এআই-এর বৈশ্বিক উন্নয়ন—সহযোগিতা নাকি বিচ্ছিন্নতা?
2024-04-02 15:48:05

আজকের বিশ্বায়ন এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত বিকাশের যুগে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সামাজিক অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রচারের মূল শক্তি হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ও ব্যাপক প্রয়োগ বেশ কিছু শাসন ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক সমাজকে এআই প্রযুক্তির সুস্থ বিকাশ ও ন্যায্য ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত নিয়ম ও মান প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যাতে ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী যেমন অ্যামাজন, মাইক্রসফট এবং গুগোলের প্ল্যাটফর্মে এআই অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারী বিদেশি গ্রাহকদের তথ্য তদন্ত করার জন্য প্রকাশ করা যায়। এই প্রস্তাবটি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। প্রস্তাবের অধীনে, মার্কিন সরকার বিদেশি গ্রাহকদের নাম এবং আইপি ঠিকানার মতো বিশদ বিবরণ দিতে সক্ষম হবে এবং বিদেশি কোম্পানির ডেটা সেন্টার এবং সার্ভারগুলিতে অ্যাক্সেস সীমিত করতে পারবে, যা এআই প্রশিক্ষণ ও হোস্টিংয়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

এই পন্থা গত ২১ মে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত এআই সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবের চেতনার পরিপন্থী। জাতিসংঘের খসড়া প্রস্তাব  মানবাধিকারের সম্মান, গোপনীয়তা রক্ষা, স্বচ্ছতা এবং ব্যাখ্যাযোগ্যতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি সহ এআই উন্নয়ন শাসনে অনুসরণ করা উচিত এমন নৈতিক নীতির উপর জোর দেয়। এসময়, প্রস্তাবটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিনিময়ের পক্ষে সমর্থন করে, দেশগুলিকে সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগাভাগি করা, নীতি ও মান প্রণয়ন সমন্বয় করা এবং এআই প্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী শাসন যৌথভাবে প্রচার করায় উত্সাহিত করে।

মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী এআই-এর ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ দুর্বল করতে পারে। এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র বিদেশি গ্রাহকদের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করবে না, বরং আন্তর্জাতিক অবিশ্বাস এবং বিভাজন বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা টিমওয়ার্কের নীতির বিপরীত চেতনা। একই সঙ্গে তা জাতিসংঘের খসড়া প্রস্তাবে সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার বিপরীত চেতনা হতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন বলেছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও পরিচালনা গোটা মানবজাতির ভাগ্যের সাথে জড়িত। এজন্য "বিচ্ছন্নতা" এবং "প্রযুক্তির ওপরে বেড়া এবং দেয়াল দিয়ে লুকিয়ে রাখার" পদ্ধতি অবলম্বন করার পরিবর্তে বিশ্বব্যাপী যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উদ্দেশ্যমূলক আইনকে সম্মান করা, বাজার অর্থনীতি ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিকে আন্তরিকভাবে সম্মান করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খাতে আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ভাল পরিস্থিতি তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণে এআই খাতের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিময়ের মাধ্যমে উন্নত এআই প্রযুক্তি ও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মার্কিন পন্থা বাস্তবায়িত হলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি আরও বিধিনিষেধ ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। যার ফলে বৈশ্বিক সম্পদ এবং বাজারের সম্পূর্ণ সুবিধা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সংক্ষেপে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব এআই সম্পর্কিত জাতিসংঘের খসড়া প্রস্তাবের চেতনার বিপরীত এবং এআই ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা ও উন্নয়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এআই শাসনকাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে কাজ করা। যাতে সব দেশ এআই প্রযুক্তির গবেষণা বিকাশ ও প্রয়োগে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং এআই-এর সুযোগ-সুবিধা যৌথভাবে ভাগ করে নিতে পারে। শুধুমাত্র এভাবেই আমরা এআই প্রযুক্তির সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে পারি এবং গোটা মানবজাতির মঙ্গল ও অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারি।

(স্বর্ণা/তৌহিদ/ছাই)