয়ের উইগুরদের বিয়ের অনুষ্ঠান (২)
2024-04-03 13:41:06

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।

 

বর-কনের চারপাশে ভিড় জমে এবং তাঁরা লাল ও রঙিন সজ্জায় আচ্ছাদিত বিয়ের গাড়িতে উঠে বাড়ি থেকে বের হয়। নববধূকে স্বাগত জানাতে থাকা যুবকটি দফ বাজিয়ে, টাইলস বাজিয়ে এবং আনন্দের গান গাইতে গাইতে সামনে দিয়ে হেঁটে যায়, পুরো স্বাগত দলটি আনন্দের পরিবেশে ডুবে যায়। বিয়ের মিছিল যে রাস্তা দিয়ে যায়, সেখানে যে-কোনো সময় লোকেরা মিছিল ঠেকিয়ে দিতে পারে। তখন বর তার ডান হাত তার বুকে রাখে, ঘন ঘন সালাম দেয় এবং সবার মাঝে বিয়ের মিষ্টি বিতরণ করে।

কনে যখন তার স্বামীর বাড়ির দরজায় আসে, তখন বরের পরিবার কনের জন্য একটি লাল ‘কাপড়ের টুকরো’ বিছিয়ে দেয়। বর ও কনে পাশ দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মহিলা অতিথিরা ছুটে আসেন কাপড়ের টুকরোটিকে সৌভাগ্যের জিনিস হিসাবে নিজের কাছে রাখতে। সবাই টানাটানি করেন। একে অপরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দৃশ্যটি খুব প্রাণবন্ত।

‘উন্মোচন’ তথা কনের মাথার লাল কাপড়ের টুকরোটি উন্মোচন করার অনুষ্ঠানটি বিয়ের সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও ক্লাইম্যাক্স মুহূর্ত।  নববধূ তার মাথা ঢেকে কাং বা বিছানার কিনারায় বসে। ব্রাইডাল চেম্বারের লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দোতারা বাজানো হয়, আনন্দময় সঙ্গীত বাজানো হয়। যুবক-যুবতীরা একত্রে হাসিঠাট্টা করে। অতিথিরা যখন ক্লাইম্যাক্সে হাসতে হাসতে মজা করেন, ঠিক তখনই ভিড় থেকে একটি পরীর মতো মেয়ে এগিয়ে এসে কনের মাথার লাল কাপড়টি তুলে ধরে। নববধূ লাজুক মুখে চুপ করে থাকে। সেই মুহূর্তে, নতুন বাড়িটি আনন্দে পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং যুবক-যুবতীরা তাদের অভিনন্দন জানাতে নাচ-গান করতে থাকে। সকলের সাথে বর ও কনেও নাচেন এবং ‘রাজকুমার’ ও ‘রাজকুমারী’ হয়ে ওঠেন। গেয়ে ও নেচে অতিথিরা গভীর রাতে আনন্দে বাড়ি ফেরেন।

বিয়ের পরের দিন ভোরবেলা, কনের পরিবার বর ও কনের জন্য নাস্তা (‘ইসক্লিক’) নিয়ে আসে। প্রাতঃরাশের পরে, বর ও কনে, যথাক্রমে নিজেদের পিতা-মাতা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করতে যায়। বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে উভয় পক্ষের বাড়িতেই ‘কিলাক’ অনুষ্ঠিত হয়।

উইগুর বিবাহের ভোজগুলোতে সাধারণত ওয়াইন পরিবেশন করা হয় না এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। ভোজের খাবার হয় সাধারণ ও সাশ্রয়ী। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের আপ্যায়ন করার জন্য হোস্টকে কেবল একটি বড় পাত্রে ভাত এবং একটি বড় পাত্রে মাটন রান্না করতে হয়। প্রত্যেকে একটি বড় কার্পেটে বা একটি বড় টেবিলের চারপাশে বৃত্তাকারে বসে। প্রথমে তারা চা পান করেন এবং বিয়ের ক্যান্ডি, শুকনো ফল এবং স্ন্যাকস খাযন। তারপর তাদের সামনে নানের বড় স্তূপ, পিলাফের বড় প্লেট এবং মাটন পরিবেশন করা হয়। তারা তাদের হাত দিয়ে খায়। অতিথিরা পুরো খাবার শেষ করার পরে টেবিল ছেড়ে যেতে পারে। সবাই একসাথে খায় ও মজা করে। খুবই প্রাণবন্ত একটি পরিবেশ। শহরাঞ্চলে আজকাল উইঘুর বিয়ের অনুষ্ঠান হয় হোটেলে মিলনায়তনে। আধুনিকায়নের প্রভাব তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও পড়ছে।

 

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ঊর্মি/আলিম)