দেহঘড়ি পর্ব-৬৪
2024-03-31 14:51:17

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং ভেষজের গুণ নিয়ে আলোচনা ‘হারবাল হিলিং’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের ভালো চিকিৎসা টিসিএম

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস একটি সাধারণ রোগ যাতে আক্রান্ত হয় বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। হেই ফিভার নামেও পরিচিত এ রোগ। এ রোগ হলে হাঁচি, নাক বন্ধ, চোখে চুলকানি ও সর্দির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। হেই ফিভার সাধারণত পরাগ, ধুলোর মাইট এবং পোষা প্রাণীর খুশকির মতো অ্যালার্জেন থেকে সৃষ্টি হয়। প্রচলিত ওষুধ যেমন অ্যান্টিহিস্টামিনস এবং কর্টিকোস্টেরয়েড এ রোগের উপসর্গ উপশম করতে পারে। তবে অনেকে হেই ফিভারের সামগ্রিক চিকিৎসায় ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএম ব্যবহার করে।

টিসিএম হেই ফিভারকে দেখে শরীরের মূল শক্তি বা ‘ছি’ ও অঙ্গ সিস্টেমের অন্তর্নিহিত ভারসাম্যহীনতার বহিঃপ্রকাশরূপে। টিসিএমে মনে করা হয়, হেই ফিভারে ফুসফুস ও প্লীহার সেইসব মেরিডিয়ানের মধ্যে অমিলের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেগুলো শ্বাসযন্ত্র ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। জানিয়ে দিচ্ছি অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের টিসিএম চিকিৎসা:

আকুপাংচার: আকুপাংচার টিসিএম চিকিৎসার অন্যতম স্তম্ভ। ‘ছি’ প্রবাহকে উদ্দীপিত করতে এবং ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে শরীরের নির্দিষ্ট বিন্দুতে আকুপাংচার প্রয়োগ করা হয়। হেই ফিভারের ক্ষেত্রে আকুপাংচারবিদরা ফুসফুস ও প্লীহার মেরিডিয়ান বিন্দুগুলোতে আকুপাংচার প্রয়োগ করেন। গবেষণায় দেখা যায়, আকুপাংচার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রদাহ হ্রাস এবং সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে হেই ফিভারের উপসর্গগুলো কমায়।

ভেষজ ওষুধ: ভেষজ ওষুধ টিসিএম চিকিৎসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। প্রত্যেক রোগীর উপসর্গ ও শারীরিক কাঠামো বিবেচনায় নিয়ে টিসিএম চিকিৎসকরা রোগীর জন্য ভেষজ ফর্মুলেশন তৈরি করেন। হেই ফিভারের চিকিৎসায় সাধারণত যেসব ভেষজ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো ম্যাগনোলিয়া ফুল (জিন ই হুয়া), অ্যাঞ্জেলিকা রুট (পাই চি) এবং জ্যানথিয়াম ফল (চ্যাং আর জি)’র মতো ভেষজ। এগুলো বন্ধ নাক খুলে দেয়, প্রদাহ কমায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই ভেষজগুলো চা, গুঁড়ো, ক্যাপসুলসহ বিভিন্ন আকারে দিতে পারেন টিসিএম চিকিৎসকরা।

ডায়েট: টিসিএমে মনে করা হয়, স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং শরীরের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খাদ্য। হেই ফিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এমন সব খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেগুলো এ রোগের উপসর্গ বাড়িয়ে তোলে। যেমন দুগ্ধজাত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার এবং ঠান্ডা বা কাঁচা খাবার। এর পরিবর্তে, তাদেরকে উষ্ণ ও রান্না করা খাবার খেতে উৎসাহিত করা হয়। যেমন স্যুপ, স্টু ও আদা চা। এসব খাবার প্লীহা ও ফুসফুসের মেরিডিয়ানকে সমর্থন যোগায়। এছাড়া হলুদ, রসুন ও গ্রিন টির মতো প্রদাহবিরোধী খাবারও সুপারিশ করা হয় হেই ফিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য।

জীবনধারা: টিসিএম চিকিৎসা থেকে ভালো ফল পেতে জীবনধারার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ধ্যান, থাই চি বা ছিকংয়ের মতো মানসিক চাপ কমানোর কৌশলগুলো অনুশীলন করলে শরীরে ‘ছি’র ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, অ্যালার্জেন এড়ানো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ হেই ফিভারের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

#চিকিৎসার_খোঁজ

চক্ষুরোগের চিকিৎসায় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান শানসি চক্ষু হাসপাতাল

শানসি চক্ষু হাসপাতাল চীনের শীর্ষ চক্ষুসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। উত্তরাঞ্চলীয় শানসি প্রদেশের রাজধানী থাইইউয়ানে অবস্থিত এ হাসপাতাল। সব ধরনের চক্ষুরোগের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি শানসি চক্ষু হাসপাতাল অন্ধত্ব প্রতিরোধে কাজ করে এবং শিক্ষাদান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করে। চক্ষুরোগের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এ হাসপাতালে।

চল্লিশ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত ৩৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৫ শতাধিক কর্মী কাজ করেন। এদের মধ্যে চিকিৎসক ১৫০ জনেরও বেশি। চিকিৎসকদের মধ্যে ৬০ জনই জ্যেষ্ঠ পেশাজীবী হিসাবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রীয় পরিষদ থেকে ভাতা প্রাপ্ত ৮জন বিশেষজ্ঞও রয়েছেন এখানে। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে বছরে সাড়ে ৪ লাখ রোগীকে সেবা দেওয়া হয় এবং এখানে বছরে অস্ত্রোপচার করা হয় ৩০ হাজারের মতো।

হাসপাতালটি শানসি চক্ষুবিদ্যা ইনস্টিটিউট, শানসি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিদ্যা হাসপাতাল, শানসির রেড ক্রস চক্ষুবিদ্যা হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি রেসকিউ নেটওয়ার্ক হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল অরবিস প্লেন আই হাসপাতালের গ্রাউন্ড ট্রেনিং সেন্টার, জাতীয় পর্যাযের গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিকাল বিশেষজ্ঞ প্রকল্প ইউনিট এবং শানসি চক্ষুবিদ্যা মূল্যায়ন হাসপাতাল হিসেবেও কাজ করে।

শানসি চক্ষু হাসপাতাল বিশেষভাবে দক্ষ ফান্ডি রোগ, স্ট্র্যাবিসমাস, পেডিয়াট্রিক অপথালমোলজি ও গ্লুকোমা ব্যবস্থাপনায়। এ হাসপাতালের ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ বিভাগের বেশ খ্যাতি রয়েছে। 

শানসি চক্ষু হাসপাতাল শানসি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি-প্রদত্ত চক্ষুবিদ্যা শিক্ষা এবং ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হাসপতাল। এখানে রয়েছেন ২৬ জন অধ্যাপক, ২২ জন সহযোগী অধ্যাপক, একজন ডক্টরাল সুপারভাইজার এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য ২০ জন তত্ত্বাবধায়ক।

চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য শানসি চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চক্ষুবিদ্যা শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্র থংরেন হাসপাতালের সঙ্গে। দেশের বাইরে এ হাসপাতালের শিক্ষার্থী-বিনিময় সহযোগিতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস আই অ্যান্ড ইয়ার হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজ, মিশিগান মেডিক্যাল কলেজের কেলগ আই সেন্টার, জনস হপকিন্স হাসপাতালের উইলমার আই ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য বিখ্যাত আন্তর্জাতিক চক্ষুবিদ্যা হাসপাতালের সঙ্গে।

#হারবাল_হিলিং

ত্বকের যত্নে জুড়ি নেই চন্দনের

চন্দনে আছে হাজারো ঔষুধি গুণ। আয়ুর্বেদসহ ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় চন্দন ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। সৌন্দর্য চর্চায় চন্দনের জুড়ি নেই। বিভিন্ন রকম প্রসাধনী ও সুগন্ধীতে চন্দনের গুঁড়ো বা নির্যাস ব্যবহৃত হয়। এতে থাকে অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কার্যকর চন্দন। চলুন জেনে নেই চন্দনের কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে:

বলিরেখা দূর করে: মুখের ত্বকে চন্দনের গুঁড়ো লাগালে মুখে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদান বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। সেকারণে এন্টি-এইজিং এজেন্ট হিসাবে এর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার।

রোদে পোড়া দাগ দূর করে: রোদে পোড়া ভাব দূর করতে চন্দন খুব উপকারী। শসার রস, দই ও গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে চন্দনের গুঁড়ো লাগালে রোদে পোড়া ভাব কমবে এবং রোদে পোড়ার কারণে সৃষ্টি ত্বকের জ্বালাও কমবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চন্দনের জুড়ি নেই। হলুদ বাটা ও চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে ত্বকে নিয়মিত লাগালে ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।

ডার্ক সার্কেল দূর করে: চোখের চারপাশে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল থাকলে, অল্প পরিমাণ চন্দনের গুঁড়োর সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগান। প্রতি রাতে এমনিভাবে একবার করে এটা প্রয়োগ করলে এক সপ্তাহের মধ্যে চোখের চারপাশের দাগ দূর হবে।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভালো কাজ করে চন্দন। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এক চা চামচ সাদা চন্দন গুঁড়ো বা পেস্ট আধা কাপ দুধের মধ্যে ভালভাবে মিশিয়ে খালিপেটে পান করুন। কিছু সময়ের মধ্যেই রক্তচাপ কমে আসবে।

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।