এপ্রিল ২: ‘এটিই একটি ইতিবাচক সংকেত’--সাম্প্রতিক কিছু দিনে চীনের তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক সূচক একই সাথে পুনরুদ্ধার হওয়ার খবর আন্তর্জাতিক জনমতের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস বা এএফপি-সহ বিদেশি মিডিয়ার মতে, এসব অপ্রত্যাশিত তথ্য চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি দ্রুততর হওয়ার সর্বশেষ লক্ষণ। যা কেবল ‘উৎসাহজনকই’ নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন প্রেরণা যোগ করবে বলে এসব মিডিয়া মনে করে।
তিনটি প্রধান সূচক হলো ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার সূচক বা পিএমআই (PMI), অ-উৎপাদন ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সূচক এবং সার্বিক পিএমআই। এর মধ্যে সার্বিক পিএমআই প্রধানত সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে; পিএমআই যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের বিকাশ ও পরিবর্তনের প্রবণতা প্রতিফলিত করে; অ-উৎপাদন ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সূচক প্রধানত পরিষেবা শিল্পের বিকাশ প্রতিফলিত করে। পিএমআই একটি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচিত হয় এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিরীক্ষণ, পূর্বাভাস এবং পূর্বসতর্কতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চীনের সর্বশেষ সরকারি তথ্যে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে পিএমআই, অ-উৎপাদন ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সূচক এবং সার্বিক পিএমআই সূচক ছিল যথাক্রমে ৫০.৮, ৫৩.০ এবং ৫২.৭ শতাংশ। যা আগের মাসের তুলনায় যথাক্রমে ১.৭, ১.৬ এবং ১.৮ শতাংশ বেশি। তাদের মধ্যে মার্চ মাসে উত্পাদন কার্যক্রম অর্ধ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রসারিত হয়েছিল এবং এক বছরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গসহ বিদেশি সংবাদমাধ্যম বলেছে যে, এতে দেখা যায় যে, চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের ভবিষ্যত আশাবাদী হয়ে উঠছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হচ্ছে।
সদ্যসমাপ্ত বোআও এশীয় ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউকিও হাতোয়ামা এবং চীনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইসমাইল হাক্কি মুসাসহ আন্তর্জাতিক শীর্ষনেতারা যথাক্রমে সিএমজি সম্পাদকীয়কে জানিয়েছেন যে, চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে উন্নয়নের সুযোগ আসবে। তিনটি প্রধান সূচক একযোগে প্রত্যাবর্তনে চীনের অর্থনীতি বহির্বিশ্বের আশাবাদী প্রত্যাশাও প্রমাণ করে। এতে দেখা যায় যে, পশ্চিমা মিডিয়ায় তথাকথিত ‘চীনের অর্থনীতি সীমায় পৌঁছানোর তত্ত্ব’ ব্যর্থ হয়েছে।
কেন চীনের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এত চিত্তাকর্ষক? বিশ্লেষকরা বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রত্যাবর্তন এবং বাহ্যিক চাহিদার উদ্দীপনা ছাড়াও, অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রসারিত করতে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক নীতিগুলো স্থিতিশীল করতে চীন সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা থেকে উপকৃত হয়েছে এটি। সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, বসন্ত উৎসবের ছুটির পর কাজ এবং উৎপাদন পুনরায় শুরু হওয়ার পর চীনের অর্থনীতির ক্রমাগত উন্নয়ন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মার্চ মাসে উৎপাদন সূচক, নতুন অর্ডার সূচক এবং আমদানি ও রপ্তানি সূচকের ভাল পারফরম্যান্স চীনের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নত হওয়া এবং অর্থনীতির সুস্থ উন্নয়নের পথে ফিরে যাওয়ার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্লেষকরা বলেন, এটি পূর্বাভাস দেয় যে, প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে আশাব্যাঞ্জক, যা ৫ শতাংশ বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে উন্নতির দিকে এগানো নিঃসন্দেহে বিশ্বের জন্য ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একজন সিনিয়র গবেষক ক্রিস্টোফার থোমাস বলেন, চীন নতুন মানের উত্পাদন শক্তির বিকাশ জোরদার করছে, তার সৃষ্ট ধারাবাহিক সৃজনশীল সাফল্য বিশ্বকে উপকৃত করতে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন চালিকাশক্তি প্রদান করতে সক্ষম বলে মনে করেন তিনি।
সম্প্রতি সিটি ব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, চীনের অর্থনীতি সুষ্ঠু ও টেকসই। পাকিস্তানের জাতীয় টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মির জগেজাই সিএমজি সম্পাদকীয়কে বলেন, ‘চীনের অর্থনীতির বিপুল উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে, যা শুধুমাত্র চীনের জন্যই নয়, বিশ্বের জন্যও কল্যাণকর।’
লিলি/তৌহিদ