বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি সমতল ভূমিতে, প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার সৌর প্যানেল সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যা সূর্যের আলোকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করছে।
৫০ মেগাওয়াট ফোটোভোলটাইক পাওয়ার প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সবুজ বিদ্যুৎ শক্তির উন্নয়নের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী মোঃ নাসির উদ্দিন চীনের গণমাধ্যমকে বলেন, “এখন সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের অনেক ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়স্বজন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করছে, এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।”
এশীয় দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা এবং অভিন্ন উন্নয়নের একটি অত্যুজ্জ্বল উদাহরণ চীনা বিনিয়োগে নির্মিত এই সবুজ প্রকল্পটি। চীনের জয়-জয় সহযোগিতার নীতি এবং উচ্চমানের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকেও প্রতিফলিত করে বাংলাদেশের এই পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্পটি।
চীনের উচ্চমানের উন্নয়নের পাশাপাশি তা এশিয়া এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্বের জন্য কী বার্তা দেয়, তাই মূলত উঠে এসেছে হাইনানে সদ্যসমাপ্ত চারদিনব্যাপী বোয়াও এশিয়া ফোরামে।
চীন উচ্চমানের উন্নয়নের সাথে সবখাতে চীনা আধুনিকীকরণকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রেরণা জোগাবে এবং এশিয়ার সব দেশের, বিশেষ করে প্রতিবেশীদের উন্নয়নের জন্য আরও সুযোগ প্রদান করবে।
চীনের শীর্ষ আইনপ্রণেতা চাও লেচি বৃহস্পতিবার বার্ষিক এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তৃতায় তুলে ধরেন, চীনের উচ্চমানের উন্নয়ন কীভাবে বৈশ্বিক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা এবং চাপের মধ্যেও চীন গত বছর ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হয়ে রয়েছে। এটি একটি স্পষ্ট সংকেত দেয় যে, দেশটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির সাথে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চীনের সিনিয়র আবাসিক প্রতিনিধি স্টিভেন অ্যালান বার্নেট ফোরামে চীনের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনায় বলেন, “গত বছর, চীন একাই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অবদান রেখেছে। যদি আমরা এর পরোক্ষ প্রভাবের দিকে তাকাই, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের প্রবৃদ্ধির প্রতি এক শতাংশ পয়েন্টের বৃদ্ধি, অন্যান্য অর্থনীতিতে জিডিপির স্তর গড়ে প্রায় ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে।”
আইএমএফের এই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, চীনের শক্তিশালী টেকসই প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো ।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব এবং বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার চেয়ারম্যান বান কি-মুন বলেছেন, “অনেক উল্লেখযোগ্য লক্ষণ বলছে যে, চীন তার অর্থনীতিকে উচ্চগতির বৃদ্ধি থেকে উচ্চমানের প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এবং এটি আরও উদ্ভাবন-চালিত, ভারসাম্যপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সবুজ এবং উন্মুক্ত হয়ে উঠেছে। চীনের নতুন মানের উত্পাদন শক্তি এ রূপান্তরে সহায়তা করছে।”
উচ্চ-প্রযুক্তি, উচ্চ দক্ষতা এবং উচ্চমানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন মানের উত্পাদন শক্তিতে অগ্রগতি অর্জন এই বছরের চীনের অগ্রাধিকারমূলক এজেন্ডা। পর্যবেক্ষকরা এর প্রশংসা করে বলেছেন, এই কৌশলটিকে কেবল চীনা অর্থনীতিতেই একটি শক্তিশালী প্রণোদনা দেয় না, বরং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আরও সুযোগ করে দেয়।
চীন নতুন শক্তি, উচ্চ-গতির রেল, নতুন উপকরণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, যা সংশ্লিষ্ট শিল্প ও পণ্যগুলোকে জোরালো বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছে।
চীন সবুজ প্রযুক্তিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে, সবুজ প্রযুক্তিতে চীনের অগ্রগতি জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে।
নেপালি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক গবেষণা বিভাগের প্রধান প্রকাশ কুমার শ্রেষ্ঠা বলেছেন, চীন তুলনামূলকভাবে কম দামে এগুলো তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রমবর্ধমান অবলম্বন হয়েছে দেশটি।
ম্যাকাও সিটি ইউনিভার্সিটির প্রো-রেক্টর আইপি কুয়াই পেং বলেন, “চীনা অর্থনীতি নিজের পাশাপাশি সমগ্র এশীয় অঞ্চলকে আরও দক্ষ, বুদ্ধিমান, সবুজ এবং উন্মুক্ততার দিকে চালিত করবে, বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কাঠামোগত সমন্বয় এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এগিয়ে নেবে এবং টেকসই এবং উচ্চ-মানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।”
মাহমুদ হাশিম
সিএমজি বাংলা, বেইজিং।