চীনের বসন্ত অর্থনীতি
2024-04-03 16:24:36

বসন্ত এসে গেছে এবং সারা চীনের সংস্কৃতি  ও পর্যটন খাতে দেখা দিয়েছে নতুন প্রবাহ। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ, ছবি  তোলে পোস্ট করা, সাইকেল চলানো ও চা খাওয়া, বাগানে ফল ও শাকসবজি তোলাসহ নানা বিষয় বসন্ত কাটানোর রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এ সময়ের সৌন্দর্যও এক ধরনের শিল্প, যা ভোগ-বাজারে প্রাণশক্তি যোগায়। বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বসন্তের অর্থনীতি সারা বছরের অর্থনীতিতে পরিণত করা যাবে এবং তা সারা বছর ভোগ-বাজারে শক্তি যোগাবে।

 

বসন্তকাল, ফুল ফোটার সময়। চীনের বিভিন্ন জায়গায় ফুটছে নানা ধরনের ফুল। চীনের পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন চীনে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের সেরা সময়। মার্চ মাসে ফুল-পর্যটন আগের মাসের তুলনায় ৩ গুণ বেড়েছে, যা বসন্তকালে পর্যটন বাজারের জন্য আকর্ষণীয় একটি বিষয়।

ফুল-পর্যটন জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণে ফুলের জন্য বিখ্যাত স্থানগুলোতে হোটেলের বুকিংও বাড়ছে। মার্চ মাসের সব সাপ্তাহিক ছুটি অর্থাৎ শনি ও রোববারের জন্য সব হোটেল বুকিং হয়ে যায় এবং এপ্রিল মাসের শুরুতে ছিংমিং উৎসবের সময়ে সব রুমের ৮০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। এ তথ্য জানিয়েছেন উ হান শহরের একটি পারিপারিক হোটোল সেবা প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। উ হান শহর চেরি ফুল উপভোগের একটি বিখ্যাত জায়গা এবং প্রতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে চেরি ফুল দেখতে সেখানে আসেন বিভিন্ন জায়গার মানুষ এবং এতে উ হানও জনপ্রিয় একটি পর্যটন শহরে পরিণত হয়েছে।

ফুল-পর্যটনের জনপ্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনের নানা জায়গা নতুন সাংস্কৃতিক সেবা প্রদান করে। যেমন ফুল  উপভোগ ও মেলা, ফুল উপভোগ ও অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইত্যাদি। যেমন বেইজিং শহরে চালু হয়েছে ‘ফুলের ৯টি বিষয়’ শিরোনামে একটি প্রকল্প এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যিক স্থানে বিভিন্ন ফুল-পর্যটনের রুট চালু হয়। কুয়াং সি প্রদেশের লিউ চৌ শহরে বাউহিনিয়া ফুল দেখার বাস চালু হয়েছে। স্থানীয়রা বিনামূল্যে এ বাস দিয়ে বাউহিনিয়া ফুল দেখতে যায়।

ফুল-পর্যটনের মাধ্যমে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য শিল্প উন্নয়ন করা যায়। খাবার, হোটেল, পরিবহনসহ নানা ক্ষেত্রে ভোগ বাড়ছে। পাশাপাশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণ করা যাবে।

 আপনারা কি জানেন, ফুল খাওয়াও যায়। ইউননান প্রদেশের খুন মিং শহরের একটি কাচা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০টির বেশি ফুল, যার সবগুলো খাওয়া যায়। স্টলের মালিক খাওয়ার পদ্ধতিকে ভোক্তার কাছে তুলে ধরছেন। এ বাজারে ৬০০টির বেশি স্টল আছে এবং সাপ্তাহিক ছুটির সময়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার মানুষ এখানে আসে। বাজার ছাড়া, অনলাইন কেনাকাটা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ফুলগুলো সারা চীনে বিক্রি হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের বসন্তে ফুল ও শাকসবজির বিক্রির পরিমাণ গত বছরের  তুলনায় ৩.৫ গুণ বেশি।

ফুল ও শাকসবজি ছাড়া, বসন্ত কল চা পাতা ফলনের সময়। কুয়াং সি, সি ছুয়ান, হুবেই ও ফুচিয়ানসহ নানা চা উৎপাদন এলাকায় ইতোমধ্যেই প্রথম দফা অর্ডার পাওয়া গেছে। সিছুয়ান প্রদেশের ইয়া আনের ‘মেং তিং’ চা সুপরিচিত। এবারের বসন্তকালে অনেক ক্রেতা ও পর্যটক তাজা চা খেতে আসছেন ইয়া আন শহরে। ইয়া আনের চা বাগানে প্রতিদিন ১০ কোটি কেজি নতুন চা পাতা পাওয়া যায় এবং প্রতি কেজির দাম ৪০ ইউয়ানের কাছাকাছি। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে চা বিক্রির আয় হয়েছে ১৭০ কোটি ইউয়ান।

ভোক্তারা এখন শুধু তাজা চা খেতে পছন্দ করেন তা নয়, তারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও করতে চান। চা খাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানা নতুন একটি ভ্রমণের পদ্ধতি।

 

বেইজিংয়ের মূল রাস্তা, ছাং আন সড়কে একজন পুরুষ সাইকেল চালাচ্ছে। এ মাসে তিনি নতুন একটি সাইকেল কিনেছেন এবং বসন্তকাল সাইক্লিংয়ের জন্য উপযোগী সময়।

 আবহাওয়া দিন দিন উষ্ণ হয়ে উঠছে এবং মানুষজন বাইরে এসে নানা খেলাধুলায় মাতেন। সাইক্লিং, ফ্রিসবি, হাইকিংসহ নানা

আউটডোর স্পোর্টস জনপ্রিয় হয়ে উঠে। চীনের একটি সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী হাইকিং ও সাইক্লিংসহ ক্রীড়া সম্পর্কিত পোস্ট দেখার সংখ্যা অনেক বেড়েছে, মানে মানুষ এ বিষয় নিয়ে আরও আগ্রহী।

অনেক কোম্পানিও এ সুযোগ ধরে নিজের পণ্য প্রচারের জন্য নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।  এক্সডো নামে একটি আউটডোর স্পোর্টস কোম্পানির বাজার বিষয়ক কর্মী জানিয়েছে, মার্চ মাসের শুরু দিক থেকে তারা ধারাবাহিক সাইক্লিং অনুষ্ঠান আয়োজন করেন এবং তারপর তারা অন্য ধরনের ক্রীড়া অনুষ্ঠান অয়োজন করবেন।  এ বছরের আউটডোর স্পোর্টস বাজার নিয়ে তারা আশাবাদি।

বিখ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী সরবরাহকারী ডেকাথলনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, গেল এক মাসে চীনা বাজারে তাদের ক্রীড়া সামগ্রীর বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে হাইকিং বিষয়ক পণ্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে, বিক্রি পরিমানের মধ্যে হাইকিং পণ্যের অনুপাত ৫০ শতাংশের বেশি। তাদের আনুমান অনুযায়ী ছিংমিং উৎসব ছুটির সময়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকের ক্রীড়ার শীর্ষ সময় আসবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বসন্তকালের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চীনে নানা ধরনের ভোগ্য বাজার গড়ে তোলা হয়। ভ্রমণ, খাবার, আউটডোর খেলাধুলাসহ নানা ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন উদ্ভাবন। ঋতুর বৈশিষ্ট্য ও ভোক্তার চাহিদার সঙ্গে যুক্ত করেই সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়।(শিশির/হাসিম/লিলি)