‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৬৩
2024-04-02 19:40:28

‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৬৩

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

 ১। হাইনানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দর্শনার্থীদের

২। রমজান বিশেষ- এক নজরে উইগুরদের ইয়ারখান্ড মসজিদ

৩। নিভৃত পল্লীতে পর্যটন

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।     

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৬৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

১। হাইনানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দর্শনার্থীদের

চীনের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপ প্রদেশ হাইনান। এখানকার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দর্শনার্থীদের । তাইতো চীনের  বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের সঙ্গে এখানে ভিড় করছেন বিদেশিরাও।

২০২৩ সালে হাইনানে বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন বিগত বছরের তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশ বেশি। কর্তৃপক্ষ বলছে ২০২৫ সালে হাইনানকে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রদেশটিতে সম্প্রতি ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে।

হাইনান প্রাদেশিক কমিটি সিপিসির সেক্রেটারি ফেং ফেই বলেন, ‘হাইনানের স্থানীয় বাসিন্দা মাত্র এক কোটি। অথচ গত বছর ঘুরতে এসেছিল প্রায় ৯ কোটি দর্শনার্থী। বেশি পর্যটক দেখা যায় বসন্ত উৎসবের ছুটির সময়। এত পর্যটকের কারণেই বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব এসেছে হাইনান থেকে।’


ফেং আরও বলেন, হাইনান চীনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে। এখানে সমুদ্র সৈকত, রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া,  এবং রেইনফরেস্টের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন তারা। পাশাপাশি সিনেমা, সাইকেল চালানো আছে নানা বিনোদন ও রোমাঞ্চকর কাজ।

ফেং ফেই বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, হাইনান দ্বীপ কার্নিভাল, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, রাউন্ড হাইনান রেগাট্টা, এবং হাইনান সফরকে ঘিরে বড় বড় কিছু ইভেন্ট আয়োজন করেছি। যার কারণে হাইনানের পর্যটনশিল্পে আরও পরিবর্তন এসেছে। আগে পালন করা হতো গোল্ডেন সপ্তাহ। এখন হয় গোল্ডেন মাস ও গোল্ডেন সিজন।  

এ ছাড়া আকর্ষণের কেন্দ্রে আছে ওয়েনচাংয়ের ছোট কাউন্টিও। যেখানে বাস করে মাত্র ২৭ হাজার মানুষ। ছোট্ট এই কাউন্টিতে রয়েছে চীনের মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। তাই বিজ্ঞান যারা ভালবাসেন সেসব দর্শনার্থীদের কাছে অঞ্চলটি রীতিমতো পর্যটনের তীর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু গত দুই বছরে ছোট শহরটিতে এসেছে ১৫ লাখেরও বেশি পর্যটক।

ফেং ফেই বলেন, ‘ওয়েনচাং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্রটি ব্যবহার করে, আমরা পর্যটনের সঙ্গে মহাকাশকেও একীভূত করছি। এমন একটি গন্তব্য তৈরি করছি যা দর্শনীয় স্থান, ট্যুর, বিজ্ঞান, বিনোদন ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাকে এক ছাদের তলায় এনেছে। এ ছাড়া পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আধুনিক সড়ক অবকাঠামো থেকে শুরু করে স্মার্ট গাড়িসহ বিভিন্ন পরিষেবাও চালু করেছি।’

প্রতিবেদন- নাজমুল হক রাইয়্যান

সম্পাদনা- আফরিন মিম

২। রমজান বিশেষ- এক নজরে উইগুরদের ইয়ারখান্ড মসজিদ

চীনের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ হলো সিনচিয়াংয়ের ইয়ারখান্ড মসজিদ। উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের ইয়ারখান্ড শহরে অবস্থিত এই মসজিদটির আরেক নাম আলতাইন মসজিদ। গোল্ডেন মস্কও বলা হয় একে। মধ্যযুগের এই মসজিদটি সিলিংয়ের অপূর্ব পেইন্টিংয়ের জন্য বিখ্যাত। মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে রয়েছে কবি আমাননিসা খানের(১৫২৬-৬০ সাল) সমাধি। তিনি ছিলেন স্থানীয় একজন খান বা স্থানীয় সামন্ত প্রভুর স্ত্রী।

বলা হয়ে থাকে মসজিদটি দশম শতকে নির্মিত। সেসময় তুর্কিস্তান শাসন করত কারখানিদ বংশ। মধ্য এশিয়ার সমরখন্দসহ অনেক এলাকা ছিল কারখানিদ বংশের শাসনাধীন। তবে বর্তমান মসজিদ ভবনটি সম্ভবত দশম শতকে নয়, তার আরও পরে নির্মিত।

মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে প্রধান তোরণ, প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, প্রাসাদোপম মসজিদ ভবন।মসজিদের ভিতরে রয়েছে মূল নামাজকক্ষ। এটি মধ্যএশীয় রীতিতে নির্মিত।

মসজিদের প্রবেশ তোরণ মধ্যএশীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। হলুদ ইটের তৈরি প্রবেশতোরণটি দুপাশে কলাম ও মিনারযুক্ত। প্রধান নামাজকক্ষটিও সিনচিয়াং এবং পশ্চিম তুর্কিস্তানের ঐতিহ্যবাহী রীতিতে তৈরি। ভবনটি সমতল ছাদের। বাইরের পোর্টিকো দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যসমৃদ্ধ। বাইরের নামাজকক্ষ ও ভিতরের নামাজকক্ষের মধ্যে রয়েছে সংযোগকারী কোরিডর। এধরনের স্থাপত্যরীতি থিয়েনশান পর্বতের দক্ষিণে প্রচলিত। গ্রীষ্মকালে বাইরের নামাজকক্ষে এবং শীতকালে ভিতরের নামাজকক্ষে জামাত পড়া হয়।

পোর্টিকোর দুই পাশে রয়েছে হলুদ ইটের তৈরি দুটি মিনার। বাইরের পোর্টিকোর কাঠের কারুকার্য, ভিতরের স্তম্ভগুলোতে কারুকার্য এবং ভিতরের সিলিংয়ের কাজ চোখ জুড়ায়। সিলিংয়ে লতাপাতা ও জ্যামেতিক নকশা আঁকা। স্তম্ভের নিচের অংশে লাল, নীল, সবুজ ও হলুদ রঙে ফিতার মতো গোল নকশা রয়েছে। মসজিদ ভবনের ভিতরে আরবী হস্তলিপিতে কোরআনের আয়াত উৎকীর্ণ রয়েছে। মেহরাবটি লাল রঙে ফ্রেম করা এবং উপরে কোরআনের আয়াত লেখা।

কমপ্লেক্সের ভিতরে মসজিদ ভবনের পাশে রয়েছে শাহী কবরস্থান। শাহী কবরস্থানে এই এলাকার স্থানীয় শাসক খানবংশের সম্ভ্রান্ত সদস্যদের কবর রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যযুগের কবি আমাননিসার কবরটি কারুকার্য করা এবং দৃষ্টিনন্দন। সেইসঙ্গে সমৃদ্ধ

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

৩। নিভৃত পল্লীতে পর্যটন

চীনে গ্রামীণ পর্যটন ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং গ্রামের অধিবাসীদের জন্য নতুন নতুন আয়ের পথ খুলে দিচ্ছে। চীনের প্রধান অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপ ডট কম সম্প্রতি উত্তর পশ্চিম সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলে দুটি রিসোর্ট খুলেছে।

 

সম্প্রতি খোলা এই দুটি পল্লী রিসোর্টে এরমধ্যেই পর্যটকরা ভিড় করতে শুরু করেছেন।

একটি রিসোর্ট রয়েছে আলতাইয়ের পার্বত্য জেলা বুরছিনের হেমু গ্রামে। পর্যটকরা এখানে যাযাবরদের লাইফস্টাইল উপভোগের পাশাপাশি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। সেই সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় এথনিক গ্রুপের সংস্কৃতি।

৯টি গেস্টরুম থেকেই দেখা যায় লেক ও পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য। আরেকটি রিসোর্ট রয়েছে কানাস লেকের তীরে। অনলাইন এজেন্সিটি জানিয়েছে আগামি পাঁচ বছরে ১০০ টুরিজম গ্রাম স্থাপন করে সেখানে ১০ হাজার রুরাল ট্যুরিজম কর্মীকে চাকরি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

২০১৯ সালে রুরাল টুরিজ্যম খাতে ৩.৩ বিলিয়ন ভ্রমণকারী ভ্রমণ করেছে এবং ৮৫০ বিলিয়ন ই্উয়ান আয় হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি ও গ্রামীণ মন্ত্রণালয়।

 

চীনের বিভিন্ন প্রদেশে গ্রামীণ পর্যটনের বেশ কয়েকটি সাইট রয়েছে। ইউননান, হাইনান, আনহুই, হ্যনান, হুনানসহ কয়েকটি প্রদেশে এমন পর্যটন স্থানীয় অর্থনীতিকে বিকশিত করেছে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির পুনর্জাগরণকে উৎসাহিত করেছে। স্থানীয় শিল্প সামগ্রীর উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

রুরাল টুরিজমের ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের আয় বেড়েছে। স্থানীয় সুযোগ সুবিধাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রিপ ডট কমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং চিয়ানছাং বলেন, ‘রুরাল টুরিজম পর্যটন শিল্পে নতুন সুযোগের দ্বার খুলে দিয়েছে।’

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী