সম্প্রতি চীন উন্নয়ন ফোরাম ২০২৪-এর বার্ষিক সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলেনে আন্তর্জাতিক আর্থিক খাতের ব্যক্তিরা চীনের উন্নয়ন সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করেন। তারা মনে করেন, চীনের অর্থনীতি সীমাহীন সম্ভাবনায় ভরপুর, পাশাপশি বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি।
২০২৩ সাল ছিল মহামারীর পর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পুনরুদ্ধারের বছর। ওই বছরে তার আগের বছরের তুলনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
এ সম্পর্কে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এআইআইবি’র প্রেসিডেন্ট চিন লিছুন বলেন, চীনের বিশাল অর্থনৈতিক ভিত্তি রয়েছে। তাঁর মতে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সৃষ্ট ধন আগের চেয়ে ‘অনেক বেশি’ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতির উচ্চ মূল্যায়ন করেন। চীনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘চীন হবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেগবান করা গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।’
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি’র প্রেসিডেন্ট আসাকাওয়া মাসাসুকু মনে করেন, চীনের প্রবৃদ্ধি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে। তিনি অনুমান করেন, ২০২৪ সালে চীনের অর্থনীতির একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি হবে।
বহির্বিশ্বও চীনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে। কারণ চীনের অর্থনীতির প্রবল প্রাণশক্তি আছে। এবারের ফোরামের বিদেশি পক্ষের চেয়ারম্যান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চুব লিমিটেড অ্যান্ড চুব গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইভান গ্রিনবার্গ বলেন, চীনের প্রচুর উচ্চমানের শ্রমিক, সুসম্পূর্ণ অবকাঠামো, শক্তিশালী উত্পাদন দক্ষতা এবং বৈজ্ঞানিক শক্তি আছে। প্রাণবন্ত বেসরকারি খাত বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উদ্ভাবনে আস্থা বয়ে আনবে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেফরি স্যাক্স মনে করেন, চমৎকার নির্মাণশিল্প এবং উন্নত প্রযুক্তির বদৌলতে চীনে অধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে, যেমন পরিবেশ সংরক্ষণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তিতে চীন বিশ্বের অগ্রণী স্থানে আছে। ফাইভ-জি, বৈদ্যুতিক যানবাহন, ফটোভোলটাইক ও বায়ুশক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন অগ্রণী। এসবই আগামী কয়েক বছরে চীনের অর্থনৈতিক শক্তির উত্স হবে।
“সবই হতে পারে — চীনের অসাধারণ যাত্রা এটিই প্রমাণ করেছে।” কথাগুলো বলছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ। ১৯৭৮ সালে চীনের ৭৭ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু ঠিক সে বছরই চীন কঠিন সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করে এবং মৌলিকভাবে উন্নয়ন পথ পরিবর্তন করে।
চীন বিশ্বব্যাংকের প্রাপক দেশ থেকে বর্তমানে বৃহত্তম দাতা দেশগুলোর অন্যতম হয়েছে। চীনের অভিজ্ঞতাও অনেক দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। অজয় বঙ্গের মতে, উন্নয়ন পথটি দীর্ঘমেয়াদী। প্রত্যেক দেশ পরবর্তী দেশের জন্য এগিয়ে যাবার পথ আলোকিত করে। চীন এই পথের অগ্রণী।
চীনের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল এবং প্রাণশক্তি ও বলিষ্ঠতা যথেষ্ট। ঠিক এ কারণে, আরও বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান চীনের ব্যাপারে ‘আস্থাশীল’। বিশ্বের জন্য চীন আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। ইভান গ্রিনবার্গ যেমনটি বলছিলেন, একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সমর্থন দেওয়া এবং বিনিয়োগ করা বিশ্বের ‘ইতিবাচক শক্তি’ চীন। (প্রেমা/রহমান)