‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় সাপোর্ট সেন্টার
অটিজম আক্রান্ত তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়তা এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করছে চীনের শানতোং প্রদেশের একটি সাপোর্ট সেন্টার। কেন্দ্রটি অটিজমে আক্রান্ত তরুণদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও প্রদান করছে।
শানতোংয়ের চিবো শহরে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিচালিত একটি বিশেষ গাড়ি ধোয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন এ প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের সেবা দেন বিশেষ একদল তরুণ, যারা সকলেই অটিজমে আক্রান্ত। তারা বেশ দক্ষতা ও আনন্দের সঙ্গেই এই কাজটি করেন।
অটিজমবান্ধব যে কয়েকটি চাকরি রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো কার ওয়াশ বা গাড়ি ধোয়ার কাজ। সাপোর্ট সেন্টারটি অটিজম রোগীদের দক্ষতা খুঁজে বের করে এবং তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
কেন্দ্রের প্রশিক্ষক লু কুইওয়েন জানান, গাড়ি ধোয়া শেখার জন্য কেন্দ্রটি একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করেছে।
‘আমরা গাড়িগুলোকে ১৮টি অংশে বিভক্ত করেছি এবং সিমুলেশন প্রশিক্ষণের জন্য একটি বোর্ড রেখেছি। কারণ তাদের জানাতে হবে একটি গাড়িতে কতগুলো অংশ আছে এবং সেগুলো ধোয়ার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত। এরপরে, আমরা পুরো গাড়িতে যাই। তারপরে আমরা আবার বোর্ডে ফিরে আসি। আমরা তাদের এইভাবে প্রশিক্ষণ দিই’।
বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন কাজে বেশ দক্ষ হয়ে উঠছেন। অটিজমে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা গাড়ি ধোয়ার কাজের মাধ্যমে ভালো আয়ও করছেন। এক পর্যায়ে কেউ কেউ নিজের গাড়ি ওয়াশের ব্যবসা শুরু করেছেন। তেমনি একজন ওয়াং ইউথিআন।
‘ব্যবসাটা সত্যিই ভালো। সে প্রতিদিন গড়ে ১০টি গাড়ি ধোয়ার কাজ করে এবং মাসে প্রায় ৫ হাজার ইউয়ান আয় করছে। আমি মনে করি, সে সবচেয়ে বড় যে উপকারটা পাচ্ছে, সেটা টাকা নয়, একটা সুখকর অনুভূতি।’
অটিজমে আক্রান্ত এসব তরুণদের আরও বেশি দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় সরকার অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় ব্যক্তিখাতের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। এসব তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে তারা সকলে মিলে একটি সুপারমার্কেট খুলেছেন এবং পার্কগুলোতে মোবাইল ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছেন। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে শিল্পকলা, সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
এ সহায়তা কেন্দ্রের সহযোগিতায় অটিজমে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যা খুব দ্রুতই মুক্তি পাবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ জন মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণকে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ এবং চাকরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চীনে ১ কোটিরও বেশি মানুষ অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার
সম্পাদক: শিহাবুর রহমান
২. আবেগতাড়িত তরুণরাই বাজারের মোড় ঘোরাচ্ছে চীনে
চীনের তরুণরাই এখন দেশটির সবচেয়ে গতিশীল ভোক্তা গোষ্ঠী। তাদের অংশগ্রহণে ভোক্তা বাজারে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। কারণ খরচের বেলায় তারা বেশ দিল-দরিয়া। পণ্যের সঙ্গে নিজের আবেগ-অনুভূতির একটুখানি মিল পেলেই হলো—তখন কিছু কিনতে গিয়ে খুব একটা হিসেব করে না তারা। তাদের এ খরচের প্রবণতা ধরেই চীনের ভোক্তাবাজারের রূপরেখা বদলে যাচ্ছে দিন দিন।
তরুণদের ওপর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৯.৩ শতাংশ তরুণ তাদের কেনাকাটার সঙ্গে পণ্য ও সেবার সঙ্গে নিজেদের অনুভূতির একটা সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছে। আর তাই তরুণদের কেনাকাটার সঙ্গে কী করে অনুভূতিকে সম্পৃক্ত করা যায়, সেটা বের করতেই ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে চিন্তা-ভাবনা।
প্রাথমিকভাবে তারুণ্যনির্ভর বাজারে অন্যতম পণ্যগুলো হচ্ছে বিনোদন, যে তালিকায় আছে গেমস, অ্যানিমেশন, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন শো এবং গল্প-উপন্যাস। ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশটিতে সৃজনশীল খেলনার বাজার ১১০ বিলিয়ন (১৫.২৩ বিলিয়ন ডলার) ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও স্ন্যাকস, পারফিউম, ফুল, পোষা প্রাণীর সামগ্রী, ইলেকট্রনিক পণ্য, নানা ধরনের কোর্স এবং নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার মতো ভোগ্যপণ্য কেনার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পণ্যের সঙ্গে তরুণরা আবেগের যোগসূত্র খুঁজে পেলে সেটার জন্য লাইনে দাঁড়াতেও তাদের আপত্তি নেই। আবার বাড়তি খরচ বাঁচাতে অনলাইনেও খরচ বাড়িয়েছে তারা। তরুণদের অনলাইনে কেনাকাটার এ প্রবণতার কারণে বদলে যাচ্ছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভোক্তা বাজার।
তরুণদের এ বাজারটাকে বেশি বেশি বাগে আনতে চাইলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পণ্যের সঙ্গে আবেগের সেতুবন্ধন ঘটাতে হতে হবে আরও কৌশলী। তবেই তীব্র প্রতিযোগিতার এই সময়ে তরুণরা হয়ে উঠতে পারে অর্থনীতির মোড় ঘোরানো শক্তি।
প্রতিবেদক : রফিক বিপুল
সম্পাদক: ফয়সল আব্দুল্লাহ
৩. শেনচেনে পর্যটন সেবা খাতে চাকরি বেড়েছে
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের একটি প্রধান শহর শেনচেন। এই বসন্তে দ্রুত চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সেখানকার পর্যটন শিল্প। এতে সেখানে পর্যটন খাতে বাড়ছে কাজের চাহিদা।
চীনে এরইমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে শতাধিক বসন্তকালীন চাকরি মেলা। এর মধ্যে শেনচেন অন্যতম একটি শহর যেখানে অনেকগুলো মনোরম স্পট আছে এবং এটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের প্রতিবেশী।
এখানে ১২০টি কোম্পানি ২ হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থীকে যুৎসই চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছে। উইন্ডো অফ দ্য ওয়ার্ল্ডের একজন কর্মী ব্যবস্থাপক ওয়েই ওয়েনছং দর্শনীয় স্থানটিতে জনবল বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন,
‘সামনের সারি বা পেছনের, কাজ যাই হোক না কেন, আমাদের স্পটটিতে গত দুই বছরের তুলনায় কর্মীদের চাহিদা বেড়েছে। তাই, আমরা এখন চাকরির আরও ইন্টারভিউ নিচ্ছি।’
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে বসন্ত উৎসবের ছুটিতে, পর্যটকরা ৮০ লাখের বেশিবার শেনচেনে ভ্রমণ করেছেন। সংখ্যাটি ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেশি এবং ২০১৯ সালের প্রাক-মহামারি সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, হোটেল ও রেস্তোরাঁ সার্ভিসে সামনের সারির চাকরির একটি বড় চাহিদা রয়েছে,যা আগের বছরের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আব্দুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী